বাসস
  ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০:৫৯

সংস্কার ধরে রাখলে মানুষের ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে : ড. আসিফ নজরুল

বুধবার সিলেটে লিগ্যাল এইডবিষয়ক পাইলট প্রকল্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। ছবি : পিআইডি

সিলেট, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রলালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, বাংলাদেশে প্রধান পাঁচটি সমস্যার একটি হলো ন্যায়বিচার সংকট। আমরা আইন ও প্রাতিষ্ঠানিক অনেক সংস্কার করেছি, যা অতীতে কেউ করেনি। পরবর্তী সরকার এই সংস্কারগুলো ধরে রাখলে মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়ার অবারিত সুযোগ সৃষ্টি হবে, ন্যায়বিচারের সংকট থাকবে না।   

আজ বুধবার বিকেলে সিলেটে লিগ্যাল এইড বিষয়ক পাইলট প্রকল্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

আইন সহায়তা প্রদান (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ (২০২৫ সনের ৩৫ নং অধ্যাদেশ) এর ধারা ১ এর উপ-ধারা (২) এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে পাইলট প্রকল্প হিসেবে সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, রংপুর, দিনাজপুর, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, কুমিল¬া, নোয়াখালী, রাঙামাটি জেলায় এই কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। 

উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, লিগ্যাল এইড-এর মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তিতে প্রচলিত আইনে নিষ্পত্তির তুলনায় দশ ভাগের এক ভাগ সময় লাগে। প্রচলিত আদালতে যে বিরোধ নিষ্পত্তিতে পাঁচ বছর সময় লাগে লিগ্যাল এইড আদালতে সেটি নিষ্পত্তিতে তিন থেকে ছয় মাস সময় লাগে। একইভাবে প্রচলিত আইনে মামলার পর বিচারিক আদালতে রায়ের পর বহু মানুষ উচ্চ আদালতে যায়। কিন্তু লিগ্যাল এইডে বিরোধ নিষ্পত্তিতে ৯০ ভাগ মানুষ সন্তুষ্ট থাকে, তারা আদালতে মামলা করতে যায় না।

রাষ্ট্র আগে এই বিষয়ে সেভাবে মনোযোগ না দেওয়ার অভিযোগ করে তিনি বলেন, এটা এমন এক বিচারিক প্রক্রিয়া যেখানে সময় অনেক কম লাগে, খরচ কম হয় এবং ভোগান্তিও অনেকাংশে কমে যায়। এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রাষ্ট্র আগে সেভাবে মনোযোগ দেয়নি। এখানে কাজ করার বিশাল সুযোগ রয়েছে।

আইন উপদেষ্টা বলেন, আমরা প্রচলিত আদালতের উন্নয়নে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করি। অথচ, অনেক কম টাকা দিয়ে লিগ্যাল এইড আদালতের মাধ্যমে মানুষের বিচার প্রাপ্তির নিশ্চয়তা তৈরি করা যায়। সেই চিন্তা থেকে লিগ্যাল এইড এর অধ্যাদেশ করা হয়েছে।

আসিফ নজরুল বলেন, লিগ্যাল এইড আইনে মামলা করা আগে বাধ্যতামূলক ছিল না। মামলার জট কমাতে এবার আমরা বাধ্যতামূলক করেছি। সেখানে যাওয়ার পর কেউ যদি অসন্তুষ্ট থাকেন তাহলে বিচারিক আদালতে যেতে পারবেন।

আইন সংশোধনের ফলে এখন থেকে ১১টি আইনে মামলার ক্ষেত্রে প্রথমে লিগ্যাল এইডে যাওয়া বাধ্যতামূলক জানিয়ে তিনি বলেন, পারিবারিক বিরোধ, পিতা-মাতার ভরনপোষণ, সম্পত্তির ভাগ, যৌতুক, চেকের মামলা, বাড়িভাড়াসহ ১১ ধরনের আইনে মামলা দায়েরের পূর্বে বাধ্যতামূলকভাবে লিগ্যাল এইড আদালতে যেতে হবে।

বিচারকের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, আগে একটি জেলায় একজন বিচারক ছিল, এখন তিন জন এই দায়িত্ব পালন করবেন। এর মধ্যে একজন সিনিয়র সহকারী জজ, উনার চেয়ে একজন সিনিয়র জজ এবং একজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে নিয়োগ দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, এটি কার্যকর করা গেলে দেশে মামলার জট কমে যাবে। দেশের দরিদ্র অসহায় মানুষের ন্যায়বিচার ও অধিকার সুরক্ষার জন্য অবারিত সুযোগ সৃষ্টি করবে।

আসিফ নজরুল বলেন, লিগ্যাল এইড ছাড়াও আমরা অনেক কাজ করেছি যা কোনো দিন বাংলাদেশের ইতিহাসে হয় নাই। মামলার নিষ্পত্তি দ্রুত করতে আমরা সিভিল ও ক্রিমিনাল আদালতকে পৃথক করেছি। বিচারিক পদ সৃষ্টির ক্ষমতা আগে রাজনৈতিক মন্ত্রীদের হাতে ছিল, আমরা এটা চিফ জাস্টিস অফিসের কাছে নিয়ে গেছি। নিজে হাতে করে নিয়ে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকে সাইন করিয়ে নিয়ে এসেছি। ফলে, একদিনে সোয়া দুইশ বিচারকের পদ সৃষ্টি হয়েছে। 

এছাড়াও বিভিন্ন আইন সংস্কারের প্রশ্নাতীতভাবে কাজ করার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, আমরা সিআরপিসি ও সিপিসিতে যে অধ্যাদেশ করেছি সে রকম পুঙ্খানুপুঙ্খ অতীতে হয়নি। যে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট করেছি তা নিয়ে কোনো সমালোচনা হয়নি। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের অধ্যাদেশ করেছি। এটা অবিশ্বাস্য ঘটনা।

অনুষ্ঠানে জার্মান অ্যাম্বাসি, ঢাকার ডেপুটি হেড অব কর্পোরেশন জেনিস হোসাইন, জিআইজেড এর কান্ট্রি ডিরেক্টর মারটিনা বুকার্ড, জেলা লিগ্যাল এইড কমিটি, সিলেটের চেয়ারম্যান ও সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ হালিম উল্লাহ চৌধুরী, জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার নির্বাহী পরিচালক (সিনিয়র জেলা জজ) শেখ আশফাকুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। এর আগে মঞ্চায়ন করা হয় মামলাপূর্ব মধ্যস্থতা বিষয়ক নাটক।