শিরোনাম
আবু নাঈম
পঞ্চগড়, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : রফিকুল ইসলাম (৩৫)। পেশায় বাইসাইকেলের মেকার। তবে তার স্বপ্ন জনপ্রতিনিধি হয়ে জনসেবা করা। আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান ওয়ার্ডের সদস্য পদে। এ লক্ষ্যে গত ৪ বছর ধরেই প্রচারণা চালাচ্ছেন তিনি। তবে প্রচারণায় বেঁছে নিয়েছেন এক ব্যতিক্রমী কৌশল।
ভোটারদের কাছে নিজেকে তুলে ধরতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিতরণ করছেন বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। তিনি এখন ‘গাছ মেম্বার’ নামেই পরিচিতি পেয়েছেন।
রফিকুল ইসলামের বাড়ি পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের মোহনবাগান গ্রামে। তিনি সেখানকার সামছুল হকের ছেলে। হাড়িভাসা বাজারে বাইসাইকেল মেরামতের কাজ করেন তিনি।
জানা গেছে, হাড়িভাসা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডে সদস্য পদে নির্বাচন করবেন রফিকুল। এ জন্য নিজের পরিচিতি বাড়াতে এ উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। গত ৪ বছরে ওয়ার্ডের ৯টি গ্রামের প্রায় প্রত্যেক বাড়িতেই একাধিকবার ছুটে গেছেন। প্রতিবারই দিয়ে এসেছেন ফলজ, বনজ কিংবা ওষুধি গাছের চারা। এ পর্যন্ত হাজারের বেশি গাছের চারা বিলিয়েছেন তিনি।
এদিকে, তার গাছ বিলানোর এ উদ্যোগ ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন স্থানীয়রা। ভোটে বিজয়ী মেম্বার না হলেও ‘গাছ মেম্বার’ নামে পরিচিতি পেয়েছেন তিনি। কেউ কেউ বলছেন, তিনি মেম্বার হতে পারবে না, অহেতুক অর্থ খরচ করে এসব করছেন। তবে এসবের পাত্তা দেন না রফিকুল।
স্থানীয়রা জানান, রফিকুল গত কয়েকবছরে আম, কাঁঠাল, পেয়ারা, কৃষ্ণচূড়া গাছের চারা বেশি বিতরণ করেছেন। তবে বিতরণের মধ্যেই থেমে থাকেন না তিনি, খোঁজও রাখেন গাছটি বেঁচে আছে কি-না। মারা গেলে নতুন করে আবার চারা পৌঁছে দেন।
মোহন বাগান গ্রামের রঞ্জিত রায় বলেন, রফিকুলের দেয়া বিভিন্ন প্রজাতির গাছ এলাকার সবার বাড়িতেই আছে। এসব গাছ বিতরণের উদ্দেশ্য যাই থাকুক, তবে কর্মসূচিটা প্রশংসার। তাছাড়া ইউপি সদস্য হিসেবে পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিদের দরকার। এ ক্ষেত্রে বিত্তশালী হওয়ার চেয়ে মানবিক হওয়া বেশি প্রয়োজন। রফিকুলের মত কেউ মেম্বার হলে সমস্যা দেখি না।
হাওড়াপাড়া এলাকার হাসেম আলী বলেন, গাছ বিতরণের মাধ্যমে এলাকার নারীদের কাছে খুব সহজেই পৌঁছতে পেরেছে রফিকুল। পুরুষ ভোটাররা তাকে সংকোচের জায়গা থেকে এড়িয়ে গেলেও অনেক নারীর ভোট তিনি পাবেন।
ডাবরভাঙ্গা গ্রামের মিজানুর রহমান বলেন, প্রচারণার কৌশল হিসেবে তার গাছ বিতরণের আইডিয়াটা দারুন। মানুষের ভালো কাজের প্রশংসা করতে দোষ নেই।
এ বিষয়ে রফিকুল ইসলাম বলেন, ভোট না পাই মানুষের দোয়াতো পাবো! এছাড়া গাছ লাগানো সওয়াবের কাজ। আমি গরীব মানুষ, গরীবদের সুখ-দুঃখের অংশীদার হতে মেম্বার হওয়ার আগ্রহ জেগেছে। এখন গাছ বিলাচ্ছি, আল্লাহ যদি মেম্বার হিসেবে কবুল করেন, তাহলে মানুষের সব ধরণের সহযোগিতায় পাশে দাঁড়াতে পারবো।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের এখনও অনেক সময় বাকি, তবে আমার গাছ বিতরণ চলবেই। মেম্বার হতে না পারলেও এই কর্মসূচি অব্যাহত রাখার চেষ্টা করবো। তবে গাছ বিতরণের ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা পেলে পুরো ইউনিয়নব্যাপী আমার কার্যক্রম বিস্তৃত করতে চাই।