শিরোনাম
এস এম জাহিদ হোসেন
খুলনা, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস): খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যাটারিচালিত ইজি বাইকগুলি নিয়মিত পূর্ণ যাত্রী বহন করলে যানজট উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে পারে।
টুয়েট-এর জ্বালানি বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (ইএসই) বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নিরব মন্ডলের নেতৃত্বে গবেষণা দল গত ৭ থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খুলনা শহরের - গোল্লামারী, সোনাডাঙ্গা বাস স্টেশন, শিব বাড়ি, ময়লাপোতা, রয়েল এবং পিটিআই জংশন সহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলিতে ইজি বাইক চলাচল পর্যবেক্ষণ করেছে।
শুধুমাত্র ১০ সেপ্টেম্বর, গবেষণায় মাত্র এক ঘন্টায় পিটিআই জংশনের মধ্য দিয়ে ৩,২৫৩টি ইজি বাইক অতিক্রম করেছে বলে গণনা করা হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৫ শতাংশ যান পূর্ণ ছয়জন যাত্রী বহন করেছে, ১০-১৫ শতাংশ যান ৪-৫ জন যাত্রী বহন করেছে, যেখানে বেশিরভাগ ৮০-৮৫ শতাংশ যান মাত্র ২-৩ জন যাত্রী বহন করেছে, যদিও সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা ছয়জন।
গবেষকরা যুক্তি দিয়েছেন যে, এই পূর্ণ ব্যবহার না হওয়ার ফলে রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, যানজট আরও খারাপ হয় এবং বিদ্যুৎ ব্যবহারের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে।
খুলনা সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানিয়েছে, ১০,০০০ ইজি বাইক শহরে চলাচলের জন্য লাইসেন্সপ্রাপ্ত। তবে, ৪৫,০০০ এরও বেশি অননুমোদিত ইজি বাইক চলাচল করছে, যা ব্যাপক যানজট সৃষ্টি করছে এবং প্রায় ৩ লক্ষ যাত্রীর দৈনিক চলাচলে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। এই বৈদ্যুতিক যানবাহনগুলো প্রতিদিন ৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খরচ করে, যা স্থানীয় বিদ্যুৎ গ্রিডের উপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে।
বাসসের সাথে আলাপকালে, নিরব মণ্ডল বলেন, যদি যানবাহনগুলো তাদের পূর্ণ যাত্রী বহন করে তবে রাস্তায় ইজি বাইকের সংখ্যা এবং বিদ্যুতের ব্যবহার প্রতিদিন ৫০-৭০ মেগাওয়াট হ্রাস করা যেতে পারে।
তিনি পরামর্শ দেন যে, কঠোর ট্রাফিক নিয়ম, চালক এবং বাসিন্দাদের জন্য নিয়মিত সামাজিক সচেতনতামূলক প্রচারণা - বিশেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে - এবং চালকদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচি ইজি বাইকের সংখ্যা এবং যানজট কমাতে সাহায্য করতে পারে।
মন্ডল উলে¬খ করেন যে, ব্যাটারিচালিত ইজি বাইক পরিবেশবান্ধব। তবে তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন যে, ব্যাটারি ফেলে দেয়ার ক্ষেত্রে সঠিক বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা ছাড়া, এগুলো মারাত্মক পরিবেশ দূষণের কারণ হতে পারে। কারণ ব্যবহৃত ব্যাটারি বাতাসে ক্ষতিকারক কার্বন নির্গত করে।
তিনি আরও বলেন, "সঠিক রুট ব্যবস্থাপনার অভাব এবং চালকদের ট্রাফিক নিয়ম সম্পর্কে অসচেতনতার কারণে বিপুল সংখ্যক ইজি বাইক যানজট তৈরি করছে।"
বাসস-এর সাথে আলাপকালে, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) খন্দকার হোসেন আহমেদ বলেন, অনেক ছোট ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী এবং গৃহিণী এখন অর্থ উপার্জনের জন্য ইজি বাইক চালাচ্ছেন।
তিনি জানান যে, কেএমপি গত দুই মাসে ৭,০১০ জন ইজি বাইক চালককে প্রশিক্ষণ দিয়েছে এবং সার্টিফিকেট বিতরণ করেছে। বর্তমানে এই কর্মসূচি স্থগিত রয়েছে তবে শীঘ্রই আবার শুরু হবে।
সুন্দরবন একাডেমির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির বলেন, শহরে ঘন ঘন যানজট এবং দুর্ঘটনা রোধে চালকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত। তিনি শহরকে যানজটমুক্ত করতে এবং বাসিন্দাদের চলাচল সাবলীল করতে অননুমোদিত ইজি বাইকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।