শিরোনাম
খুলনা, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে স্বাধীন, জবাবদিহিমূলক ও মানুষের প্রত্যাশা-উপযোগী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হলে সংস্কার প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্তিমূলক পরামর্শ অপরিহার্য বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্ট অংশীজনেরা।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন (এনএইচআরসি), ২০০৯-এর সংস্কার বিষয়ে খুলনায় অনুষ্ঠিত বিভাগীয় পরামর্শ সভায় অংশ নিয়ে সংশ্লিষ্ট অংশীজনেরা এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশ এবং সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের সহযোগিতায় সিটি ইন হোটেলে আয়োজিত এ সভায় সরকারি কর্মকর্তা, নাগরিক সমাজ, অ্যাকাডেমিক, আইনজীবী ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব ড. হাফিজ আহমেদ চৌধুরী জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন, ২০০৯ সংশোধনের মাধ্যমে কমিশনকে আরও শক্তিশালী ও কার্যকর করার বিষয়ে অভিমত ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, ‘সবার অংশগ্রহণে এই আইন সংস্কার প্রক্রিয়া বাস্তবায়িত হলে এটি মানবাধিকার সুরক্ষায় একটি মাইলফলক হবে।’
ইউএনডিপি বাংলাদেশের সিনিয়র রুল অব ল’ অ্যাডভাইজার রোমানা শোয়াইগার উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, “জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে স্বাধীন, জবাবদিহিমূলক ও মানুষের প্রত্যাশা-উপযোগী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হলে সংস্কার প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্তিমূলক পরামর্শ অপরিহার্য।”
লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। তিনি সরকারের অঙ্গীকারের কথা উল্লেখ করে বলেন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে মানবাধিকার রক্ষার একটি শক্তিশালী অভিভাবক হিসেবে কার্যকর করার বিষয়ে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি আরও বলেন, এই পরামর্শ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন অংশীজনের মতামত সংগ্রহ করা হবে, যা আইনের অর্থবহ সংশোধন প্রণয়নে সহায়ক হবে।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের যুগ্ম সচিব এস. এম. শাফায়েত হোসেন। তিনি বিদ্যমান আইনের মূল ধারাগুলো আলোচনা করে সংস্কারের প্রয়োজনীয় দিকগুলো তুলে ধরেন।
পরবর্তী আলোচনা পর্বে অংশগ্রহণকারীরা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব দেন। এর মধ্যে ছিল- মানবাধিকার কমিশনের বিকেন্দ্রীকরণ ও জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কার্যক্রম বিস্তার। পূর্ণকালীন ও বেতনভুক্ত সদস্য নিয়োগ করা, যেখানে নারী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হবে। কমিশনের আর্থিক স্বাধীনতা ও বাজেট বৃদ্ধি। সরকার নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন কমিটি থেকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা।
মানবাধিকার রক্ষাকারীদের জন্য সুরক্ষা ও প্রণোদনা প্রদানের ব্যবস্থা করা। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তে নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করা। ডিজিটাল সহিংসতা, জলবায়ু পরিবর্তন ও তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কিত অধিকারকে মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া।
সভা শেষে লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের উপসচিব মৌসুমী দাস অংশগ্রহণকারীদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, খুলনা এবং অন্যান্য বিভাগীয় শহরে আয়োজিত এ ধরনের পরামর্শ সভার সুপারিশগুলো এনএইচআরসি আইন সংশোধনের খসড়া প্রণয়নে প্রতিফলিত হবে।
উল্লেখ্য, খুলনার এ সভাটি দেশের বিভিন্ন বিভাগে চলমান ধারাবাহিক পরামর্শ প্রক্রিয়ার অংশ। ইতোমধ্যে সিলেটে প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী সপ্তাহগুলোতে অন্য বিভাগীয় শহরগুলোতেও অনুরূপ সভা অনুষ্ঠিত হবে।