বাসস
  ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭:৪১

ভোলার মেঘনায় ডুবে যাওয়া কাঁচামালবাহী জাহাজ চারদিনেও উদ্ধার হয়নি

ছবি : বাসস

।। আল-আমিন শাহরিয়ার ।।

ভোলা, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : ভোলার মেঘনা নদীতে সিরামিক কারখানার ১৮ শ' টন কাঁচামাল নিয়ে ডুবে যাওয়া এমভি ‘রেক্সগ্লোরী’-১ নামক মালবাহী জাহাজটি ৪ দিনেও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। গত রোববার (৩১ আগস্ট) জাহাজটি জেলা সদর ভোলার কাচিয়া ইউনিয়নের কাঠিমাথা নামক মধ্য মেঘনায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে তলাফেটে ডুবে যায়। ওইসময় জাহাজে থাকা ১৩ জন নাবিককে স্থানীয় জেলেরা জীবিত উদ্ধার করেন।

প্রত্যক্ষ্যদর্শী জেলেরা জানান, গত রোববার (৩১আগস্ট) ভোর রাতে এমভি সুলতানা বকর নামের অপর একটি জাহাজের ধাক্কায় সদর উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়ন সংলগ্ন কাঠির মাথা নামক এলাকার মেঘনা নদীতে এ জাহাজ ডুবির ঘটনা ঘটে। আজ বুধবার পর্যন্ত জাহাজটি উদ্ধারে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। 

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, মেঘনা নদীতে এখনো জাহাজটি ডুবন্ত অবস্থায় রয়েছে। তবে জাহাজের পিছনে নাবিকদের থাকার কেবিনটি এখনো পানির ওপরে দৃশ্যমান। জাহাজের নাবিকরা ভোলার তুলাতুলি মাছঘাট এলাকায় একটি দোকানে আশ্রয় নিয়েছেন। এ ঘটনায় দুই জাহাজের মালিক পক্ষ থেকে ভোলা সদর মডেল থানায় পৃথক দু'টি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।

জাহাজের সুকানি মো. শহীদুল ইসলাম জানান, গত ২৯ আগস্ট সকাল ৭টার দিকে চট্টগ্রাম থেকে সিরামিক কারখানার ১৮শ' টন কাঁচামাল নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা দেয় এমভি রেক্সগ্লোরী-১ নামের জাহাজটি। গত ৩১ আগস্ট দিবগাত রাত ১১টার দিকে ভোলা সদরের তুলাতুলি সংলগ্ন মেঘনা নদীতে নোঙ্গর করে জোয়ারের অপেক্ষা করছিলেন জাহাজের নাবিকরা। ভোর ৪টার দিকে নদীতে জোয়ার আসলে তাদের পাশে থাকা এমভি সুলতানা বকর নামের অপর একটি জাহাজ নোঙ্গর উঠিয়ে যাওয়ার সময় তাদের জাহাজের পিছনে জোড়ে ধাক্কা দেয়। এতে রেক্সগ্লোরী জাহাজটির তলা ফেটে ভিতরে পানি প্রবেশ করতে থাকে। ফলে তারা জাহজের নোঙ্গর উঠিয়ে পাশের একটি ডুবোচরের কাছাকাছি নিয়ে যায়। পরে সেখানেই একপাশ কাত হয়ে জাহাজের সামনের অংশ পানির নিচে ডুবে যায়। জাহাজটি উদ্ধারে মালিক পক্ষের লোকজন ঘটনাস্থলে আসার জন্য রওনা হয়েছেন বলে নাবিকরা জানিয়েছেন। 
 ভোলা সদর মডেল থানায় করা সাধারণ ডায়েরিতে এমভি রেক্সগ্লোরীর মাস্টার মো. আহাদ মিয়া উল্লেখ করেন, ৩১ আগস্ট ভোর রাত ৪টার দিকে এমভি সুলতানা বকর জাহাজটি পিছন থেকে তাদের জাহাজে প্রচন্ড গতিতে ধাক্কা দেয়ায় জাহাজের ইঞ্জিন রুমের বড় ধরনের ফাটল ও গর্ত তৈরি হয়। এতে মালামালসহ জাহাজটি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ব্যাবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে তাদের ১৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলেও ওই জিডিতে উল্লেখ রয়েছে।

অপর দিকে, এমভি সুলতানা বকর জাহাজের মালিক পক্ষের করা জিডিতে তারা উল্লেখ করেন, ভোর রাতে তাদের জাহাজটি নোঙরে থাকা অবস্থায় রেক্সগ্লোরী জাহাজটি বাম দিক থেকে এসে তাদের জাহাজের সামনে দিয়ে ওভারটেক করে যাওয়ার সময় জাহাজের সামনে এসে পড়ে। এ সময় তাদের জাহাজের সামনের ফোরপিক ট্যাংকি ফেটে গিয়ে জাহাজটির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

ভোলা সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সাহাদাৎ মো. হাচনাইন পারভেজ জানান, মেঘনা নদীতে মালবাহী দুটি জাহাজের সংঘর্ষে এমভি রেক্সগ্লোরী নামের একটি জাহাজের তলা ফেটে নদীতে আংশিক ডুবে যায়। এ ঘটনায়, (৩১ আগস্ট) রোববার রাতে দুই জাহাজের মালিক পক্ষ থানায় দু'টি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ তদন্ত করছে। 

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)'র ভোলা অঞ্চলের বন্দর কর্মকর্তা মো. রিয়াদ হোসেন বাসস'কে জানান, জাহাজ মালিক কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে সেটি উদ্ধারে সহযোগিতা চাইলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।