শিরোনাম
ঢাকা, ২৮ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : চট্টগ্রামে কর্ণফুলি টানেল নির্মাণ বহির্ভূত তিনটি পৃথক খাত দেখিয়ে প্রায় ৫৮৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা অপচয় ও আত্মসাতের অভিযোগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদক সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, ভাগ্নে-ভাগ্নি রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক, টিউলিপ সিদ্দিক, আজমিন সিদ্দিকসহ তৎকালীন মন্ত্রী পরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্যদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা করলেও ওবায়দুল কাদেরের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের তহবিল তছরূপ, অপচয় এবং আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের এটিই প্রথম মামলা।
দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন (প্রতিরোধ) আজ এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন, চট্টগ্রামে কর্ণফুলি নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ প্রকল্পের বাইরে অসৎ উদ্দেশ্যে ‘পরিষেবা এলাকা’, ‘পর্যবেক্ষণ সফটওয়্যার’ এবং ‘একটি টাগবোট’ এই তিনটি পৃথক খাত দেখিয়ে ৫৯ দশমিক ৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, বাংলাদেশী টাকায় ৫৮৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা আত্মসাৎ, অপচয় ও রাষ্ট্রীয় তহবিলের ক্ষতিসাধন করায় তৎকালীন সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ চারজনের বিরুদ্ধে দুদক এই অভিযোগ গঠন করেছে।
মামলার অপর তিন আসামি হলেন- বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তৎকালীন নির্বাহী পরিচালক (পরবর্তীতে মন্ত্রী পরিষদ সচিব) খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী কবির আহমদ, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের সাবেক পরিচালক (অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব পরিচিতি-৩৬৪২) আলীম উদ্দিন আহমেদ।
দুর্নীতি দমন কমিশন ইতোমধ্যে মামলা রুজুর অনুমোদন দিয়েছে। দুদকের উপ-পরিচালক মো. সিরাজুল হকের নেতৃত্বে সহকারি পরিচালক মো. আবদুল মালেক, উপ-সহকারি পরিচালক আনিসুর রহমান এই তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছেন এবং আজ বৃহস্পতিবার এই মামলা রুজু করা হয়েছে।
কমিশনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ২০১০ সালে যে কল্পনাপ্রসূত উদ্দেশ্য বর্ণনা করে কর্ণফুলি নদীতে টানেল নির্মাণ করা হয়েছিল। তিনি এই টানেলের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়কে এখন ‘সরকারের কাছে গলার কাঁটা’ বলে মন্তব্য করেছেন। ‘কর্ণফুলি টানেল হচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকারের উচ্চাভিলাষ প্রকল্প। যাকে ‘চৌবাচ্চায় হাঙ্গর লালনের সঙ্গে তুলনা করা যায়’। বছরের পর বছর রাষ্ট্রের কোটি-কোটি টাকা রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বহন করে যেতে হচ্ছে। টানেল ব্যবহার জনস্বার্থ রক্ষা ও আয়বর্ধক না হলে এই টানেলের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বছরের পর বছর টানতে হবে রাষ্ট্রকে। কারণ কর্ণফুলি টানেলের যে কোন ক্ষতির সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক লাইফলাইন হিসেবে পরিচিত প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রামের কর্ণফুলি মোহনার সরাসরি সম্পৃক্ত।
দুদকের তদন্তে দেখা যায়, কর্ণফুলি নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের পর প্রতিমাসে রক্ষণাবেক্ষণ ও আনুষাঙ্গিক ব্যয় মেটাতে ৯ কোটি ৩৫ লাখ ৭১ হাজার ৭১ টাকা খরচ করতে হয়। সেই হিসেবে ২০২৩ সালের অক্টোবর মাস থেকে ২০২৫ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত ২২ মাসে টানেলের রক্ষণাবেক্ষণ, বেতন ভাতাসহ আনুষাঙ্গিক ব্যয় মেটাতে খরচ হয়েছে ২০৫ কোটি ৮৫ লাখ ৬৩ হাজার ৫৬১ টাকা। পক্ষান্তরে উপরোক্ত ২২ মাসে টানেলের ভেতর দিয়ে যানবাহন চলাচলে আয় হয়েছে ৬৭ কোটি ২৫ লাখ ৫৪ হাজার ১০০ টাকা।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের হিসাব মতে টানেল উদ্বোধনের পর প্রতিমাসে সরকারের ক্ষতি হয়েছে ৬ কোটি ৩০ লাখ ৪৩০ টাকা। অর্থাৎ ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত ২২ মাসে টানেলের পেছনে সরকারের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ১৩৮ কোটি ৬০ লাখ ৯ হাজার ৪৬১ টাকা।
দুদক সুত্র জানায়, ২০১৪ সালে কর্ণফুলি নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের জন্য মুল ডিপিপি ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬ হাজার কোটি টাকা। ২০১৭ সালে রিভাইজড ডিপিপিতে তা বেড়ে দাঁড়ায় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা। ২০২২ সালে তা সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকায় বৃদ্ধি করে প্রকল্পের ব্যয় প্রস্তাবনা অনুমোদন করা হয়।
দুদক সুত্র জানায়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শেখ হাসিনাসহ অনেক সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, নেতা হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের জালে আটকা পড়লেও সড়ক পরিবহণ ও সেতু বিভাগের মতো দু’টি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অন্তর্বর্তী সরকারের গত এক বছর ধরা ছোঁয়ার বাইরে ছিলেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, মামলার অধিকতর তদন্ত চলছে। চার্জশিট দাখিল ও বিচার প্রক্রিয়া শুরুর সময় পর্যন্ত তদন্তে আসা অভিযোগ প্রমাণ সাপেক্ষে শেখ হাসিনাসহ একনেক কমিটির সদস্যরাও এই মামলায় অন্তর্ভুক্ত হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
দুদকের তদন্তে দেখা যায়, চট্টগ্রামে কর্ণফুলি তলদেশে টানেল নির্মাণ প্রকল্পে অনুমোদিত প্ল্যানের বাইরে গিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ‘পরিষেবা এলাকা’, ‘পর্যবেক্ষণ সফটওয়্যার’ এবং ‘একটি টাগবোট’ অন্তর্ভুক্ত করেন।
যা আন্তর্জাতিক ও দেশীয় তিনটি বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠান তাদের রিপোর্টে সুপারিশ করেননি। এরপরও রাষ্ট্রীয় তহবিল তছরূপের মানসে সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রকল্পে সুপারিশ বহির্ভূত তিনটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়ে ৫৮৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা আত্মসাৎ, অপচয় ও রাষ্ট্রীয় তহবিলের ক্ষতিসাধন করেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
অভিযোগ অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০১০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের এক জনসভায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্ণফুলি নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের ঘোষণা দেন। এই ঘোষণার পর টানেল নির্মাণের পদক্ষেপ হিসেবে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনার জন্য ২০১০-২০১১ অর্থ বছরের উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনার জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ‘চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (চায়না) অরুপ হংকং জেভি-কে নিয়োগ করা হয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর প্রদত্ত প্রতিশ্রুতির তালিকায় টানেল নির্মাণের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং সে অনুযায়ী টানেল নির্মাণের অগ্রগতি নিয়মিত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠাতে হতো। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (চায়না) অরুপ হংকং জেভি ২০১৩ সালের আগস্ট মাসে সম্ভাব্যতা সমীক্ষার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। উক্ত প্রতিবেদনে ট্রাফিক সম্পর্কিত অর্থনৈতিক সুবিধার যে বর্ণনা দেয়া হয়, তা মূলত ছিল কল্পনাপ্রসূত, উচ্চাভিলাষী এবং অকল্পনীয় ভাবনার ট্রাফিক সারণি।
দুদকের তদন্তে বেরিয়ে আসে, বার্ষিক রূপান্তর ফ্যাক্টর ব্যবহার করে যানবাহনের দৈনিক সংখ্যা বার্ষিক সংখ্যায় রূপান্তরিত করা হয়। ‘দেব কনসালটেন্স লিমিটেড’ নামে একটি অ্যাপস ব্যবহার করে প্রস্তুত করা গ্রাফিক্স জরিপ বিশ্লেষণ এবং পূর্বাভাস হিসেবে টানেলের কর্ম ক্ষমতার মূল্যায়ন উপস্থাপন করা হয়।
সেখানে উল্লেখ করা হয়, টানেল নির্মাণ শেষ হলে ২০১৭ সালে প্রায় ৬ দশমিক ৩ মিলিয়ন যানবাহন টানেলের মধ্য দিয়ে যাতায়াত করবে। যা বেড়ে ২০২০ সালে যাতায়াত করবে ৭ দশমিক ৬ মিলিয়ন যানবাহন। ২০২১ সালে ৮ দশমিক ২৩ মিলিয়ন, ২০২২ সালে ৮ দশমিক ৮৬ মিলিয়ন, ২০২৩ সালে ৯ দশমিক ৪৯ মিলিয়ন, ২০২৪ সালে ১০ দশমিক ১২ মিলিয়ন, ২০২৫ সালে ১০ দশমিক ৭৫ মিলিয়ন যানবাহন কর্ণফুলি নদীর তলদেশের টানেল দিয়ে যাতায়াত করার কথা ছিল। যা ২০৩০ সালে ১৩ দশমিক ৯ মিলিয়ন, ২০৫০ সালে ৩২ দশমিক ৯ মিলিয়ন এবং ২০৬২ সালে ৫০ দশমিক ৫ মিলিয়নে উন্নীত হবে বলে পূর্বাভাস গ্রাফিক্সে উল্লেখ করা হয়। দুদকের তদন্তে ২০১৭ থেকে ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত টানেল ব্যবহারের আয়-ব্যয় এবং রক্ষণাবেক্ষণ খাতে রাষ্ট্রের ক্ষতি নিরূপণ করে প্রতীয়মান হয়েছে, এই টানেল নির্মাণের ঘোষণা ছিল স্রেফ রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ, কোনোরূপ প্রাক-প্রস্তুতি, বিচার বিশ্লেষণ, পরিকল্পনা এবং দাতা সংস্থার আর্থিক প্রতিশ্রুতি ছাড়াই কল্পনাপ্রসূত ঘোষণা।
টানেলের সম্ভাব্যতা যাছাই করার ট্রাফিক পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সোনাদিয়া দ্বীপে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ হলে দেশের বিভিন্ন স্থানে পণ্য পরিবহনের জন্য ট্রাকগুলোকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ব্যবহার করতে উৎসাহিত করবে এই টানেল। অথচ দেখা যায়, সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করা হয়নি। প্রস্তাবিত টানেলটি কর্ণফুলি নদীর দক্ষিণে অবস্থিত প্রস্তাবিত শিল্পাঞ্চলের জন্য কাজ করবে বলা হলেও আজ পর্যন্ত একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠেনি। বরং তৎকালীন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা টানেল অনুমোদন হবার আগেই সম্ভাব্য প্রকল্প এলাকার জমি কম মূল্যে কিনে প্রকল্পের কাছে বেশী মূল্যে বিক্রি আর্থিক ফায়দা লুটে নিয়েছে।
সেতু বিভাগের তথ্য অনুযায়ী দেখা যায়, ২০২৩ সালে টানেল উদ্বোধনের পর ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ মাসে ২ দশমিক ৩৭২ মিলিয়ন, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১২ মাসে ১০ দশমিক ১২ মিলিয়ন এবং ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত ৭ মাসে ৬ দশমিক ২৭০ মিলিয়নসহ ২২ মাসে মোট ১৮ দশমিক ৭৬২ মিলিয়ন যানবাহন নদীর তলদেশের টানেল দিয়ে যাতায়াত করার কথা ছিল। অথচ ফলাফল চিত্র দেখা যাচ্ছে তার উল্টো হয়েছে। অনুসন্ধানকালে দেখা যায়, কর্ণফুলি নদীর তলদেশের টানেল দিয়ে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত ২২ মাসে মাত্র ২৪ লাখ ৫৫ হাজার ৮৭৯ টি অর্থাৎ ২ দশমিক ৫৫ মিলিয়ন যানবাহন চলাচল করেছে। হিসাব করে দেখা যায়, সম্ভাব্যতা সমীক্ষার মাত্র ১৩ দশমিক ৫৯ ভাগ যানবাহন চলাচল বাস্তবায়ন হয়েছে।
দুদকের তদন্তে অনিয়ম এবং দুর্নীতির যে সব তথ্য বেরিয়ে এসেছে সেগুলো হলো, যে পরিমাণ যানবাহন পারাপারের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল, তা ছিল বাস্তবতা বিবর্জিত। ফলে জ্বালানি খরচ ও সময় সাশ্রয় হয়নি।
চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব কমে যাওয়ার কথা বলা হলেও তা বাস্তবায়ন কিংবা অর্জিত হয়নি। টানেল নির্মিত হলে কর্ণফুলি নদীর দক্ষিণ তীরে আনোয়ারা অংশে শিল্পবিপ্লব হবে বলা হলেও টানেল নির্মাণকালীন সময় থেকে আজ পর্যন্ত ১৫ বছরে নতুন কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। টানেলের আনোয়ারা অংশে নতুন শহর গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা বলা হলেও আনোয়ারা শহর বা উপশহর হিসেবে কোন আবাসিক গড়ে তোলার পরিকল্পনা কেউ নেয়নি।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত ২২ মাসে যানবাহন যাতায়াতে মাত্র ৬৭ কোটি ২৫ লাখ ৫৪ হাজার ১০০ টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে। খরচ হয়েছে ২০৫ কোটি ৮৫ লাখ ৬৩ হাজার ৫৬১ টাকা। এতে কর্ণফুলির তলদেশে টানেল নির্মাণের বিষয়টি অর্থনৈতিকভাবে লাভবান যে হয়নি তা কর্তৃপক্ষ এখন প্রতি মূহুর্তেই উপলব্ধি করছেন।
দুদকের তদন্তে দেখা যায়, প্রকল্প বিষয়ে কারিগরি শাখায় আটটি পৃথক নথি, টানেল নির্মাণ প্রকল্প দপ্তরের আটটি পৃথক নথি এবং পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখায় ২২টি পৃথক নথি রয়েছে। একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এতগুলো পৃথক নথি থাকা বাস্তবসম্মত নয় বলে মন্তব্য করেছেন তদন্ত টিম। তাছাড়া একটি নথির নোট শিটের সঙ্গে অন্য নথির নোটশিট সংযুক্ত রাখারও তথ্য পাওয়া যায়। ফলে স্পষ্টই ধারণা করা যায় যে, অসৎ উদ্দেশ্যে একটি প্রকল্পের জন্য ৩৮টি পৃথক নথি চালু করে দুর্নীতির মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ করার সুযোগ নেয়া হয়েছে।
দুদক তদন্ত কমিটির সূত্র জানান, তৎকালীন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের আগ্রহে দেশী-বিদেশী বিশেষজ্ঞ নিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এরপর বিদেশী বিশেষজ্ঞ হিসেবে থাইল্যান্ডের সোলভান এসোসিয়েটস কোম্পানি লিমিটেড নির্বাহী পরিচালক আন্থোনি সুলিভান বিগত ১৫ এপ্রিল ২০১৫ সালে একটি প্রতিবেদন প্রধান প্রকৌশলী সেতু বিভাগের কাছে দাখিল করে। ভারতের হরিয়ানা এলাকার ডিএলএফ সাইবার সিটি ফেজ-এর ব্যবস্থাপক মাইকেল কাস্টনার এবং গাজীপুর ইসলামী প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ও পরিবেশ প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. হোসেন মো. শাকিন পৃথক রিপোর্ট পেশ করেন। তিনটি প্রতিবেদনের কোন রিপোর্টেই কর্ণফুলি টানেল নির্মাণ প্রকল্পে ‘পরিষেবা এলাকা’, ‘পর্যবেক্ষণ সফটওয়্যার’ এবং ‘একটি টাগবোট’ অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে সুপারিশ করেননি। এসব প্রতিষ্ঠানকে রিপোর্ট বাবদ প্রায় কোটি টাকা সম্মানি দেয়া হয়েছে।