শিরোনাম
মো. মামুন ইসলাম
রংপুর, ২৫ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে কৃষিখাতে প্রতি বছর খাদ্য উৎপাদন ক্রমাগত বৃদ্ধি করে একটি টেকসই ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাব এবং বাধাগুলো অতিক্রম করে কৃষিতে টেকসই উন্নয়নের জন্য সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
বিশিষ্ট ধান বিজ্ঞানী এবং খাদ্য নিরাপত্তায় অবদানের জন্য ২০১৮ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত ড. মো. আব্দুল মজিদ বলেন, ‘আধুনিক পদ্ধতিতে চাষযোগ্য লাভজনক ফসলের জলবায়ু সহনশীল জাত উদ্ভাবন এবং সম্প্রসারণের ব্যাপারে কৃষি বিজ্ঞানীরা ক্রমাগতভাবে গবেষণা অব্যাহত রেখে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে কার্যকারিতার প্রমাণ দিয়েছেন।’
তিনি বাসসকে বলেন, ‘জলবায়ু সহনশীল জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে বাংলাদেশ কৃষিক্ষেত্রে টেকসই উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যা খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পথ আরো প্রশস্ত করছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘জলবায়ু সহনশীল ফসলের চাষ সম্প্রসারণ, পুরো প্রক্রিয়া যান্ত্রিকীকরণ, চাষে প্রমাণিত প্রযুক্তি ব্যবহার এবং সর্বোত্তম কৃষি পদ্ধতি গ্রহণ, সুষম সার ও কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ, উন্নত সেচ সুবিধার ফলে উৎপাদন বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে।’
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মজিদ আরো বলেন, ‘খাদ্য উৎপাদন আরো বৃদ্ধির জন্য চাহিদা অনুসারে আবহাওয়া উপযোগী এবং দুর্যোগ সহনশীল উচ্চ ফলনশীল ফসলের জাত উদ্ভাবনের জন্য সকল কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান গবেষণাকাজ অব্যাহত রেখেছে।’
তিনি খেয়াল করেছেন, কৃষকরা ক্রমান্বয়ে উন্নত ও পরিবেশবান্ধব কৃষি প্রযুক্তি গ্রহণ করছেন এবং এর ফলে পরিবেশের ক্ষতির পরিমাণ কমে আসছে।
ড. মজিদ বলেন, ‘পরিবর্তিত জলবায়ু পরিস্থিতিতে টেকসই কৃষির ব্যাপারে আমাদের কৃষকদের কাছে উন্নত প্রযুক্তি ও প্রমাণিত পদ্ধতির কার্যকর প্রচার নিশ্চিত করতে হবে। কৃষি ও প্রাকৃতিক সম্পদের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় ভিডিও ব্যবহার করে প্রশিক্ষণ দেওয়া জরুরি।’
বর্তমানে দেশে অন্যান্য খাদ্যশস্যের পাশাপাশি বছরে ৩৯.০১ মিলিয়ন মেট্রিক টনেরও বেশি আমন, আউশ ও বোরো চাল উৎপাদন হচ্ছে। ১৬ কোটিরও বেশি মানুষের খাদ্য জোগানোর জন্য এবং ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
ড. মজিদ বলেন, ‘২২ কোটি জনসংখ্যার খাদ্য সরবরাহের লক্ষ্যে ২০৫০ সালের মধ্যে উৎপাদন প্রায় দেড় গুণ বৃদ্ধি করতে সরকারিভাবে বাস্তবসম্মত উদ্যোগের ফলে চাল ধ উৎপাদনের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত থাকার সম্ভবনা রয়েছে।’
তিনি কৃষিক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার ব্যাপারে সম্পদ সংরক্ষণ, কৃষি প্রযুক্তি ও অনুশীলন ধরে রাখা, সমন্বিত কীটপতঙ্গ ও পুষ্টি ব্যবস্থাপনা এবং কৃষি বনায়নের গুরুত্বের ওপর বিশেষভাবে জোর দেন।
উচ্চ ফলনশীল ফসলের মানসম্পন্ন বীজের প্রাপ্তি নিশ্চিত করা এবং কৃষকদের কাছে হাইব্রিড ফসলের বীজ উৎপাদন প্রযুক্তি পৌঁছে দেওয়া দরকার। সেই সঙ্গে সর্বশেষ উদ্ভাবিত জাতের ব্যাপারে প্রযুক্তির সহায়তায় প্রশিক্ষণ দেওয়া খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে বলেও মনে করেন তিনি।
দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের পিএইচডি ফেলো মো. মামুনুর রশিদ বলেন, ‘ধানের ফলন ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা টেকসই কৃষির আশা জাগিয়ে তুলেছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘জলবায়ু সহনশীল ধানের জাত সাধারণত বন্যা, খরা, শীত, লবণাক্ততা ও তাপ সহনশীল; সেই সঙ্গে জিঙ্ক এবং ভিটামিন এ সমৃদ্ধ জাতের সম্প্রসারিত চাষ কেবল ফসলের উৎপাদনই বৃদ্ধি করছে না, বরং পুষ্টির চাহিদাও পূরণ করছে।’
রংপুর অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘কৃষকরা এখন জলবায়ু-সহনশীল ফসলের উন্নতমানের বীজ, কমপোস্ট সার এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করায় খাদ্য উৎপাদন ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো, রংপুর কৃষি অঞ্চলেও প্রতি বছর ফসল উৎপাদনের হার ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই প্রবণতা কৃষিক্ষেত্রে টেকসই উন্নয়নের প্রমাণ দিচ্ছে।’