বাসস
  ২৫ আগস্ট ২০২৫, ১২:৩৫

টাঙ্গাইলে পাট উৎসবে মেতেছেন চাষিরা

টাঙ্গাইলে পাটের আশানুরূপ ফলন। ছবি: বাসস

\ মহিউদ্দিন সুমন \

টাঙ্গাইল, ২৫ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : মৌসুমের শুরুতেই জেলার বাজারে সোনালি আঁশ ও রূপালি কাঠি বিক্রি করে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। পাটের আশানুরূপ ফলন ও রোগবালাই কম হওয়ায় এ বছর সোনালি স্বপ্নের আশায় ব্যস্ত সময় পার করছে টাঙ্গাইলের পাট চাষিরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার ১২ উপজেলার গ্রামাঞ্চলের খাল, বিল ও বিভিন্ন জলাশয়ে চলছে পাট জাগ, আঁশ ছড়ানো, শুকানো ও পাটকাঠি সংগ্রহের মহাযজ্ঞ। শ্রাবণ ধারার সঙ্গে মিতালী করে গ্রামীণ জনপদে কৃষাণ-কৃষাণীরা মেতে উঠেছেন পাট উৎসবে। সোনালি আঁশে জীবন বদলাচ্ছে গ্রামীণ জনপদের।

কৃষকরা জানিয়েছেন, এ বছর বিঘা প্রতি পাটের গড় ফলন হয় ১০ থেকে ১২ মণ। খরচ বাদে মুনাফা থাকে ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা। এছাড়া পাটখড়ির আঁটি ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি করে বাড়তি আয় করছেন তারা।

তারা আরও বলেন, পাটের দাম না কমাতে সরকারের কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। না হলে কৃষকের আগ্রহ কমার পাশাপাশি পাটের ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হবেন তারা। খুচরা পাইকারি বিক্রেতারা বিভিন্ন জায়গা থেকে কম মূল্যে কিনে বড় মহাজনদের কাছে বেশি মূল্যে বিক্রি করে। ফলে তারা ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত বছর পাটের ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা এ বছর পাট চাষের দিকে বেশি ঝুঁকেছেন। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও মাটি চাষের উপযুক্ত হওয়ায় পাট চাষে সফল হয়েছেন চাষিরা। চলতি মৌসুমে পাটের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৯ হাজার ৮১৮ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ১৮ হাজার ৩৬১ হেক্টরে। 

পাটের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ১৭ হাজার ৩শ’ বেল। গত বছর জেলায় ১৯ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছিল। এ বছর দেশী তোষা, কেনাফ, মেস্তা জাতের পাট আবাদ করা হয়েছে। জেলায় সবচেয়ে বেশি পাটের আবাদ হয়েছে ভূঞাপুর এবং সবচেয়ে কম আবাদ হয়েছে ধনবাড়ী উপজেলায়।

জেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, সদর উপজেলায় ৩ হাজার ৩৭৫ হেক্টর, বাসাইলে ৪৮০ হেক্টর, কালিহাতীতে ১ হাজার ১৭০ হেক্টর, ঘাটাইলে ৭৯০ হেক্টর, নাগরপুরে ১ হাজার ৮৬০ হেক্টর, মির্জাপুরে ১ হাজার ৩১৮ হেক্টর, মধুপুরে ১৬৩ হেক্টর, ভূঞাপুরে ৩ হাজার ৯১৫ হেক্টর, গোপালপুরে ৩ হাজার হেক্টর, সখীপুরে ২৭৫ হেক্টর, দেলদুয়ারে ১ হাজার ৯০৫ হেক্টর, ধনবাড়ীতে ১১০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে।

সরেজমিনে টাঙ্গাইল সদর ও দেলদুয়ারের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, পাট চাষিরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ ব্যস্ত জমি থেকে পাট কাটায়, কেউবা ব্যস্ত পানিতে জাগ দেওয়ায়, আবার কেউ কেউ পাট ধোয়ায়, কেউবা আবার ব্যস্ত পাট থেকে আঁশ ছাড়াতে। 

পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও এ কাজে সহযোগিতা করছেন। বিশেষ করে নারীদের এ কাজে দেখা গেছে। এরই মধ্যে অনেকে ভালো দামে বিক্রিও করছেন। বাজারে পাটের দামও ভালো পাওয়ায় তারা বেশ খুশি। 

দেলদুয়ার উপজেলার বরুহা গ্রামের পাট চাষি হুমায়ুন কবির লিটন বলেন, আমি ৬ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছি। এতে আমার ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। আশা করছি ৫০ মণ পাট পাবো। প্রায় ১ লাখ টাকায় পাটশোলা বিক্রি করতে পারবো। এখন পর্যন্ত কিছু পাট বিক্রি করেছি ২ হাজার ৮০০ টাকা মণ দরে। এ বছর বোরো ধানের চেয়ে পাটের আবাদ ভালো হয়েছে।

সিলিমপুর গ্রামের পাট চাষি লতিফ মিয়া বলেন, এ বছর ৬ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছি। প্রায় ৬০ মণ পাট পাবো।  প্রতিমণ পাট গড়ে ২ হাজার ৮০০ টাকা দরে বিক্রি করে ১ লাখ ৬৮ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারবো। স্থানীয় উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি অফিসার সব সময় পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছে। আমাদের বাজারে প্রতি হাটে প্রায় ১ হাজার মণ পাট ক্রয়-বিক্রয় হয়ে থাকে। আগামীতে পাটের আবাদ বাড়াবো।

একই এলাকার কৃষক সুকুম উদ্দিন বলেন, এ বছর ৫০ শতাংশ জমিতে পাটের আবাদ করেছি। এখনো দাম ভালো। আর ১৫-২০ দিন পর পাটগুলো বিক্রির উপযোগী হবে। এ রকম দাম থাকলে লাভবান হব।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আশেক পারভেজ বাসসকে জানান, জেলায় চলতি মৌসুমে পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। দাম ভালো পাওয়ায় লাভবান হচ্ছেন পাট চাষিরা। 

এ বছর টাঙ্গাইলের চাষিরা রবি-১, কেনাফ ও তোষা জাতের পাট বেশি আবাদ করে। দেশীয় পাটের মধ্যে রবি-১ জাতটি সবচেয়ে ভালো। এই জাতটি এবার প্রণোদনার মাধ্যমে ২ হাজার ৪০০ জন কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। পাটের বাজার মূল্য বেশি থাকায় পাট চাষে কৃষকদের দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে। 

তিনি বলেন, আমরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে পাট চাষিদের প্রযুক্তিগত সহায়তা, প্রণোদনা, বিনা মূল্যে বীজ বিতরণসহ জেলায় পাটের আবাদ বৃদ্ধিতে সহযোগিতা প্রদান করে যাচ্ছি।