বাসস
  ২২ আগস্ট ২০২৫, ১৭:৩৩
আপডেট : ২২ আগস্ট ২০২৫, ১৭:৩৮

রাজশাহীতে গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করছে মিষ্টি পানের চাষ 

ছবি : বাসস

মো. আয়নাল হক

রাজশাহী, ২২ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস): রাজশাহীর মিষ্টি পান গ্রামীণ অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। স্বাদ ও ঘ্রাণে অত্যন্ত জনপ্রিয় এ পান কৃষকদের আয় বাড়িয়ে তুলছে এবং গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করছে।

মিষ্টি পান অনেক ঐতিহ্যবাহী ফসলের চেয়ে লাভজনক এং চাষাবাদে খরচ কম হয়। এছাড়া রাজশাহীর মাটি ও জলবায়ু পান চাষের জন্য উপযুক্ত হওয়ায় কৃষকরা বেশ আগ্রহের সঙ্গে পান চাষ করছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) সাবেক পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বাসস’কে বলেন, রাজশাহীতে মোট পান চাষের ৭০ শতাংশেরও বেশি মিষ্টি পান চাষ হয়। এতে কৃষকদের ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে।

মিষ্টি পানের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। শরীরে চাঙ্গা ভাব আনতে এ পান চুন ও সুপারির সঙ্গে মিশিয়ে চিবিয়ে খাওয়া হয়। দেশের চাহিদা পূরণের পর অতিরিক্ত মিষ্টি পান বিদেশেও রপ্তানি করা হয়। এর ফলে স্থানীয় কৃষকরা আর্থিকভাবে উপকৃত হচ্ছেন এবং সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়নেও অবদান রাখছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) সূত্র জানায়, এই অঞ্চলের ৭২ হাজার ৭৬৪ কৃষক শুধু স্থানীয় অর্থনীতিতেই নয়, দেশের রপ্তানি আয়েও অবদান রাখছেন।

কৃষি বিশেষজ্ঞ সিরাজুল ইসলাম বলেন, ধান ও পাট চাষের চেয়ে পান চাষ লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা মিষ্টি পান চাষ বেছে নিচ্ছেন। এ মিষ্টি পান চাষের মাধ্যমে অনেকের কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে।

মোহনপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাকিমা খাতুন বলেন, স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি মিষ্টি পান ২৫০ টাকায় বিক্রি হয়।

ডিএই-এর উপ-পরিচালক উম্মে কুলসুম বলেন,  ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাজশাহী জেলায় ৪ হাজার ৪৯৯.২৩ হেক্টর জমিতে ৭৬ হাজার ১৫১.৮২ টন মিষ্টি পান উৎপাদন হয়েছে। এর বাজার মূল্য প্রায় ১ হাজার ৫৬১.৯ কোটি টাকা।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪ হাজার ৩১১ হেক্টর জমি থেকে ৭২ হাজার ৩৩০.৩৪ টন পান উৎপাদিত হয়েছে। জেলার নয়টি উপজেলায় মিষ্টি পান ও সাঁচি পান চাষ করা হয়। তবে মিষ্টি পান চাষই কৃষক ও ক্রেতাদের বেশি পছন্দ।

পান গাছ পরিপক্ব হওয়ার জন্য ৫-৬ মাস সময় লাগে এবং  প্রতি ৮-১০ দিন অন্তর অন্তর পাতা কাটা যায়।

বাকশাইল গ্রামের কৃষক মনিমুল হোসেন জানান, তিনি ও তার স্ত্রী ২৫ বছর ধরে মিষ্টি পান চাষ করছেন। তিনি ৩০ কাঠা জমি থেকে ১৬ লাখ টাকা আয় করেছেন।

তিনি বলেন, আমরা এ পানকে ‘সোনার পাতা’ বলি।  কারণ এটি সবচেয়ে লাভজনক ফসল।

মৌগাছি গ্রামের আরেক কৃষক আলী হোসেন রিয়াদ বলেন, তিনি ১০ কাঠা জমি থেকে ৪ থেকে ৬ লাখ টাকা উপার্জন করেন।

বাগমারা উপজেলার মিষ্টি পান ব্যবসায়ী আবদুস সাত্তার জানান, স্থানীয় ও বৈশ্বিকভাবে মিষ্টি পানের চাহিদা ব্যাপক।
তিনি বলেন, আমি প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে পান সংগ্রহ করি এবং সেগুলো সারাদেশে বিক্রি করি। আমার মাসিক আয় প্রায় ৭০ হাজার টাকা।

চাঁদপুর গ্রামের কৃষক আবদুল হামিদ জানান, মিষ্টি পান চাষের মাধ্যমে তিনি স্বাবলম্বী হয়েছেন।

বাগমারার পানের চাহিদা বগুড়া, রংপুর, ও দিনাজপুরে বেড়েছে এবং সৌদি আররসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে রপ্তানি হচ্ছে। আলোকনগরে পানের একটি বড় বাজার গড়ে উঠেছে। সেখানে বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা পান নিয়ে আসেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ড. আজিজুর রহমান বলেন, মিষ্টি পান শুধু বিয়ে, জন্মদিন ও পহেলা বৈশাখে ঐতিহ্যগতভাবে খাওয়া হয় না, বরং এর ঔষধি গুণাগুণও রয়েছে। ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পে এর ব্যবহার বাংলাদেশের কৃষি খাতকে শক্তিশালী করেছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা কৃষকদের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। সরকার যদি তাদের টেকসই উপায়ে গড়ে ওঠতে সহায়তা করে, তাহলে কৃষকরা জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনেও সহায়ক হবে।