শিরোনাম
।। রোস্তম আলী মণ্ডল।।
দিনাজপুর, ১৮ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস): দিনাজপুর সদর উপজেলার গৃহবধূ সাদেকা বানু (৪২)। এক সময় বাবার ও পরে স্বামীর পরিচয়ে পরিচিত হলেও এখন নিজের পরিচয়ে উজ্জ্বল তিনি। নিজের প্রচেষ্টায় মাছের পোনা উৎপাদন ও মাছ চাষে হয়েছেন সফল উদ্যোক্তা।
আজ সোমবার মৎস্য সপ্তাহের শুরুর দিনে কথা হয় উপজেলার মালিগ্রামের সফল এ নারী উদ্যোক্তার সঙ্গে।
তিনি জানান, ২০১৫ সালে জুলাই মাসে স্বামী বেলাল হোসেনের সহযোগিতায় ছোট পরিসরে মাছ চাষ শুরু করেন তিনি। এরপর থেকেই মাছ চাষ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বর্তমানে তিনি ৩১ একর জমিতে ২২টি পুকুরে জি-থ্রি রুইসহ বিভিন্ন জাতের মাছের পোনা উৎপাদন করেন। এর মাধ্যমে তিনি নিজে স্বাবলম্বী হয়েছেন, পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছেন। এছাড়া প্রায় ২০টি পরিবারের জন্য করে দিয়েছেন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা।
তার সফলতায় অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকে মাছ চাষে যুক্ত হয়েছেন। তার বার্ষিক আয় এখন প্রায় ৭/৮ লাখ টাকা।
এ নারী উদ্যোক্তা জানান, ২০১৫ সালে নিজের মালিগ্রামে দুটি পুকুর লিজ নিয়ে রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভারকার্প, সাদাপুটি, তেলাপিয়া পোনা উৎপাদন শুরু করেন। প্রথম বছরেই সাফল্যের মুখ দেখেন। পরের বছর গ্রামের আরও ৩ টি পুকুর লিজ নিয়ে পোনা উৎপাদন বাড়ান। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি সাদেকা বানুকে।
সাদেকা বানু বলেন, ফিরে তাকানোর সময় নেই। এখন আরও এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন। দুটি পুকুর থেকে এখন ২২ টি পুকুরে মাছ চাষ করছি। এর মধ্যে ৩ টি পুকুরে গত বছর থেকে জি-থ্রি রুই মাছের পোনা উৎপাদন করছি। এতে অনেক সাফল্য এসেছে। এ পোনা মাছের চাহিদাও অনেক। সব বাদ দিয়ে বার্ষিক আয় প্রায় ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা। আগামীতে আরও কিছু পুকুরে এই জাতের মাছের পোনা উৎপাদন করবো।
তার স্বামী বেলাল হোসেনও অন্য পেশা ছেড়ে স্ত্রীকে সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন। পুকুরগুলোর দেখাশোনার কাজে সহায়তা করছেন বেলাল হোসেন। গত বছর থেকে পরীক্ষামূলক জি-৩ রুই এর পোনা উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্যের পর থেকে পোনা মাছ বিক্রেতারা তার পুকুরেই ঝুঁকছেন। রুই মাছের চেয়ে শতকরা প্রায় ৩০ ভাগ বেশি বৃদ্ধি পায় জি-৩ রুই এর। তাই, জি-৩ রুই পোনার ব্যাপক চাহিদা। এরই মধ্যে তার পুকুরের পাছের পোনা জেলা ছাড়িয়ে সারাদেশে সরবরাহ শুরু হয়েছে।
সরেজমিনে সাদেকা বানুর পুকুর পাড়ে গিয়ে কথা হয় পোনা মাছ নিতে আসা অনেকের সঙ্গে। তারা বলেন, এখান থেকে মাছের পোনা নিয়ে বিক্রি করে যা লাভ পাই, তা দিয়ে সংসার চলে।
তবে নারী উদ্যোক্তা সাদেকা বানুকে প্রথম থেকেই সহায়তা করে আসছে মহিলা বহুমুখী কেন্দ্র (এমবিএসকে) ও পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন। মাছের পোনা উদ্যোক্তা তৈরিতে নারীদের দিয়ে সমিতির মাধ্যমে কাজ করছে প্রতিষ্ঠান দুটি।
শ্যামলী মহিলা সমিতি নামে এমন একটি সংগঠনের সদস্য সাদেকা বানু। এ সমিতির সদস্য সংখ্যা এক হাজার ৯৪০ জন। সাদেকা বানু তাদের মধ্যে সফল নারী উদ্যোক্তা।
দিনাজপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবু সাঈদ জানান, ওয়ার্ল্ডফিশ উদ্ভাবিত ‘তৃতীয় প্রজন্ম’ বা জি-৩ রুই এর পোনা উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন নারী উদ্যোক্তা সাদেকা বানু। তার সাফল্যে এখন অনেকে অনুপ্রাণিত। আমরা সব রকম প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে তাকে সহযোগিতা করছি। অন্যরাও চাইলে এ সহায়তা পাবে। আমরা চাই নারীরা আরও এগিয়ে আসুক এ ধরনের কার্যক্রমে। এসব কাজে তাদের সাফল্য পাওয়ার বেশি সুযোগ থাকে।