বাসস
  ১৪ আগস্ট ২০২৫, ১৬:৪৮
আপডেট : ১৪ আগস্ট ২০২৫, ১৬:৫২

চানখাঁরপুল হত্যা মামলার এক সাক্ষীকে সুরক্ষা দেওয়ার নির্দেশ ট্রাইব্যুনালের

ঢাকা, ১৪ আগস্ট ২০২৫ (বাসস) : গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর চানখাঁরপুলে ছয়জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাক্ষ্য দেওয়া এক সাক্ষীকে সুরক্ষা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

নিরাপত্তা হুমকিতে পড়া ওই সাক্ষীর বিষয়ে প্রসিকিউশনের আবেদন শুনানির পর আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই আদেশ দেন। সেই সঙ্গে ওই সাক্ষীর নিরাপত্তা বিষয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘চানখাঁরপুলে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দুদিন আগে ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দিয়েছেন একজন সাক্ষী। ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেওয়ার দিনই তার বিরুদ্ধে অপ্রীতিকর-অসম্মানজনক ও নিরাপত্তা হুমকিস্বরূপ কার্যক্রম করেছেন তার পেশাগত প্রতিষ্ঠানের কিছু ব্যক্তি। ব্যানার টাঙানোসহ ওই সাক্ষীর বিরুদ্ধে মিছিলও করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত কিছু ছবি-ভিডিও প্রসিকিউশনকে দেওয়ার প্রেক্ষিতে সাক্ষী সুরক্ষার আবেদন করা হয়। সে আবেদনের ওপর আজ শুনানি হয়েছে এবং ওই  সাক্ষীর সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন ট্রাইব্যুনাল-১।’ 

তিনি আরো বলেন, ‘এছাড়া তার কাছে থাকা ছবি ও ভিডিও দেখে শুনানি শেষে সাক্ষীর সুরক্ষায় আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল-১। আদেশে ওই সাক্ষীর সুরক্ষা নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট থানার ওসি ও কর্মরত প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ওই প্রতিষ্ঠানসহ আশপাশের এলাকায় তাকে নিয়ে কোনো ধরনের অবমাননাকর পোস্টার-ব্যানার থাকলে দ্রুত তা অপসারণ করতে বলা হয়।’ 

প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে ওই প্রতিষ্ঠানের প্রধানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। কমিটিকে অতি দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন জমার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, গতকাল বুধবার চানখাঁরপুলে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তৃতীয় দিনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে।

গত বছরের ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখারপুল এলাকায় ছয়জনকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় এ বছরের ১৪ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আট আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করেন।

মামলায় যে আট আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করা হয়েছে তারা হলেন, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ্ আলম মো. আখতারুল ইসলাম, রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল, শাহবাগ থানার সাবেক পরিদর্শক মো. আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন হোসেন, ইমাজ হোসেন ও মো. নাসিরুল ইসলাম। আসামিদের মধ্যে প্রথম চারজন পলাতক। অন্য চারজন গ্রেপ্তার হয়েছেন।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তার দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে। এসব অপরাধের বিচার এখন অনুষ্ঠিত হচ্ছে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।