বাসস
  ০৯ আগস্ট ২০২৫, ১৮:০১

তারেক রহমান দেশের ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী : মির্জা ফখরুল

বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শনিবার ‘ড্যাব’ এর জাতীয় কাউন্সিল-২০২৫ এ বক্তব্য রাখেন । ছবি : বাসস

ঢাকা, ৯ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জিতলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানই হবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) এর কাউন্সিল অধিবেশনে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হওয়া তারেক রহমানকে ‘ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে সম্বোধন করে দেশের স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধানে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন আজ বক্তৃতা করেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

ঢাকার কাকরাইলে উইলন্স লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ মিলনায়তনে বিএনপির চিকিৎসক সংগঠন ‘ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ড্যাব’ এর জাতীয় কাউন্সিল-২০২৫ এর আয়োজন করা হয়। এ কাউন্সিলে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে তারেক রহমান শুধু আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নয়, আমাদের ভবিষ্যৎ নেতা, ভবিষ্যৎ কাণ্ডারী, ভবিষ্যতে আমাদের প্রধানমন্ত্রী আজকে এখানে বসে আছেন। আমি তার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, আমাদের এই নেতা আমাদের ভবিষ্যতের প্রধানমন্ত্রী, তার দৃষ্টিতে এটা আনতে চাই। তার স্ত্রীও (জুবাইদা রহমান) একজন প্রখ্যাত চিকিৎসক, এখান (ঢাকা) থেকে তিনি গ্রাজুয়েশন করেছেন, এই বিষয়টার দিকে তিনি অত্যন্ত বেশি গুরুত্ব দেবেন। কারণ ১৮ কোটি মানুষের স্বাস্থ্য সেবা এটা বড় বিশাল একটা দায়িত্ব বলে আমি মনে করি।’

এ সময়ে পুরো মিলনায়তন তুমুল করতালি দিয়ে তারেক রহমানকে অভিনন্দন জানাতে থাকে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ডা. ফরিদ আমার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ একজন চিকিৎসক আমার স্ত্রীর চিকিৎসক এবং আমি তার কাছে অত্যন্ত ঋণী। উনি আমাকে বলছিলেন, উনি যে বিষয়টার ওপর বিশেষজ্ঞ, বিলাত থেকে এসে এখানে তিনি ক্যান্সারের ওপরে যে কাজগুলো করতে চান, সেই কাজগুলো করতে পারছেন না। মেধাবী চিকিৎসক নিয়ে এখানে একটা সেন্টার গড়ে তুলতে চান, যেটা হবে ‘সেন্টার অব এক্সেলেন্স’।

ওষুধ নীতি প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ওষুধ নীতি বিশেষ করে, যারা ওষুধ তৈরি করেন, প্রস্তুতকারক, তারা দুদিন আগে আমার কাছে এসেছিলেন। তারা ‘গুরুতর সংকটে’ আছেন। বর্তমান সরকার প্রধানের যিনি বিশেষ সহকারী আছেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের, তিনি এমন কতগুলো ব্যবস্থা বা আইন দিচ্ছেন যাতে করে (ওষুধ) শিল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এই বিষয়গুলো আমাদের তুলে ধরতে হবে।

তিনি বলেন, ‘আজকে যে এখানে আমাদের ওষুধ শিল্প, বিশ্বের অন্যন্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছিল, বাইরে রপ্তানি করছিল, এখন তারা বলছে যে, আমাদেরকে কারখানা বন্ধ করে দিতে হবে, অর্থাৎ এই সরকারের নীতিগুলো এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মহাসচিব বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ৩১ দফা দিয়েছেন। এই জাতির সবচেয়ে  প্রয়োজনীয় দফাগুলো দিয়েছেন, এটাকে আমরা ‘ম্যাগনাকাটা’ বলি, সেখানে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কথা তিনি (তারেক রহমান) উল্লেখযোগ্যভাবে ব্যবহার করেছেন। 

একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার কথা বলতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমার অনেক বয়স হয়ে গেছে। আমরা দেখতে চাই, একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নয়, বাংলাদেশে শুধুমাত্র মানুষের ভোটের অধিকার নয়, বাংলাদেশের মানুষের স্বাস্থ্যের অধিকার, বেঁচে থাকার অধিকার, অন্নের অধিকার সব কিছু নিশ্চিত করতে হবে।’

ফ্যাসিস্ট বিরোধী আন্দোলন চলাকালে ‘নির্যাতিত চিকিৎসকদের অবদান তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট বিরোধী আন্দোলন চলার সময় আমাদের অনেক চিকিৎসককে তাদের কাজে বাধা দেয়া হয়েছে, আহতদের চিকিৎসা দেয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমি আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ, কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই, জাতি আপনাদের সম্মান জানাচ্ছে যে, আপনারা যারা ওই সময়ে ঝুঁকি নিয়ে আহতদের চিকিৎসা করেছেন, সেটা জাতি কোনোদিন ভুলবে না।’

এ সময় জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান এবং ড্যাবের কাউন্সিলের সফলতাও কামনা করেন বিএনপি মহাসচিব।

কাউন্সিল অধিবেশনের পর ড্যাবের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য বেলা ১টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা চলে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। এই নির্বাচনে ‘আজিজ-শাকুর’ ও ‘হারুন-শাকিল’ এই দুইটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।

‘আজিজ-শাকুর’ প্যানেলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন অধ্যাপক এ কে এম আজিজুল হক যিনি ২০০৫ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ড্যাবের সভাপতি ছিলেন। এই প্যানেলে মহাসচিব পদে অধ্যাপক আব্দুস শাকুর খান, সিনিয়র সহসভাপতি পদে ডা. সাইফ উদ্দিন নিসার আহমেদ তুষার, কোষাধ্যক্ষ পদে ডা. তৌহিদ উল ইসলাম এবং সিনিয়র যুগ্ম যুগ্ম মহাসচিব পদে ডা. আবু মো. আহসান ফিরোজ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

‘হারুন-শাকিল’ প্যানেলের নেতৃত্বে আছেন অধ্যাপক হারুন আল রশীদ, যিনি ২০১৯ সাল ধেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত ড্যাবের নেতৃত্বে ছিলেন। এই প্যানেলের মহাসচিব পদে ডা. জহিরুল ইসলাম শাকিল, সিনিয়র সহসভাপতি পদে ডা. আবুল কেনান, কোষাধ্যক্ষ পদে ডা. মো. মেহেদী হাসান এবং সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পদে ডা. একেএম খালেকুজ্জামান দিপু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই দুই প্যানেল ছাড়াও ডা. ওবায়দুল কবির সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

ড্যাব এর নির্বাচন উপলক্ষে ঢাকার কাকরাইলে উইলন্স লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ এলাকায় উৎসবমুখর অবস্থা বিরাজ করছে।

কাউন্সিল অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন ড্যাবের কাউন্সিল প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহ।

অধ্যাপক লুৎফুর রহমানের সঞ্চালনায় অধিবেশনে বক্তৃতা করেন কাউন্সিল প্রস্তুতি কমিটির সদস্য চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য বিজন কান্তি সরকার ও সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ড্যাবের সভাপতি পদে দুই প্রার্থী অধ্যাপক আজিজুল হক এবং অধ্যাপক হারুন আল রশীদ।

অনুষ্ঠানে ডিজিটাল স্যুভেনির উপস্থাপন করেন ডা. মোস্তফা আজিজ সুমন।