শিরোনাম
ঢাকা, ৯ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস): চীনের ইউনান প্রদেশের রাজধানী কুনমিংয়ে তিনদিনের সফর শেষে ২৩ সদস্যের বাংলাদেশী সাংবাদিক প্রতিনিধি দল স্বাস্থ্যখাতে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদারের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে।
শুক্রবার সফরের শেষদিনে দলটি কুনমিং টোংরেন হাসপাতাল ও কুনমিং আই হাসপাতালসহ কয়েকটি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেন। সেখানে তারা আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা ও উচ্চমানের রোগী সেবার চিত্র প্রত্যক্ষ করেন।
আজ এক বার্তায় এ কথা জানা গেছে।
এদিকে এক ঘন্টার এক প্রেজেনটেশনে সাংবাদিকদের কুনমিং টোংরেন হাসপাতাল সম্পর্কে জানানো হয়, এটি লেভেল-৩, বহুমুখী বিশেষায়িত বেসরকারি সাধারণ হাসপাতাল হিসেবে কাজ করে। এখানে ক্লিনিক্যাল চিকিৎসা, রোগ প্রতিরোধ, পুনর্বাসন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা, মেডিকেল শিক্ষা ও আন্তর্জাতিক একাডেমিক বিনিময়সহ বিস্তৃত সেবা দেওয়া হয়।
এছাড়া এ প্রেজেনটেশনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কীভাবে গুরুতর ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বাংলাদেশী রোগীদের চিকিৎসা দিয়েছে তাও তুলে ধরা হয়। প্রতিনিধি দলকে হাসপাতালের আন্তর্জাতিক স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। এই সেন্টারে তীব্র ও দীর্ঘমেয়াদি মেরুদণ্ডের আঘাতের জন্য আধুনিক অস্ত্রোপচার, নিবিড় পুনর্বাসন কর্মসূচি এবং স্নায়ু পুনর্গঠন বিষয়ক গবেষণা চালানো হয়।
হাসপাতালের ভাইস প্রেসিডেন্ট শেন লিং বলেন, আমাদের হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা সুবিধার ব্যবস্থা এবং আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজন করেছি।
তিনি পুরো সময় সফরকারী সাংবাদিক দলের সঙ্গে ছিলেন। এ সময়ে শেন লিং হাসপাতালের আধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তি, মানবিক সেবা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বিশেষ সুবিধাগুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন।
তিনি আরো জানান, এখানে শুধু শতাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকই সেবা দিচ্ছেন না, ৩৭টি ক্লিনিক্যাল বিভাগও রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হল, কার্ডিওলজি, নেফ্রোলজি ও এন্ডোক্রাইনোলজি, রেসপিরেটরি মেডিসিন, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি ও এন্ডোস্কপি সেন্টার, অনকোলজি, নিউরোসার্জারি, জেনারেল সার্জারি, অর্থোপেডিকস, ইউরোলজি, গাইনোকোলজি এবং বিশেষ হেলথ ম্যানেজমেন্ট সেন্টার।
এছাড়া, হাসপাতালে আন্তর্জাতিক মানের মেডিকেল ইমেজিং, আল্ট্রাসাউন্ড ডায়াগনসিস ও ল্যাবরেটরি সরঞ্জাম রয়েছে, যা সঠিক রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসায় সহায়তা করে।
শেন লিং বলেন, বিদেশি রোগীদের জন্য এখানে কার্যকর ও নির্ভুল চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু রয়েছে, যেখানে অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ দলের মাধ্যমে চিকিৎসার মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। এই ব্যাপক সক্ষমতা আন্তর্জাতিক রোগী, বিশেষ করে বাংলাদেশীদের চিকিৎসা নিতে আসার ভিত তৈরি করেছে।
তিনি জানান, কুনমিং টংরেন হাসপাতালের আন্তর্জাতিক মেডিকেল বিভাগ বিদেশি রোগীদের সফলভাবে উচ্চমানের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। ইতোমধ্যে জটিল জন্মগত হৃদরোগ, অর্থোপেডিক সার্জারিসহ অভ্যন্তরীণ ঔষধ প্রতিরোধী রোগের চিকিৎসায় দারুণ অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে।
লিং বলেন, কুনমিং টংরেন হাসপাতাল দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পের নির্মাণকাজ ত্বরান্বিত করছে যেখানে একটি নতুন আন্তর্জাতিক মেডিকেল বহির্বিভাগ, ইনপেশেন্ট এবং অনকোলজি চিকিৎসা কেন্দ্র রয়েছে, যা আন্তর্জাতিক রোগীদের জন্য আরও উচ্চমানের এবং সন্তোষজনক চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করতে সক্ষম হবে।
বাংলাদেশী প্রতিনিধি দল কুনমিং আই হাসপাতালও পরিদর্শন করেন। সেখানে তারা লেজার সার্জারি, উন্নত চক্ষু রোগ নির্ণয় প্রযুক্তি ও সমন্বিত চক্ষু সেবার চিত্র দেখেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সফররতদের জানান, বাংলাদেশী রোগীদের জন্য চিকিৎসা প্রক্রিয়া সহজ করার উদ্যোগ চলছে। তার মধ্যে রয়েছে, যোগাযোগ ও ভর্তি প্রক্রিয়া সহজ এবং আন্তর্জাতিক রোগী সহায়ক সেবাগুলো উন্নত করা।
চীনা সরকারের আমন্ত্রণে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদারের নেতৃত্বে দেশটি সফর যায় সাংবাদিক প্রতিনিধিদল। এই সফর চীনের স্বাস্থ্য অবকাঠামো সরাসরি দেখার সুযোগের পাশাপাশি দু’দেশের চিকিৎসা সহযোগিতা জোরদারের পথও উন্মুক্ত করেছে।
কুনমিং আই হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ঝাং মিন সাংবাদিকদের জানান, বেসরকারি হাসপাতাল হলেও আমাদের সেবা মান সরকারি হাসপাতালের সমান। প্রতিবছর ভারত ও রাশিয়াসহ বিদেশি শত শত রোগী এখানে আসেন। বাংলাদেশী চক্ষু রোগীদেরও সাশ্রয়ী খরচে চিকিৎসা দিতে আমরা প্রস্তুত।
তিনি আরো বলেন, ২৮ বছরের অভিজ্ঞতায় এই হাসপাতালের দক্ষ চিকিৎসক ও কর্মীরা অত্যাধুনিক সরঞ্জামে সেবা দিচ্ছেন। ইংরেজি ভাষায় দক্ষ চিকিৎসকদের কারণে বাংলাদেশি রোগীদের ভাষাগত সমস্যা হবে না। আর রোগীরা যদি ইমেইলে চোখের রোগের বিবরণ পাঠান তাহলেও দ্রুত সাড়া দেওয়া হবে।
বাংলাদেশী সাংবাদিকরা চীনের শীর্ষ ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ওয়ালভ্যাক্স বায়োটেকনোলজি কোম্পানি লিমিটেডও পরিদর্শন করেন। এটি নিরাপদ, কার্যকর ও উচ্চমানের টিকা উৎপাদন করে। যা দেশি-বিদেশি বাজারে সরবরাহ করা হয় এবং বৈশ্বিক টিকাদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী উদযাপনের অংশ হিসেবে চীন সরকার ২৩ সদস্যের সাংবাদিক প্রতিনিধিদলকে কুনমিং সফরের আমন্ত্রণ জানায়।
সফরের শেষ দিনে প্রতিনিধি দল অ্যান্টি-জাপানিজ ওয়ার মেমোরিয়াল হল ও ইউনান এথনিক ভিলেজ পরিদর্শন করে। শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং ও কুনমিংস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট হোটেলে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সেখানে উপ প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ খালেদ বাংলাদেশী রোগীদের চীনে চিকিৎসা সহজ করার উদ্যোগ নিয়ে কথা বলেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার প্রতিনিধি দল কুনমিং মেডিকেল ইউনিভার্সিটির প্রথম সংযুক্ত হাসপাতাল পরিদর্শন করে প্রাদেশিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও স্থানীয় সরকারি হাসপাতালের প্রধানদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
একইদিনে তারা কুনমিং আন্তর্জাতিক ফুলের বাজারও পরিদর্শন করেন।