বাসস
  ২০ জুন ২০২৫, ০৯:৫৫

বরফাবৃত পৃথিবীতে ছোট ছোট জলাশয়েই বেঁচে ছিল প্রাণ: নতুন গবেষণা

ঢাকা, ২০ জুন, ২০২৫ (বাসস) : অ্যান্টার্কটিকার বরফ গলে তৈরি হওয়া ছোট ছোট জলাশয়ে অসাধারণ বৈচিত্র্যের এককোষী জীব পাওয়া গেছে। এর ভিত্তিতে গবেষকরা ধারণা করছেন, ‘স্নোবল আর্থ’ যুগে এ ধরনের পুকুর বা জলাশয়ের আশ্রয়েই প্রাণ বেঁচে ছিল। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা এ তথ্য জানান।

পৃথিবী সবসময় এতটা বাসযোগ্য ছিল না। ইতিহাসে কয়েকবার এমন সময় এসেছে, যখন পৃথিবীর প্রায় পুরো পৃষ্ঠদেশই বরফে ঢেকে গিয়েছিল—যাকে বলা হয় ‘স্নোবল আর্থ’ বা বরফাবৃত পৃথিবী।

প্রাণের অস্তিত্বের জন্য তরল পানি সবচেয়ে জরুরি উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়। তাই প্রশ্ন উঠে—এই ভয়াবহ বরফযুগে কীভাবে কোনো কিছু বেঁচে থাকতে পারল?

৬৩৫ থেকে ৭২০ মিলিয়ন বছর আগেকার ক্রায়োজেনিয়ান যুগে গড় তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সে সময় বিষুব রেখার কাছেও জলবায়ু ছিল আজকের অ্যান্টার্কটিকার মতো। তবু এমন চরম প্রতিকূল পরিবেশেও প্রাণ কোনোভাবে টিকে ছিল এবং বিবর্তিত হচ্ছিল।

প্যারিস থেকে এএফপি জানায়, এই গবেষণার প্রধান লেখক ফাতিমা হুসেইন, যিনি ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির একজন গবেষক, এএফপিকে বলেন, 'ফসিল রেকর্ডে ক্রায়োজেনিয়ান যুগের আগে এবং পরে জটিল জীবের উপস্থিতির প্রমাণ আছে।'

তিনি আরও বলেন, 'প্রাণ কীভাবে টিকে ছিল, তা নিয়ে অনেকগুলো তত্ত্ব রয়েছে।' তত্ত্বগুলো বলছে—প্রাণ হয়তো আশ্রয় নিয়েছিল: খোলা সমুদ্রের ছোট জায়গায়, গভীর সমুদ্রের হাইড্রোথারমাল ভেন্টে, বরফের নিচে, কিংবা বরফ গলে গঠিত ক্ষুদ্র পুকুরে।

এই শেষোক্ত পুকুরগুলোতেই হয়তো ইউক্যারিওটস অর্থাৎ জটিল কোষবিশিষ্ট প্রাণী আশ্রয় পেয়েছিল, যারা পরে বহু কোষবিশিষ্ট জীব হয়ে বিবর্তিত হয়ে মানুষের মতো প্রাণীতে রূপ নেয়।

আজও অ্যান্টার্কটিকার বরফচাপা অঞ্চলের কিনারায় এমন বরফগলা পুকুর দেখা যায়। ২০১৮ সালে নিউজিল্যান্ডের এক গবেষণা দল পূর্ব অ্যান্টার্কটিকার ম্যাকমার্ডো বরফচাদরে কয়েকটি ক্ষুদ্র জলাশয় পরিদর্শন করে।

এই পুকুরগুলো মাত্র কয়েক মিটার প্রশস্ত এবং এক মিটারেরও কম গভীর। নিচে এক ধরনের জীবাণুযুক্ত স্যাঁতসেঁতে স্তর বা ম্যাট পাওয়া যায়।

'এই ম্যাটগুলো কয়েক সেন্টিমিটার পুরু, রঙিন এবং স্পষ্ট স্তরযুক্ত,' বলেন হুসেইন।

এই স্তরগুলোতে ছিল সায়ানোব্যাকটেরিয়া, যা এককোষী এবং চরম পরিবেশেও বেঁচে থাকতে পারে।

গবেষকরা আরও বলেন, সেখানে শৈবাল ও ক্ষুদ্র প্রাণীর মতো ইউক্যারিওটস থাকার ইঙ্গিতও মিলেছে।

এই জলাশয়গুলো একে অপরের থেকে ভিন্ন ছিল—বিশেষ করে লবণাক্ততার মাত্রার কারণে।

'আমরা প্রতিটি পুকুরেই ইউক্যারিওটসের ভিন্ন গোষ্ঠী পেয়েছি,' বলেন হুসেইন। 'এগুলো দেখায় যে, এমন বিশেষ পরিবেশগুলো খুব কাছাকাছি অবস্থানেও বৈচিত্র্যময় প্রাণ ধারণে সক্ষম।'

এই গবেষণার ফলাফল ভবিষ্যতে ভিনগ্রহে প্রাণ খোঁজার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

হুসেইন বলেন, 'পৃথিবীর এই ধরনের বিশেষ পরিবেশে প্রাণ কীভাবে টিকে থাকতে পারে, তা বোঝার মাধ্যমে সৌরজগতের অন্যান্য বরফঢাকা জগতে (যেমন শনি গ্রহের উপগ্রহ এনসেলাডাস এবং বৃহস্পতির ইউরোপা) সম্ভাব্য প্রাণের পরিবেশ কেমন হতে পারে, তা বুঝতে সাহায্য করবে।'

এই দুটি উপগ্রহ বরফে ঢাকা হলেও, বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন বরফের নিচে তরল পানি রয়েছে এবং সেখানে সহজ ধরনের প্রাণ থাকতে পারে। এসব অনুসন্ধানে সহায়তার জন্য বেশ কয়েকটি মহাকাশ মিশন ইতোমধ্যে চালু হয়েছে।