বাসস
  ১৮ জুন ২০২৫, ১৮:৩৬

নোয়াখালীতে জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় দিনব্যাপী কর্মশালা 

জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় দিনব্যাপী কর্মশালা। ছবি : বাসস 

নোয়াখালী, ১৮ জুন, ২০২৫ (বাসস) : জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় দিনব্যাপী কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। চর ক্লার্ক ইউনিয়ন জলবায়ু অ্যাকশন ফোরামের সদস্যদের নিয়ে উপজেলার চর ক্লার্ক ইউনিয়নে বুধবার সকাল ১০টা থেকে উপজেলা পরিষদের হল রুমে এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।

ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইন্সটিটিউট (ডব্লিউআরআই)-এর সহযোগিতায়, পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশন নেটওয়ার্ক --প্রান-এর উদ্যোগে  ‘বাংলাদেশে স্থানীয় নেতৃত্বাধীন জলবায়ু কর্মপরিকল্পনা উন্নত করতে পার্টনারশিপ গঠন’ প্রকল্পের অধীনে এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

প্রকল্পের পরিকল্পনা, কার্যক্রম, উদ্দেশ্য, জলবায়ু অর্থায়ন এবং অভিযোজন পরিকল্পনা সম্পর্কে উপজেলার সরকারি কর্মকর্তাদের অবহিত করা এবং অভিজ্ঞতা বিনিময়ের জন্য এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়।

কর্মশালায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাবেয়া আসফার সায়মা সভাপতিত্ব করেন। এতে আরো উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুন নবী, উপজেলা প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হারুন অর রশিদ, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন, উপজেলা বন কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন, উপজেলা মৎস্য বিভাগ থেকে মেরিন ফিশারিজ অফিসার তাপস কুমার শীল, চর ক্লার্ক ইউনিয়নের জলবায়ু অ্যাকশন ফোরামের সকল সদস্যবৃন্দ এবং প্রানের কর্মীবৃন্দ। কর্মশালায় ৯ জন নারী ও ২৩ জন পুরুষসহ মোট ৩২ জন অংশগ্রহণ করেন। প্রকল্প ব্যবস্থাপক জাহিদ মোহাম্মদ ইমরান অংশগ্রহণকারীদের প্রাণের কার্যক্রম ও কর্মশালার উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবহিত করেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাবেয়া আসফার সায়মা উপকূলীয় ঝুঁকিপূর্ণ সুবর্ণচর উপজেলার দু’টি ইউনিয়নে সরাসরি মাঠ পর্যায়ে অংশগ্রহণমূলক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন, এ ধরনের কর্মশালায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে স্থানীয় জনগণ তাদের নিজস্ব সমস্যা চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছে এবং সেই সমস্যার সমাধানে সরকারি, বেসরকারি ও স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন স্তরের সঙ্গে এক যৌথ অংশীদারিত্ব গড়ে তুলেছে-যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।’

ফোরামের সদস্যদের সুপেয় পানির সংকট প্রসঙ্গে উপজেলা প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক বলেছেন, ‘আমাদের রিফাইন্ড পানি সংরক্ষণ করতে হবে। রিফাইন্ড পানি বলতে আমরা বৃষ্টির পানিকে বুঝি। পানির ব্যাংক ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করতে পারি। উৎপাদন কাজে কূপ, পুকুর, দিঘী খনন করে পানি সংরক্ষণ করা হলে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল হলেও কিছুটা সহায়ক হবে। এই বছর ফসলের সেচ কাজে আমরা ভূ-গর্ভস্থ থেকে প্রচুর পানি তুলেছি, ফসলও ভালো হয়েছে। কিন্তু অতিবৃষ্টির কারণে আবার আমাদের বেশিরভাগ ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। তাই আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও জন সচেতনতার মাধ্যমে জলবায়ু সংকট মোকাবেলা সম্ভব হবে।’

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুন নবী তার মন্ত্রণালয়ের প্রদত্ত সেবাসমূহ সম্পর্কে আলোকপাত করেন এবং ইউনিয়নের অসহায়, দুঃস্থ, স্বামী পরিত্যক্তা, প্রতিবন্ধী সকলের জন্য সেবা প্রদান ও গ্রহণের প্রতি আহ্বান জানান।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন বলেছেন, ‘সরকারের সীমিত সম্পদ দিয়ে সব ধরনের সমস্যার সমাধান করা বাস্তবে কঠিন। তবে বেসরকারি পর্যায়ের অংশগ্রহণ এবং স্থানীয় জনগণের সক্রিয় উপস্থিতির মাধ্যমে তারা নিজেরাই যখন সমস্যাগুলো চিহ্নিত ও উপস্থাপনের সুযোগ পান, সেটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী উদ্যোগ।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হারুন অর রশিদ নোয়াখালী জেলার মধ্যে সুবর্ণচরে সবচেয়ে বেশি কৃষি উৎপাদন হয় উল্লেখ করে বলেছেন, ‘এই উপজেলার কৃষি জমিতে কীটনাশক ভাসে। কৃষকরা কীটনাশক ব্যবহারের সময় সচেতনতা অবলম্বন না করায় অনেক কৃষক মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। আমরা কৃষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য এলাকা ভিত্তিক কৃষি স্কুলও চালু করেছি।’