শিরোনাম
সিলেট, ৩ জুন, ২০২৫ (বাসস) : ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে সিলেটে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর চার পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বিশেষ করে জকিগঞ্জ উপজেলায় কুশিয়ারা নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে অন্তত ৫০টি গ্রাম।
জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত চার উপজেলায় ১১ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠেছেন। খোলা হয়েছে কন্ট্রোলরুম। ইউনিয়ন পর্যায়ে মেডিকেল টিম গঠন করে বন্যার্ত মানুষের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রে জানিয়েছে, আজ সন্ধ্যা ৬টায় সিলেটের সুরমার নদীর পানি বিপৎসীমার এক মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় ধীর গতিতে পানি বাড়ছে। এই পয়েন্টে একদিনে পানি বেড়েছে ৯ সেন্টিমিটার। সিলেট পয়েন্টে পানি ৯ সেন্টিমিটার বাড়লেও বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
কুশিয়ারা নদীর জকিগঞ্জ উপজেলার অমলশীদ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার প্রায় দুই মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টায় ৮ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। বিয়ানীবাজার উপজেলার শেওলা পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৮ সেন্টিমিটার ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
জানা গেছে, বন্যার পানির স্রোতের তোড়ে জকিগঞ্জ উপজেলায় কুশিয়ারা নদীর তিনটি স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে প্রবল স্রোতে পানি লোকালয়ে ঢুকে প্লাবিত হয়েছে অন্তত ৫০টি গ্রাম। বন্যার পানি বাড়তে থাকায় নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
নদীর তীররক্ষা বাঁধ উপচে জকিগঞ্জ পৌর শহরে পানি প্রবেশ করেছে। বন্যার পানির স্রোতের তোড়ে জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের রারাই গ্রামে প্রায় ১০০ ফুট, বাখরশাল গ্রামে ৫০ ফুটও খলাছড়া ইউনিয়নের লোহারমহল এলাকায় ৪০ ফুট বাঁধ ভেঙে যায়।
এছাড়া আরও ২৫ থেকে ৩০টি স্থানে বাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করছে।
জকিগঞ্জ পৌরসভা, সদর ইউনিয়ন ও খলাছড়া ইউনিয়নের অন্তত ৫০টি গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এ সব এলাকার মানুষ প্রয়োজনীয় মালামালসহ নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। আতঙ্কিত অনেকে আশ্রয়কেন্দ্রের ছুটে যাচ্ছেন।
জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘প্রশাসন সার্বক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। বন্যা কবলিত মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে কাজ চলছে। ইতোমধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড, সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, ‘রোববার সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দেয়। সোমবার একাধিক স্থানে বাঁধ ভেঙে গেছে।’
তিনি আরো বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য আমাদের টিম আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে, আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামী ২-৩ দিন ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।
প্রশাসন ও স্থানীয়রা একযোগে পরিস্থিতি মোকাবিলায় কাজ করে যাচ্ছেন।