বাসস
  ০১ জুন ২০২৫, ১৭:৫৬

ধলেশ্বরী-শীতলক্ষ্যা দখলকারী শাহ সিমেন্টকে কালো তালিকাভুক্তর দাবি টিআইবি’র

ঢাকা, ১ জুন, ২০২৫ (বাসস) : ধলেশ্বরী ও শীতলক্ষ্যা নদীর মোহনায় পরিবেশ সংরক্ষণ ও নদী রক্ষা সংক্রান্ত আইন লঙ্ঘন করে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণ এবং নির্বিকারে নদী দখলের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

রোববার এক বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি’র পক্ষ থেকে ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, অবিলম্বে প্রতিষ্ঠানটিকে দৃষ্টান্তমূলক জবাবদিহির প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে কালো তালিকাভুক্ত করে নদী দুটিকে দখলমুক্ত করতে হবে।

বিবৃতিতে বলা হয়, মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার মীরেরসরাই মৌজায় শাহ সিমেন্ট কোম্পানি প্রায় ২৪ একর নদীর জমি বালু ও মাটি ফেলে ভরাট করেছে। ফলে নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে এবং নদীর শ্রেণি পরিবর্তন হয়েছে। দখল করা জমিতে গড়ে ওঠা স্থাপনা ধলেশ্বরী ও শীতলক্ষ্যার পানিপ্রবাহে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে। এছাড়া, কারখানার তরল ও কঠিন বর্জ্য নদীতে ফেলার ফলে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ক্লিংকার ধুলো বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে নদীতে গিয়ে মিশে পরিবেশ দূষণ করছে।

টিআইবি’র বিবৃতিতে বলা হয়, মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসন এবং জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন (এনআরসিসি) ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২৩ সালে প্রতিষ্ঠানটিকে “দখলদার” হিসেবে চিহ্নিত করলেও এখন পর্যন্ত নদী রক্ষায় সরকার কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। শাহ সিমেন্ট শুধু জবাবদিহিতা ছাড়াই স্বাধীনভাবে নদীখেকো ব্যবসায় লিপ্ত রয়েছে তাই নয়, জনগণের অর্থে পরিচালিত বিভিন্ন প্রকল্পে নির্বিকারভাবে ঠিকাদার হিসেবে মুনাফা করে যাচ্ছে।
টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান শাহ সিমেন্ট কর্তৃক নদী দখলের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, “নদী দখল করে দুটি নদী ধ্বংসের এই কার্যক্রম কোনো যুক্তিতেই মেনে নেওয়ার সুযোগ নেই। এ ধরনের কার্যক্রম কেবল নদীর নাব্যতা ধ্বংস করছে না, বরং দেশের পরিবেশগত ভারসাম্য ও নদী-নির্ভর জনজীবনকেও চরম ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। নদীর স্বাভাবিক গঠন নষ্ট করে বন্যা, নদীভাঙন, পানি সংকট ও জলপ্রবাহজনিত সমস্যা বহুগুণে বাড়াচ্ছে। যার প্রভাব দেশের অর্থনীতি ও মানুষের জীবনমানের ওপর পড়ছে। ২০১৯ সালে হাইকোর্টের যুগান্তকারী রায়ে বাংলাদেশের মধ্যে এবং বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত সব নদ-নদীকে আইনি সত্তা (রিসটিক পারসন / লিগ্যাল পারসন) বা জীবন্ত সত্তা (লিভিং এনটিটি) হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এর অর্থ হলো, নদী হত্যা যে কোনো ব্যক্তি হত্যার শামিল। এমন বাস্তবতায়ও এই নদীখেকো প্রতিষ্ঠানটি বালু ও মাটি ফেলে মোহনায় জমি ভরাট করছে। যা স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত করে নদীকেই মেরে ফেলছে।

তিনি বলেন, “আমরা মনে করি, নদীখেকো এই প্রতিষ্ঠান কোনোভাবেই রাষ্ট্র তথা সরকারের সঙ্গে কোনো ব্যবসায়িক সম্পর্ক করার অধিকার রাখেনা। শাহ সিমেন্টকে দৃষ্টান্তমূলক জবাবদিহির আওতায় আনার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে সব ধরনের সরকারি কার্যাদেশ, লাইসেন্স ও আর্থিক প্রণোদনা থেকে বঞ্চিত রাখতে অবিলম্বে কালো তালিকাভুক্তির আহ্বান জানাই আমরা।”

ড. জামান শাহ সিমেন্টের সঙ্গে সকল ব্যবসায়িক সম্পর্ক বাতিল করে এ প্রতিষ্ঠানকে ব্যবসায়িক বয়কটের দৃষ্টান্ত স্থাপনের আহ্বান জানিয়েছেন দেশের ব্যবসায়ীদের প্রতি। তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে যে “নতুন বাংলাদেশ”-এর স্বপ্ন সৃষ্টি হয়েছে, সেখানে এই দখলদারিত্বের কোনো স্থান নেই।’