শিরোনাম
বান্দরবান, ৩০ মে, ২০২৫ (বাসস): পার্বত্য জেলা বান্দরবানের ৭ উপজেলায় পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করা লোকজনকে পাহাড়ধসে মৃত্যুঝুঁকি থেকে রক্ষায় সরিয়ে নিতে প্রশাসন ২২০টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছে।
বান্দরবানে বিভিন্নস্থানে অসংখ্য পরিবার পাহাড়ের পাদদেশে পাহাড় কেটে গড়ে ওঠা এসব ঘরে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস করছে।
বান্দরবান সদর উপজেলার কালাঘাটা, কাসেম পাড়া, ইসলামপুর, হাফেজঘোনা, বাসস্টেশন এলাকায় গেলে দেখা মিলবে এ চিত্র। দুর্যোগ এবং মৃত্যুঝুঁকি এড়াতে তাদের নিরাপদ জায়গায় চলে যাওয়ার জন্য শুক্রবার সকাল থেকে জেলা, উপজেলা ও পৌর প্রশাসন মাইকিং করে লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বলছেন।
এদিকে গত দুদিনের ভারী বর্ষণে বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এ অবস্থায় পাহাড়ি টিলার ঢালুতে থাকা মানুষজনকে নিরাপদে রাখতে প্রশাসন এসব অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছে।
জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রশাসন থেকে ২২০টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বান্দরবান সদরে ৪৬টি, রুমা উপজেলায় ২৮টি, রোয়াংছড়ি উপজেলায় ১৯টি, থানচি উপজেলায় ১৫টি, লামা উপজেলায় ৫৫টি, আলীকদম উপজেলায় ১৫টি এবং নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ৪২টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে।
জেলার ইসলামপুরে পাহাড়ের পাদদেশে থাকা মো. সাইফুল আলম জানান, সকাল থেকে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। এখানে থাকা যাবে না। নিরাপদ স্থানে চলে যাবো।
কাসেম পাড়ার বাসিন্দা জামাল বলেন, দু-দিন ধরে বৃষ্টি। ঘর থেকে বের হতে পারছি না। পাহাড়ের ওপরে যারা আছে তারা খুবই ভয়ে আছে। বৃষ্টিতে কখন যে পাহাড় ধসে পড়ে তাদের বাড়ির উপর।
এদিকে জেলা আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সনাতন কুমার মন্ডল জানিয়েছেন, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বান্দরবানে গত বৃহস্পতিবার থেকে ভারী বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ২৯ মে রাত ৯টা থেকে ৩০ মে সকাল ৯টা পর্যন্ত বান্দরবানে ১৭৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ জেলায় আগামী ৩১ মে পর্যন্ত বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। একইভাবে প্রতিটি উপজেলায় জরুরি সেবা খোলা হয়েছে। জরুরি যোগাযোগের জন্য একটি মোবাইল নম্বর (০১৩০৯৭৪৪৯২৩) দেওয়া হয়েছে। অতিভারী বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি,বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলায় অতিবৃষ্টির কারণে ভূমি ধসের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানায় আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এদিকে জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি জানান, ঝুঁকিপূর্ণ বসতি বাড়ছে । সেই অনুসারে গত বছর বন্যায় প্লাবিত এলাকা, ভূমি ধসের ঘটনা যেখানে ঘটেছিল সেগুলো এবং পাহাড় কেটে যে স্থাপনাগুলো তৈরি করা হয়েছে সেগুলোকে ফোকাস করে তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।
এছাড়াও পরিস্থিতি মোকাবেলায় অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। গত ১৭ মে দুর্যোগকালীন জরুরি সেবা কমিটি গঠন করা হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সবাই প্রস্তুত আছেন।
প্রশাসনের তথ্য মতে, ২০০৬ সালে জেলা সদরে ৩ জন, ২০০৯ সালে লামা উপজেলায় শিশুসহ ১০জন, ২০১০ সালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় শিশুসহ ১০ জন, ২০১১ সালে রোয়াংছড়ি উপজেলায় ২ জন, ২০১২ সালে লামা ফাইতং ইউনিয়নে ২৮ জন ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ১০ জন, ২০১৩ সালে পৌর শহর কালাঘাটায় ২ জন, ২০১৪ সালে সদরে ৪জন, ২০১৫ সালে লামায় ৬ জন ও সদরের বনরূপা পাড়ায় ৩ জন, ২০১৭ সালের সদরের কালাঘাটায় ৭ জন ও রুমা সড়কে ৫ জন, ২০১৮ সালে নাইক্ষ্যংছড়িতে ৩ জন ও লামায় ৪ জন, ২০১৯ সালে লামায় ১ জন, ২০২০ সালে আলীকদমের মিরিঞ্জা এলাকায় ১ জন, ২০২১ সালে ছাইঙ্গ্যা ঝিরিতে এক পরিবারের ৩ জন, ২০২৩ সালে মা-মেয়ে ২জন ও সর্বশেষ চলতি বছরে নাইক্ষ্যংছড়িতে পাহাড় ধসে নিহত হন ১ জন।