শিরোনাম
প্রতিবেদন: আল-আমিন শাহরিয়ার
ভোলা, ৩০ মে ২০২৫ (বাসস): বঙ্গপোসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা ভোলায় নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তলিয়ে গেছে উপকূলের নিম্নাঞ্চলের কমপক্ষে ২৫টি গ্রাম। এতে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ি। জেলা প্রশাসন এ পর্যন্ত দেড় হাজার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের তালিকা তৈরি করে রিলিফ বিতরণ শুরু করেছে।
ভোলা জেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষ জানায়, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের প্রকৃত তালিকা প্রণয়নের কাজ চলছে। উপজেলা প্রশাসনগুলো এ কাজে নিয়োজিত আছে। আজ শুক্রবার সকাল থেকেই সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত চরাঞ্চল ঘুরে দুর্যোগের শিকার এসব মানুষের আনুমানিক সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, উপকূলীয় অঞ্চলে মেঘনার পানি বিপদসীমার ওপরে প্রবাহিত হওয়ার ফলে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। জেলার মনপুরা, তজুমদ্দিন, বোরহানউদ্দিন ও দৌলতখান উপজেলার কয়েকটি পয়েন্টে বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে অন্তত ২৫ টি গ্রাম। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ৩০ হাজার মানুষ। পানিতে ভেসে গেছে অসংখ্য পুকুরের মাছ। জোয়ারে ভেসে নিখোঁজ হয়েছে শতাধিক গবাদি পশু।
প্রশাসনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী মনপুরার কলাতলী, ঢালচর ও সাকুচিয়ার চরে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে সহস্রাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। চর ফ্যাশনের ঢালচর, কুকরী-মুকরী ও চর পাতিলায় জোয়ারের পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে বহু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে বহু মানুষ, গবাদি পশু ও বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদিকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে দুই দিন ধরে বন্ধ রয়েছে আভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার নৌ-রুটের লঞ্চ চলাচল। এদিকে জেলার বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন গ্রাহকরা।
জেলা আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান বাসসকে বলেন, ঝড়ের সার্বিক পরিস্থিতি ও ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ঝড় মোকাবেলায় জেলায় ৮৬৯টি আশ্রয়ণ কেন্দ্র ও ১৪টি মাটির কেল্লায় বহু মানুষ ও গবাদি পশু আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়াও সিপিপি ও রেডক্রিসেন্টসহ ১৩ হাজার ৮০০ স্বেচ্ছাসেবী ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে কাজ করছেন। দুর্যোগপূর্ণ এলাকাগুলোতে ৯৭ টি মেডিকেল টিম স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে।
তিনি বলেন, ঝড় মোকাবেলায় দুর্যোগের আগে, দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ পরবর্তী মোট তিনধাপের প্রস্তুতি নেয়া আছে। মেডিকেল টিম, শুকনো খাবার ও চাল মজুদ রাখার পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
এছাড়াও বিচ্ছিন্ন উপকূলীয় দ্বীপে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর অনেককেই নিরাপদে আনা হয়েছে। মজুদ রাখা ২শ' ৯১ মেট্রিক টন চাল ও দেড় হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ও ৫ লাখ টাকার শিশু খাদ্য বিতরণ আজ থেকে শুরু হয়েছে।
পুলিশ, কোস্টগার্ড, নৌ পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসসহ সরকারি দপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ও মানুষের তালিকা প্রণয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে এবং ঝড় মোকাবেলায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতি রয়েছে। তবে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রণয়ন করতে একটু সময় লাগবে বলেও জানান ভোলার জেলা প্রশাসক।