বাসস
  ২৯ মে ২০২৫, ১৯:২৩

আসন্ন বাজেট হবে বাস্তবভিত্তিক, বাস্তবায়নযোগ্য ও সময়োপযোগী : অর্থ উপদেষ্টা

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। ফাইল ছবি

ঢাকা, ২৯ মে, ২০২৫ (বাসস) : অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট হবে সময়োপযোগী, বাস্তবভিত্তিক এবং বাস্তবায়নযোগ্য। কারণ অন্তর্বর্তী সরকার বাজেট প্রণয়নের সময় সামষ্টিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমি এই বাজেটকে (২০২৫-২৬) ছোট বলবো না, তবে এটি অবশ্যই বাস্তবায়নযোগ্য এবং সময়োপযোগী হবে। এটি সময়োপযোগী হবে কারণ এতে মূল্যস্ফীতি, বাণিজ্য, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও রাজস্ব আহরণ এসব বিষয় গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয়েছে। আমরা সব দিক বিবেচনা করেই বাস্তবভিত্তিক বাজেট তৈরি করছি।

অর্থ উপদেষ্টা বাসস’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাজেটের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো তুলে ধরেন। উল্লেখ্য, এটি হবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন নোবেল বিজয়ী প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বর্তমানে জাতীয় সংসদ কার্যকর না থাকায় অর্থ উপদেষ্টা টেলিভিশনে ভাষণের মাধ্যমে বাজেট উপস্থাপন করবেন। যা পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে অনুমোদিত হবে। 

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার হবে আনুমানিক ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। যা চলতি বছরের মূল বাজেটের তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম।

২০০৭-০৮ অর্থবছরের পর এই প্রথম কোনো অন্তর্বর্তী সরকার টেলিভিশন ভাষণে বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে। তৎকালীন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম টেলিভিশন ভাষণের মাধ্যমে পর পর দু’টি বাজেট উপস্থাপন করেছিলেন।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আসন্ন বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য হবে কারণ, সরকার কোনো মেগা প্রকল্প হাতে নেবে না, বরং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, অবকাঠামো, শিক্ষা, কৃষি ও স্বাস্থ্য খাতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেওয়া হবে। 

তিনি বলেন ‘আমরা কোনো স্মৃতিস্তম্ভ বা জনকল্যাণহীন প্রকল্পে অর্থ ব্যয় করবো না।’

ড. সালেহউদ্দিন অভিযোগ করেন, অতীতে অনেক প্রকল্প নেয়া হয়েছিল অল্প কিছু মানুষের সুবিধার্থে। এখন সে ধরনের কোনো প্রকল্প আর নেয়া হবে না। আমরা উন্নয়নের সুফল সবার কাছে পৌঁছাতে চাই, হয়তো সমভাবে না, কিন্তু পৌঁছাব। আগে যেমন একমুখীভাবে সুবিধা পৌঁছানো হতো, সেটা হবে না। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

বাজেটের আকার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যদিও এটি খুব বড় হবে না, তবে এডিপি কিছুটা কম হতে পারে এবং বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৪ শতাংশের বেশি হবে না বরং ৪ শতাংশের নিচেই থাকবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দেশীয় উৎস থেকেই অর্থ সংগ্রহে বেশি গুরুত্ব দেব। তবে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে আমরা ইতোমধ্যেই অনেক প্রতিশ্রুতি পেয়েছি। পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক, এডিবি এবং আইএমএফ-এর সহায়তা প্যাকেজ থেকেও বাজেট সহায়তা পাওয়া যাবে।’

ঋণের ভারসাম্য বিবেচনায় রেখে অতিরিক্ত ঋণ না নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেন, সরকার দেশি ও বিদেশি উভয় অর্থের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করবে। আমরা তহবিলের অপব্যবহার চাই না কারণ, এটি ঋণ ও করের বোঝা কমাবে এবং সর্বোচ্চ সুফল নিশ্চিত করবে।

তিনি বলেন, বাজেটের আকার ছোট হবে না কারণ, মূল্য ও ব্যয়ের হার সময় ও পরিস্থিতির সঙ্গে বাড়ছে এবং প্রকল্প খরচও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ‘টাকার যথাযথ ব্যবহার’ নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, মিতব্যয়ী হওয়া হবে একটি মূলনীতি, তবে সেটি যেন ‘না খেয়ে চলার মতো’ না হয়।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ‘ভ্যালু ফর মানি’ নিশ্চিত করবো, সময়মতো প্রকল্প শেষ করবো যাতে সময় ও অর্থের অপচয় না হয়। আমরা বিদায়ী অর্থবছরে অনেক উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দ কমিয়ে দিয়েছি।’

এই সরকার এই বাজেট সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়নের জন্য এক বছর সময় পাবে কিনা জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘জাতীয় বাজেট কখনোই ছয় মাস বা নয় মাসের জন্য হয় না। সংবিধান অনুযায়ী বাজেট এক বছরের জন্যই কার্যকর থাকে। তবে মুদ্রানীতি ছয় মাসের জন্য হতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘যদি আমরা পুরো এক বছর না পাই, তাহলে পরবর্তী সরকার এই বাজেট বাস্তবায়ন করবে। তারা চাইলে কিছু পরিবর্তন আনতে পারে, কিন্তু সম্পূর্ণ নতুনভাবে কিছু করা সম্ভব হবে না।’