শিরোনাম
খাগড়াছড়ি, ২৯ মে, ২০২৫ (বাসস) : জেলায় জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা দেশী গরু, মহিষ, ছাগলে সয়লাব জেলার হাট বাজারগুলো।
পাহাড়ে সবুজ ঘাসে প্রাকৃতিক উপায়ে কোরবানির পশু মোটাজাতকরণ করছে খামারীরা। এসব গবাধিপশু মোটাজাতকরণে ব্যবহার করা হয় না ভ্যাকসিন বা কোন ওষুধ।
ফলে পাহাড়ের খামারে বেড়ে উঠার গরুর কদরও বেশি। কোরবানিকে ঘিরে জেলার ছোট বড় প্রায় ৩ হাজার খামারীর কাছে ১৯ হাজার ১ শ ৬০ টিরও বেশি পশু মজুদ রয়েছে। ৬০ থেকে ৮০ হাজারের মধ্যে মিলছে পছন্দনীয় গরু। এতে করে কোরবানির পশুর হাটে খামারী,ক্রেতা ,বিক্রেতা ও ব্যবসায়ী সবাই খুশি।
জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস জানিয়েছে, পবিত্র ঈদুল আযাহাকে সামনে রেখে জেলায় জমজমাট হয়ে উঠেছে পশুর হাট বাজার। জেলার ২৬টি কোরবানির পশুর হাটে পুরোদমে চলছে বেচাকেনা। হাটে রয়েছে পর্যাপ্ত স্থানীয় দেশী গরু, মহিষ, ছাগল। ক্রেতা বিক্রেতাদের উপস্থিতিতে সরব হাট বাজারগুলো। জেলা প্রাণীসম্পদ বিভাগের তথ্য মতে ৩ হাজার ছোট বড় খামারির কাছে রয়েছে কোরবানি যোগ্য ১৯ হাজারের বেশি পশু। তবে হাট বাজারগুলোতে পশুর দাম নিয়ে রয়েছে ভিন্ন চিত্র খামারীরা বলছে তারা দাম পাচ্ছে না আবার ক্রেতারা বলছে দাম বেশী । এর পরও বাস্তবতার নীরিখে সকলেই খুশী ।
জেলায় ছোট আকারের গরু ৫০ থেকে ৬০ হাজার,মাঝারি আকারের গরু ৬০ থেকে ৮০ হাজার এবং বড় গরু ৩ থেকে ৬ লাখ বিক্রি হচ্ছে। কৃত্রিম কোন ঔষধ ব্যবহার না করে এখানে প্রাকৃতিকভাবে গরু পালন করা হয় বলে সমতল জেলাগুলোর তুলনায় খাগড়াছড়ির গরুর বাড়তি আকর্ষন রয়েছে। এ কারণে প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক ব্যবসায়ীর আগমন ঘটেছে খাগড়াছড়িতে। তবে এবার সমতলের ব্যবসায়ীরা তেমন আসেনি।
চলতি বছর জেলার ৯টি উপজেলায় ১৯ হাজার, ১ শ ৬০ টি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তত করা হয়েছে। এরমধ্যে গরু ১২ হাজার ৮ শ ১০ টি, মহিষ ১৫ টি, ছাগল ৬ হাজার ১ শ ১০ টি এবং ভেড়া ৮০ টি। আসন্ন কোরবানিতে জেলার চাহিদা মেটানোর পরেও প্রায় ১ হাজার ১শ ৬০ পশু উদ্বৃত্ত থাকবে। পাহাড়ে পুরোপুরি প্রাকৃতিক খাবারের উপর নির্ভর এসব পশু স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ।
খামারি আব্দুল মান্নান, মফিজুর রহমান,আবুল কালাম ও অমিত চাকমা জানিয়েছেন, পশু খাদ্যের দাম কম হলে ভালো হতো। তারা প্রাকৃতিক লতা পাতা, ঘাস ভুষি দিয়ে গরু লালন পালন করেছেন। সেই হিসাবে গরুর দাম পেলে তারা খুশি।যদি কম দামে বিক্রয় করে তাহলে লোকসান গুণতে হবে। এদিকে সব খামারেই কোরবানির জন্য গরু ও ছাগল প্রস্তুত করার শেষ সময়ের কাজ চলছে। জেলার খামারগুলোতে নিরাপদ খাদ্য ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে প্রাকৃতিক পরিবেশে গবাদিপশু লালন পালন করা হয়।
গরু ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নান, আলী হোসেন ও রহমত উল্ল্যাহ বলেন, এবার কোরবানির সামনে রেখে বড় বড় খামারের পাশাপাশি গ্রামের কৃষক পরিবারগুলো বাড়িতে বাড়িতে গড়ে ৩টি- ৪টি করে গবাদিপশু প্রস্তুত করেছেন।
স্থানীয় খামারি ও গবাদি পশুর ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ বছর জেলার স্থানীয় বাজারে কোরবানির জন্য পশুর সংকট হবে না। বরং কোরবানির জন্য স্থানীয় চাহিদা মিটিয়েও অন্তত প্রায় ২/৩ হাজার পশু উদ্বৃত্ত থাকতে পারে। ফলে এসব পশু দেশের অন্যান্য জেলার পশুহাটে সরবরাহ করা যাবে।
ইজারাদার জামাল হোসেন জানিয়েছে, কোরবানীর হাট জমে উঠেছে। চাহিদা থাকায় দেশের সমতল ভূমিতেও খাগড়াছড়ির গরু যাচ্ছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ময়নুল ইসলাম জানান, এ বছর রোগাগ্রস্থ ও মোটাতাজাকরণ গরু চিহ্নিত করতে জেলার ২৬টি কোরবানির পশুর হাটে কাজ করছে, প্রাণীসম্পদ বিভাগের ভেটেরিনারী মেডিকেল টিম।পশু সম্পদ বিভাগ জানান, জেলার খামারীরা প্রাকৃতিক ভাবে গরু হৃষ্টপুষ্ট করে, কাঁচা ঘাস ও দানাদার খাবার ছাড়া কোন প্রকার বিষাক্ত জিনিস তারা ব্যবহার করে নাই। তাছাড়া প্রতিটি হাটে মেডিকেল টিম আছে যাতে কেউ অসুস্থ গরু বিক্রি করতে না পারে।তিনি বলেন নিরাপদ গবাদিপশু পালনের মাধ্যমে খামারিরা মাংস উৎপাদনে অনন্য ভূমিকা রাখছেন। জেলায় ৩ হাজারেরও বেশি খামারি রয়েছেন। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মাধ্যমে খামারিদের নিয়মিত পরামর্শ ও গবাদিপশুর চিকিৎসা সহায়তা দেয়া হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, জেলায় আসন্ন ঈদুল আযহায় কোরবানির জন্য ১৮ হাজার পশুর চাহিদা রয়েছে। কিন্তু জেলার খামারগুলোতে স্থানীয় চাহিদার চেয়ে বেশি পশু প্রস্তুত রয়েছে। এসব পশু ঢাকা, চট্টগ্রাম, ফেনী জেলায় সরবরাহ করার প্রস্ততি নিচ্ছেন খামারিরা।
জেলা পুলিশ সুপার মো. আরিফিন জুয়েল বাসসকে জানান, কোরবানির পশুর হাটে ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কোরবানির পশুবাহী ট্রাকসহ বিক্রেতাদের বিভিন্ন স্থানে যাতে চাঁদাবাজি ও হয়রানির শিকার হতে না হয়, সেজন্য পুলিশ- প্রশাসন কাজ করছে। এ ছাড়াও ব্যবসায়ীরা চাইলে বাড়তি নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত পুুলিশ জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।
জেলা প্রশাসন সুত্রে জানা যায় এ বছর খাগড়াছড়িতে কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ১৮ হাজার । জেলার ২৬টি কোরবানির হাটে কাজ করছে, প্রাণীসম্পদ বিভাগের ভেটেরিনারী মেডিকেল টিম, ব্যাংক ও আইন-শৃঙখলা বাহিনীর সদস্যরা। এছাড়া বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারির কারণে সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় গরুর চোরাচালান রোধ করা সম্ভব হয়েছে। এ কারনে এবার কোরবানির পশুর হাটে পশুর ভালো দাম পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী স্থানীয় খামারি ও পশু ব্যবসায়ীরা।