বাসস
  ২৮ মে ২০২৫, ২০:৫৮

প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা ও আন্তরিকতায় এ বছর হজ কার্যক্রম সহজতর হয়েছে : ধর্ম উপদেষ্টা 

ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। ফাইল ছবি

মোশতাক আহমদ

ঢাকা, ২৮ মে, ২০২৫ (বাসস) : ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের  প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দিক নির্দেশনা ও আন্তরিকতার কারণে এ বছর পবিত্র হজ কার্যক্রম বাংলাদেশি হজ যাত্রীদের  জন্য সহজতর করা গেছে। 

তিনি বলেন, ইসলাম ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হলো পবিত্র হজ। একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান সারা জীবনের কষ্টার্জিত সম্পদ বিনিয়োগ করে পবিত্র হজ করতে সৌদি আরব যায়। এতে তারা যেন কোন রকম হয়রানি বা কষ্টের মধ্যে না পড়েন যে বিষয়ে  প্রধান উপদেষ্টা তাকে বার বার তাগিদ দিয়েছেন। এবং বলেছেন, একটি সুষ্ঠু ও নিরাপদ হজ ব্যবস্থাপনায় কোনো ঘাটতি বরদাশত করা হবে না। প্রধান উপদেষ্টার  আন্তরিক নির্দেশনায় তাই এ বছর কোন প্রকার কষ্ট বা হয়রানি ছাড়াই প্রায় ৮৭ হাজার ১০০ জন হজযাত্রীকে সৌদি আরব পাঠানোর চেষ্টা সফল হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৬৭ হাজার হজযাত্রী সৌদি আরবে পৌঁছেছে। 

আজ বুধবার সচিবালয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টার কার্যালয়ে বাসসকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ধর্ম উপদেষ্টা পবিত্র হজ কার্যক্রম নিয়ে এ বছর সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।    

ধর্ম উপদেষ্টা জানান, এ বছর পবিত্র মক্কায় বাংলাদেশি  হজ যাত্রীদের জন্য প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনায় তিনটি কার্যক্রম হাতে নেয় হয়। যার সুফল পেয়েছেন আল্লাহর মেহমানরা। এক. আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন লাব্বাইক  অ্যাপস চালু করা হয়েছে। প্রতিজন হজযাত্রী এর মাধ্যমে পবিত্র হজ পালনের বিষয়ে কখন কোথায় কিকি হুকুম আহকাম পালন করতে হবে তা যথাসময়ে জানতে পারছে। বাংলাদেশে তার পরিবার তথা আত্মীয়  স্বজনরাও জানতে পারছেন যে হাজী সাহেব সৌদী আরবে এখন কোথায় অবস্থান করছেন। এই অ্যাপসের মাধ্যমে তার হারিয়ে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। দুই. এবার হজযাত্রীদের জন্য তিনটি মোবাইল কোম্পানির সিম রোমিং করে দেওয়া হয়েছে। যাতে করে হজ যাত্রীরা সৌদি আরবে বসে পরিবারের লোকজনের সাথে সরাসরি কথা বলতে পারে। তিন. হজযাত্রীদের জন্য একটি করে ব্যাংকের কার্ড করে দেওয়া হয়েছে যাতে তারা সৌদি আরবে সহজেই আর্থিক সমস্যা সমাধান করতে পারে। কার্ডটির মাধ্যমে ওই দেশের ব্যাংক থেকে প্রয়োজন মত রিয়াল নিতে পারছে। 

ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, এ বছর হজ কার্যক্রমে সরকারের অনেক খরচ কমানো হয়েছে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বাইরে অন্য কোকো দপ্তরের লোকজনকে হজ প্রশাসনিক টিমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। শুধু সরকারি হাসপাতালে কর্মরতদের থেকে চিকিৎসক ও নার্স নেওয়া হয়েছে। অতীতে যেমন সরকারি খরচে শত শত লোককে হজে পাঠানো হতো এবার একজনকেও এখাতে পাঠানো হয়নি। গত বছর হজ টিমে ছিল ৩৬৬ জন এবার ২৯৭ জন। 

ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে এনবিআর, বিমান মন্ত্রণালয়, ও হজ এজেন্সিগুলোর সাথে কথা বলে হজে যাওয়ার খরচ আগের চেয়ে অনেক কমানো হয়েছে। বিমানের টিকেটের দাম কমানো হয়। হজ যাত্রীদের চিকিৎসার জন্য ১৬৫ জন চিকিৎসক ও নার্স  নিয়োজিত রয়েছে। হজ যাত্রীদের জন্য এক কোটি টাকার ওষুধ পাঠানো হয়েছে। হজ যাত্রীরা চিকিৎসার পাশাপাশি বিনামূল্যে  ওষুধও পাচ্ছে।  তাছাড়া কারো যদি জটিল ও কঠিন রোগ ধরা পড়ে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে সৌদি আরবের হাসপাতালে  সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করছে সরকার।  

ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, হজযাত্রীরা আল্লাহর মেহমান। তাদের হজযাত্রাকে মসৃণ করতে সরকার সদা তৎপর। এ বছর মোবাইল অ্যাপ, হজ প্রিপেইড কার্ড ও মোবাইল ফোন রোমিং সেবা চালুর মধ্য দিয়ে  হজ ব্যবস্থাপনায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। সরকারের এ সকল পদক্ষেপের মাধ্যমে হজ পালন সহজ, নিরাপদ ও সাশ্রয়ী  হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি । 

বাংলাদেশ থেকে হজ ফ্লাইট শেষ হচ্ছে ২৯ মে। পবিত্র হজ পালন শেষে বাংলাদেশি হাজীরা যাতে সুষ্ঠু ও নিরাপদে দেশে ফিরতে পারে সে জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা সরকার রেখেছে বলেও তিনি জানান। উপদেষ্টা বলেন, আগামী ২৯ মে শেষ হজ ফ্লাইটে তিনি সৌদি আরব যাচ্ছেন। সেখানে তিনি পরদিন ৩০ মে  উচ্চ পর্যায়ের হজ মনিটরিং টিমের বৈঠক ডেকেছেন। কারো কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা তা সরেজমিনে অবলোকন করবেন। তিনি বলেন, এ বছর আগের চেয়ে অনেক কম অভিযোগ পাচ্ছি। যদি কোনো হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায় তবে আইন অনুসারে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া এ বছর থেকে হজযাত্রী ও এজেন্সির মধ্যে লিখিত চুক্তি করারও বিধান চালু করা হয়েছে। যাতে কেউ চুক্তি ভঙ্গ করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বাসসকে বলেন, আমরাতো ভাল মনে করে হজযাত্রীদের জন্য অনেকগুলো নিয়ম প্রতিপালন করছি। পরবর্তী সরকার চাইলে  এগুলো অব্যাহত রাখতে পারে। এ ক্ষেত্রে হজ যাত্রীদের জন্য সুফলই বয়ে আনবে।