বাসস
  ২৮ মে ২০২৫, ২০:৪২
আপডেট : ২৮ মে ২০২৫, ২১:০৮

ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের প্রস্ততি নিতে নেতাকর্মী ও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান তারেক রহমানের

ছবি : বাসস

ঢাকা, ২৮ মে, ২০২৫ (বাসস) : আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচনে যাতে হয় সেই প্রস্তুতি নিতে দলের নেতা-কর্মীসহ দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপির) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

তিনি বলেন, ‘আমরা ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশের জনগণের সরাসরি ভোটে জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক, জনগণের কাছে দায়বদ্ধ একটি সরকার দ্রুত দেখতে চাই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহবান, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে।’ 

তারেক রহমান বলেন, আমরা আবারো বলতে চাই, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নতুন প্রজন্মের প্রিয় ভাই বোনেরা, আজকের এই সমাবেশ, প্রিয় দেশবাসী আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আপনারা জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান যাতে অনুষ্ঠিত হয় তার প্রস্তুতি নিতে শুরু করুন।’

দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে তারেক রহমান বলেন, ‘আমি বলতে চাই, আপনারা জনগণের কাছে যান। তাদের প্রত্যাশা জানার চেষ্টা করুন, তাদের প্রত্যাশা বোঝার চেষ্টা করুন, জনগণের মন জয় করুন।’

আজ বুধবার বিকেল ৪টায় ‘তারুণ্যের সমাবেশে’ প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তারেক রহমান এসব কথা বলেন। বক্তব্যের শুরুতে তিনি এ সময় তারুণ্যের জনসমুদ্রকে হাত নেড়ে অভিবাদন জানান। নেতাকর্মীরা স্লোগান ধরেন, ‘তারেক রহমান বীরের বেশে, আসবে ফিরে বাংলাদেশে, বাংলাদেশের প্রাণ, তারেক রহমান।’ 

এরপরপরই সমাবেশের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে শ্লোগান ধরে বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘দিল্লি নয় পিন্ডি নয়, নয় অন্য কোন দেশ, সবার আগে বাংলাদেশ।’ প্রিয় সমাবেশ- বলুন, প্রিয় দেশবাসী বলুন, ‘দিল্লি নয় পিন্ডি নয়, নয় অন্য কোন দেশ, সবার আগে বাংলাদেশ।’

এর আগে, বিকেল ৩টা ৩৭ মিনিটে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কুরআন তিলাওয়াতের মধ্যদিয়ে বিএনপি’র তিন অঙ্গসংগঠনের আয়োজনে ‘তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশ’ শুরু হয়। 

তারেক বলেন, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে মনে হয় এরই ভেতরে টাল বাহানা শুরু হয়েছে বা চলছে। কথিত অল্প সংস্কার আর বেশি সংস্কারের অভিনব শর্তের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে আগামী জাতীয় নির্বাচনের ভবিষ্যৎ। এরই ভিতরে জনগণ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে সংস্কার নিয়ে সময় ক্ষেপণের আড়ালে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভেতরে এবং বাইরে কারো কারো মনে হয় কিছু ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, পলাতক স্বৈরাচারের সময় আমরা দেখেছি, তারা কিভাবে আদালতকে অবজ্ঞা করেছে, আদালতের রায়কে অবজ্ঞা করেছে। অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হয়, পলাতক স্বৈরাচারের পরে যেই সরকারের কাছে দেশের মানুষ আশা করেছিল যে, আইনের প্রতি সম্মান থাকবে।

তিনি বলেন, আমরা দেখেছি আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান না দেখিয়ে যারা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণের মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণে বাধা সৃষ্টি করেছে -সেই স্বৈরাচারের একই ঘটনা, সেটিরই পুনরাবৃত্তি আমরা দেখতে পাচ্ছি।

এই সময়ে দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনাদের কাছে আমার আজকে জিজ্ঞাসা যারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখায় না, যারা আদালতকে আদালতের নির্দেশকে অবজ্ঞা করে তাদের কাছ থেকে আমরা কতটুকু সংস্কার আশা করতে পারি।’

পূঁথিগত সংস্কারের চেয়ে ব্যক্তি মানসিকতার সংস্কার অনেক বেশি জরুরি উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘নর্থ কোরিয়ার সংবিধানে লেখা রয়েছে ডেমোক্রেটিক পিপলস রিপাবলিক অফ নর্থ কোরিয়া। সুতরাং কি লেখা আছে, তার চেয়েও বেশি যেটি জরুরি তা হল মেনে চলা। ইসরাকের ক্ষমতা গ্রহণ বা ইশরাকের শপথ গ্রহণে বাধা সৃষ্টি করে আজ আমরা আবারো স্বৈরাচারী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ দেখতে পাচ্ছি।’

সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘নিরপেক্ষতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতাই কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান পুঁজি। তাই তাদের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, তাদের প্রতি আমাদের পরামর্শ থাকবে, জনগণের বিশ্বাস ভালোবাসা নষ্ট হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এমন কোন পদক্ষেপ নেওয়া ঠিক হবে না। একই সাথে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আবারো আহ্বান জানিয়ে বলতে চাই, গণতন্ত্রকামী জনগণ এবং গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোকে দয়া করে প্রতিপক্ষ বানাবেন না।’

তিনি বলেন, যদি আপনাদের কেউ রাষ্ট্র পরিচালনায় থাকতে চায় তাহলে সরকার থেকে পদত্যাগ করে জনগণের কাতারে আসুন, নির্বাচন করুন। যদি ভবিষ্যতে নির্বাচনে জনগণের রায় পান তাহলে আবার সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করুন। 

নতুন প্রজন্মের প্রায় সাড়ে তিন কোটি ভোটার সংযুক্ত হয়েছে জানিয়ে তারেক বলেন, ‘ এই নতুন ভোটাররা আজ পর্যন্ত একটি জাতীয় নির্বাচনেও ভোট দিয়ে তাদের নিজের পছন্দের প্রার্থীকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করার সুযোগ পায়নি। পতিত পরাজিত পলাতক স্বৈরাচারের কাছে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা কিংবা নির্বাচন কোন গুরুত্বপূর্ণ কিছু ছিল না। সুতরাং সংস্কার ইস্যুর পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দৃশ্যমান প্রস্তুতি নেওয়া উচিত বলে আমরা বিশ্বাস করি।’ 

অতীতের তত্ত্বাবধায়ক সরকার তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করলেও এবার অন্তবর্তীকালীন সরকার দশ মাসেও সেই নির্বাচন করতে পারছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, অতীতে বিভিন্ন সময় এই বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করেছে এবং প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি তত্ত্বাবধায়ক সরকার তিন মাসের মধ্যেই সফলভাবে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেছে অতীতেই বাংলাদেশে রেকর্ড রয়েছে তিন মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা সম্ভব।’

কিন্তু আজ আমরা দেখছি ১০ মাস পার হয়ে গেলেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করছে না। আমরা ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশে জনগণের সরাসরি ভোটে জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক জনগণের কাছে দায়বদ্ধ একটি সরকার দ্রুত দেখতে চাই।

তারেক বলেন, গ্লোবাজাইশনের এই সময়ে মানুষের আকাঙ্ক্ষা এখন আর স্বপ্ন দেখার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এখন সকলের সামনে সম্ভাবনার সকল দার উন্মুক্ত। এই সম্ভাবনার বাস্তবায়ন ঘটিয়ে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধি এবং সাফল্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতেই হবে আমাদের। আর কথামালার রাজনীতি নয়। বিএনপির আগামী দিনের রাজনীতি নিরাপদ কর্মপরিবেশ এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির রাজনীতি। এখন বাস্তবায়ন আর দৃষ্টান্ত স্থাপনের রাজনীতি।

আগামীতে ক্ষমতায় গেলে জনসংখ্যাকে জনসম্পদের রুপান্তরে কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা, ক্ষুদ্র-কুঠির শিল্পের বিকাশ, গ্রামীন উন্নয়নে তথ্য-প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার, ব্যাপক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনার কাজ করার কথা তুলে ধরেন তারেক রহমান। দরিদ্র পরিবারের জন্য ফ্যামিলি কার্ড, প্রান্তিক কৃষক, ভূমিহীন কৃষকদের জন্য ফার্মাস কার্ড চালু, বেকারত্ব দূরীকরণে বিভিন্ন সেক্টর ভিত্তিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির খাতগুলো চিহ্নিত করা, স্কুল-কলেজে তথ্য-প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষা প্রবর্তন, ক্রীড়াকে শিক্ষা কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত করা, বিদেশী ভাষা শিক্ষা চালু করা, সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্লামং ইলেকট্রিশিয়ান মেকানিক্স ডেন্টাল হাইজিনিস্ট, মেডিকেল টেকনিশিয়ান গড়ে তুলতে কোর্স চালু করা, বিশ্বখ্যাত ই-কর্মাস প্ল্যাটফর্মের চাহিদা অনুযায়ী কর্মী গড়ে তোলা, ফ্রিল্যান্সিং আউট সোর্সিং থেকে আয় বাড়ানো, স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়নে গ্রামীন হেলথকেয়ার ওয়ার্কার গড়ে তোলা, বৃক্ষরোপন কর্মসূচি দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেয়া প্রভৃতি পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

তিনি বলেন, ‘জনগণই বিএনপির সকল রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস। আমরা সরকারে না থাকলেও একটি দায়িত্বশীল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে তরুণ প্রজন্মে সামনে দেশ এবং জনগণের উন্নয়নে বিএনপির বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে, তার কয়েকটি অগ্রধিকার কর্মসূচি আজ সংক্ষেপে আপনাদের সামনে আমি তুলে ধরলাম। আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি জনগণের রায়ে রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে দেশ এবং জনগণের উন্নয়নে পর্যায়ক্রমিকভাবে দলের গৃহীত পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করবো ইনশাআল্লাহ। 

যুব দলের সভাপতি এম মোনায়েম মুন্নার সভাপতিত্বে এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান ও ছাত্র দলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছিরের যৌথ সঞ্চালনায় তারুণ্যের সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহ উদ্দিন আহমদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, যুব দলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, ছাত্র দলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বক্তব্য রাখেন।