বাসস
  ১৮ মে ২০২৫, ১২:২৪

টাঙ্গাইলে কোরবানিযোগ্য ২ লাখ ৩৬ হাজার ৯৭০ পশু প্রস্তুত 

টাঙ্গাইলের খামারগুলোতে কোরবানির জন্য পর্যাপ্ত পশু প্রস্তুত রয়েছে। ছবি: বাসস

\ মহিউদ্দিন সুমন \

টাঙ্গাইল, ১৮ মে, ২০২৫ (বাসস) : জেলায় আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানির জন্য পর্যাপ্ত পশু প্রস্তুত রয়েছে। ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে বর্তমানে জেলার খামারিরা গরু মোটাতাজাকরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। 

জেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ঈদুল আজহা উপলক্ষে জেলায় এ বছর ২ লাখ ১১ হাজার ৯৭৪ টি কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে। আর কোরবানিযোগ্য পশু প্রস্তুত করা হয়েছে ২ লাখ ৩৬ হাজার ৯৭০টি। এর মধ্যে গরু রয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার ৭০টি। 

জেলার চাহিদা মিটিয়েও উদ্ধৃত্ত অতিরিক্ত ২৪ হাজার ৯৯৬ টি কোরবানির পশু প্রস্তুত রয়েছে।  এসব পশু ঢাকা ও আশপাশের জেলার কোরবানির পশুর হাটে বিক্রির প্রস্তুতি নিচ্ছেন খামারিরা।

সূত্র জানায়, জেলার ১২টি উপজেলায় ২৬ হাজার ২০৩ টি ছোট-বড় খামার রয়েছে। এ খামারগুলোতে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করা হচ্ছে।

খামারিরা জানায়, জেলার প্রায় সব খামারেই কোনো প্রকার ক্ষতিকারক ওষুধ ছাড়াই প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করা হয়ে থাকে। 

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার মায়ের দোয়া গরুর খামারের মালিক জাহাঙ্গীর আলম বাসসকে বলেন, ‘আমি ১২ বছর যাবত গরু লালন পালন করি । বছরে ২ থেকে ৩ বার গরু বিক্রি করে থাকি। এবার শীতে ক্রস গরু বিক্রি করেছি। এ বছর ঈদুল আজহায় বিক্রির জন্য ২৫টি গরু মোটাতাজা করে প্রস্তুত করছি। এ বছর খাবারের দাম বেশি । জানিনা গরু বিক্রি করে লাভবান হতে পারবো কিনা!  আশায় আছি আল্লাহ যেন মুখ ফিরে চায় । একশত ডেসিমাল ঘাস বুনেছি। এর সাথে কুড়া, ভুসি ও ভুট্টা মিক্সড করে সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে খাবার দিয়ে  আমি  গরু মোটাতাজা করছি।’

টাঙ্গাইল পৌরসভার সন্তোষ বালুচড়ার খামারি বুলবুল হোসেন  বলেন, আমি কোরবানির ঈদের জন্য ২২ টি গরু প্রস্তুত করেছি।  কিন্তু খাদ্যের যে দাম সে তুলনায় লাভ হবে কিনা বলতে পারছিনা। আমার দেশীয় জাতীয়  ষাঁড় গরুগুলোর খাবারের তালিকায় রয়েছে- খৈল, ভূষি, খড়, সবুজ ঘাস, ভুট্টা  ও ছোলার মত প্রাকৃতিক খাবার। 

কালিহাতীর হরিপুর গ্রামের ভাই-বোন অ্যাগ্রো ফার্মের মালিক কামরুল হাসান হিরণ জানান, তিনি গত ছয় বছর ধরে ফার্মে গরু মোটাতাজা করে কোরবানির ঈদে বিক্রি করেন। এ বছর  তার ফার্মে কোরবানির জন্য ছোট-বড় ৯টি গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে তিনি গরুগুলো মোটাতাজা করেছেন। তার ফার্মের সবচেয়ে ছোট গরুর ওজন সাড়ে ৫০০ কেজি এবং সবচেয়ে বড় গরুর ওজন প্রায় ১০০০ কেজি। তিনি গরুগুলো কোরবানির হাটে ওঠানোর চিন্তা করছেন। তবে কোনো গ্রাহক বাড়ি থেকে গরু কিনতে চাইলে তিনি হাটের চেয়ে অনেক কম দামে বিক্রি করবেন বলে জানান।

আলহেরা অ্যাগ্রো ফার্মের দায়িত্বরত কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, আলহেরা অ্যাগ্রো ফার্মটি সৈয়দ নাজমুল হাসান প্রতিষ্ঠা করেন। এ ফার্মটি জামিয়া আল হেরা মাদরাসার নামে ওয়াক্ফ করে দেওয়া হয়েছে। এ ফার্ম থেকে প্রতিবছর তাদের চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত গরুগুলো বিক্রি করে দেওয়া হয়।

খামারি নজরুল ইসলাম জানান, তারা কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে প্রাকৃতিক উপায়ে খাবার খাইয়ে গরু মোটাতাজা করেছেন। প্রতিবছর ঈদুল আজহায় দেশীয় গরুর চাহিদা বেশি থাকায় তারা প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে দেশীয় গরু বিক্রি করেন।

জেলা প্রাণী সম্পদ অফিসার ডা. মো. মোস্তফিজুর রহমান বাসসকে জানান, এ বছর জেলায় অতিরিক্ত প্রায় ২০ হাজার গরু মোটাতাজা করে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। 

তিনি বলেন, জেলার কোরবানির চাহিদা মিটিয়েও বাড়তি পশু থাকবে। সুতরাং সিন্ডিকেট তৈরি করে দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ এবার থাকছে না।

এ ছাড়া জেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তর থেকে বছর জুড়ে ছোট-বড় খামারিদের যাবতীয় তথ্য, পরামর্শ, ভ্যাকসিন, এবং চিকিৎসা সেবাসহ সকল প্রকার সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে। অন্যদিকে গরু মোটাতাজাকরণের ক্ষেত্রে  খামারিদের সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে ঘাস-খড়ের পাশাপাশি খৈলগুঁড়া ও ভুসি খাওয়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে।