শিরোনাম
রাজশাহী, ৮ মে, ২০২৫ (বাসস) : ‘মধুমাস’ জ্যৈষ্ঠ শুরু হতে আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। এরমধ্যে রাজশাহী নগরী ও এর আশেপাশের স্থানীয় বাজারে সীমিত আকারে রসালো ফল লিচু উঠতে শুরু করেছে। কিন্তু বাজারে সরবরাহ কম হওয়ায় এর দাম এখনো সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে।
গ্রীষ্মকালে এই অঞ্চলে আম-কাঁঠালসহ অনেক রসালো ফলের সরবরাহ বেড়ে যায়। ফল উৎপাদন ও বিক্রির কারণে এ বছরও পূর্ববর্তী বছরগুলোর মতো স্থানীয় অর্থনীতির গতি বাড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, এখন বাজারে কেবল স্থানীয় জাতের লিচু উঠতে শুরু করেছে। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বোম্বাই জাতের লিচু বাজারে এসে যাবে। তিনি বলেন, চায়না-৩ (হাইব্রিড), বোম্বাই ও মাদ্রাজি জাতের লিচু এই অঞ্চলে সবচেয়ে জনপ্রিয়, তাই অনেকেই এই জাতের লিচু চাষ করে লাভবান হচ্ছেন।
রাজশাহী এবং দিনাজপুরে লিচু’র প্রচুর উৎপাদন হয়। তবে, ঈশ্বরদীর লিচু খুবই সুস্বাদু ও স্বাদের জন্য সারা দেশে বিখ্যাত বলে তিনি জানান।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার বাসস’কে জানান, এ বছর ঈশ্বরদী উপজেলায় ৩ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ করা হয়েছে। বাণিজ্যিক চাষের পাশাপাশি উচ্চ ফলনশীল চায়না-৩, বোম্বাই এবং মাদ্রাজ জাতের লিচুও বসতবাড়ির জমিতে চাষ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এই অঞ্চলে আম এবং লিচুর বাণিজ্যিক চাষ ধীরে-ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ঈশ্বরদীসহ লিচু উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত এই অঞ্চলের অনেকস্থানেই গাছে ফুল ফোটার হার সন্তোষজনক, যা মোট উৎপাদনের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
মৌসুমি ব্যবসায়ীরা শহরের বিভিন্ন স্থানে, বিশেষ করে সাহেব বাজার, বিন্দুর মোড়, লক্ষ্মীপুর বাজার, সিরোইল বাস টার্মিনাল, রেলওয়ে স্টেশন ও কোর্ট বাজারে অস্থায়ী দোকান স্থাপন করেছেন। গ্রীষ্মকালীন নানা ধরনের আকর্ষণীয় ফল পাওয়া যাচ্ছে এসব জায়গায়।
লিচুর মৌসুম আসার সঙ্গে-সঙ্গে গুণমান এবং আকারের উপর ভিত্তি করে প্রতি ১০০ লিচু ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ কম থাকায় দাম বেশি, তবে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সরবরাহ ভালো হলে দাম কিছুটা কমবে।
কাপাসিয়া গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক বাসস'কে জানান, তার এক বিঘা জমিতে রোপণকৃত ৩০টি লিচু গাছে এ বছর ফুল ফুটেছে এবং ডালে প্রচুর পরিমাণে ‘গুটি’ এসেছে।
তিনি অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, পাঁচ বছর বয়সী একটি গাছ প্রায় ১০০-১৫০ কেজি লিচু বা প্রায় ২ হাজার থেকে ৬ হাজারটি লিচু দিতে পারে। রাজশাহীর বড়গাছি, বাগমারা, চারঘাট ও বাঘার বেশিরভাগ পরিবার লিচু চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছে।
চারঘাট উপজেলার নন্দনগাছী গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, এই অঞ্চলে চাষযোগ্য বসতবাড়ির জমিতে শত-শত লিচু বাগান গড়ে উঠেছে। তিনি বলেন ‘এ বছরের আবহাওয়া লিচু চাষের জন্য অনুকূল বলে মনে হচ্ছে। তাই আমরা ভালো ফলনের ব্যাপারে বেশ আশাবাদী।’
উপযুক্ত মাটি, অনুকূল জলবায়ু এবং আকর্ষণীয় বাজার মূল্য রাজশাহীতে ফলের ব্যাপক চাষের মূল কারণ। তাছাড়া, কৃষকরা আর্থিক স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য লিচু চাষের দিকেই ঝুঁকছেন।
লিচু চাষি মনসুর রহমান জানান, তারা প্রতি বছর তাদের লিচু বাগান থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে লাভ করেন, যা তাদের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় অবদান রেখেছে।
পবা উপজেলার পারিলা গ্রামের কৃষক এরশাদ আলী গত বছর ৫০টি বোম্বাই জাতের গাছ থেকে দেড় লাখ টাকা আয় করেছিলেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর প্রায় ২ লাখ টাকা আয়ের আশা করছেন তিনি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের ব্যবসায়ী শহীদুল ইসলাম গত ১২ বছর ধরে লিচু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, তিনি জানান, ব্যবসাটি লাভজনক। এ কারনেই প্রতি বছর লিচু চাষের জমি ধীরে-ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অপর এক লিচু ব্যবসায়ী ইয়াসিন আলী এ বছর ১০ একর জমির একটি বাগান লিজ নিয়ে সেখানে চায়না-৩, বোম্বাই ও মাদ্রাজ জাতের লিচু চাষ করছেন। প্রতিদিন ৪০ জন শ্রমিক গাছের পরিচর্যা করেন। ঢাকা থেকে আগত ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যেই ফল কিনতে শুরু করেছেন বলে বাসস'কে জানান তিনি।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের (ডিএই) উপ-পরিচালক উম্মে সালমা বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেকেই লিচু চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
তিনি বলেন, ১ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে শত-শত লিচু বাগান রয়েছে যা প্রচুর ফলন দেয়। এই লিচু স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়।সালমা বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ লিচুর গুণমান বজায় রাখার জন্য চাষিদের আরও সাতদিন পর ফসল তোলার পরামর্শ দিয়েছেন।