বাসস
  ০৩ মে ২০২৫, ১৫:১৭

দিনাজপুরের হাকিমপুরে বাণিজ্যিক ভাবে গড়ে উঠেছে মহিষের খামার

দিনাজপুরের হিলিতে বাণিজ্যিক ভাবে গড়ে উঠেছে মহিষের খামার। ছবি: বাসস

দিনাজপুর, ৩ মে, ২০২৫ (বাসস): জেলার হাকিমপুর উপজেলার হিলিতে গড়ে উঠেছে বিশাল মহিষের খামার। পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে রেখে বাণিজ্যিকভাবে মহিষ পালন করা হচ্ছে। আগামী ২০ থেকে ২৫ দিন পরে মহিষ বিক্রির জন্য তোলা হবে হাটে। 

লালন-পালনের খরচ কম হওয়ায় জেলায় মহিষের খামারের সংখ্যা বাড়ছে। তবে লোকসান এড়াতে ভারতীয় মহিষ আমদানি ও চোরাই পথে আসা বন্ধের দাবি খামারিদের।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে জেলার সীমান্ত ঘেষা হাকিমপুর উপজেলার হিলি পৌর এলাকার চুড়িপট্রি এলাকায় মা হাজেরা বিবি এগ্রো ফার্ম নামে একটি মহিষের খামার সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করেছি। বিশাল আকারে মহিষের খামার গড়ে তুলেছেন স্থানীয় যুবক সুমন মিয়া (৩২) তার বাড়ী সংলগ্ন নিজের জায়গায়।

কোরবানির জন্য খামারটিতে মোটা-তাজা করা হচ্ছে ১৩৮টি মহিষ। এর মধ্যে বুলডোজার নামে একটি মহিষের ওজন ১ হাজার ৩'শ কেজি। আর বিগবস নামে আরেকটি মহিষের ওজন এক হাজার একশত কেজি। দু'টি মহিষের দাম ধরা হয়েছে ৫ থেকে সাড়ে ৫ লাখ টাকা। তার খামারে থাকা অন্য সব মহিষ গুলো, নিয়মিত খাবার দিয়ে পরিচর্যার মাধ্যমে বেশ মোটা-তাজা করা হয়েছে।

এবার কুরবানীর ঈদে ভারত থেকে অবৈধ পথে মহিষ আমদানি না হলে, তার খামারের মহিষ বিক্রি করে, ভালো লাভবান হওয়ার আশা খামারি সুমন মিয়ার।

তার খামারে মহিষ দেখতে আসা, নওগাঁ সদর উপজেলার  শাজাহান মিয়া বলেন, শুনেছি সীমান্তবর্তী হিলিতে মহিষের খামার গড়ে উঠেছে। তাই আমরা নওগাঁ থেকে হিলিতে মহিষ কিনতে এসেছি। হিলি পৌর শহরে সীমান্তের জিরো পয়েন্ট ঘুরে দেখলাম, খুব ভালো লাগছে। যদি দর-দামে মিলে যায় তাহলে দুই-চারটা মহিষ কিনে নিয়ে যাব।

খামারের এক শ্রমিক বলেন, আমাদের হিলিতে মহিষের খামার গড়ে উঠায় আমরা খুব খুশি। এখানে আমাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। আমরা খামারের মহিষ গুলোকে খুব যত্ন করি, নিয়মিত গোসল, খাবার ও পরিচর্যা করে থাকি। আর এখান থেকে মাস শেষে যে মাইনা পাই তা দিয়ে আমাদের সংসার চলে।

খামারি যুবক সুমন মিয়া বলেন,ছোটবেলা থেকেই পশু-পাখি পালনে আগ্রহ ছিল। ‘অন্য চাকরি কিংবা ব্যবসা না করে ছোট বেলা থেকেই গরু-ছাগল পালন শুরু করে আসছি। আগে গরুর খামার করে ছিলাম। লোকসান হওয়ায় সেটি বাদ দিয়ে আমার "বৃদ্ধা মায়ের নামে" মহিষের খামার করেছি।

খামারি সুমন বলেন, স্ত্রী শাফলা বেগম, দুই ছেলে- মেয়ে ও বৃদ্ধ মাকে নিয়ে আমার সংসার চলে আসছে। খামারের কাজে আমার স্ত্রী আমার অনুপস্থিতিতে দেখা-শোনা করে থাকেন।

সুমন বলেন, গরুর চেয়ে মহিষের অসুখ-বিসুখ কম হয়। ফলে মহিষের খামারে ক্ষতির পরিমাণ খুব কম। বর্তমানে আমার খামারে ১৩৮টি মহিষ আছে। এর মধ্যে দু'টি সবচেয়ে বড় মহিষ রয়েছে। একটির ওজন ১১শ কেজি, এটির নাম রেখেছি বিগবস। আরেকটি ১৩শ কেজির উপরে, এর নাম রেখেছি বুলডোজার। বিভিন্ন স্থান থেকে বেপারিরা খামারে মহিষ দেখতে আসছেন এবং ক্রয়ের জন্য দরদাম করছেন। তারা যে দাম বলছেন তাতে কিছুটা লাভ হবে। আরেকটু বেশি দাম পেলে বিক্রি করে দেয়ার ইচ্ছা আছে।

সব ধরনের দেশি খাবার খাইয়ে মহিষ গুলোকে বড় করে তোলা হয়েছে। এই খামারি বলেন, খড়, ঘাস ও ভুসিসহ সব খাবারের দাম বেশি। ফলে এবার মহিষ লালন-পালনে খরচ বেশি পড়ছে। 

তিনি বলেন, আসন্ন পবিত্র ঈদুল আযহায় মহিষগুলো বিক্রি করে লাভবান হতে পারবো। খামারে ১০ জন স্থানীয় শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে। আমার মতো কেউ যদি খামার গড়ে তোলে তাহলে আরও অনেকের কর্মসংস্থান হবে। খামারটিতে কর্মসংস্থান হয়েছে এলাকার ১০ যুবকের।

খামারটি গড়তে কত টাকা খরচ হয়েছে জানতে চাইলে সুমন মিয়া বলেন, ‘তার সঠিক হিসাব নেই। কারণ গত ৩ বছর ধরে বিভিন্ন সময়ে বিনিয়োগ করেছি। দুই লাখ ২০ হাজার টাকায় ৪টি মহিষ কিনে খামার শুরু করেছি। এরপর যখন যা পেরেছি, বিনিয়োগ করেছি। বর্তমানে তার খামারে প্রায় আড়াই কোটি টাকার মহিষ আছে।

হাকিমপুর উপজেলা প্রাণি সম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ডা.কাজি মাহাবুব হাসান বলেন, হাকিমপুর উপজেলা প্রথম বারের মতো বাণিজ্যিকভাবে মহিষের খামার গড়ে উঠেছে। উপজেলা প্রাণি সম্পদ দফতর থেকে নিয়মিত খামারটি পরিদর্শন করা হচ্ছে। খামারিকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। কিভাবে মহিষগুলো পালন করবে, সেসব পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। যেহেতু গরমে তাপ প্রবাহ চলমান, সেজন্য ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় ও নিয়মিত মহিষ গুলোকে গোসল করাতে হবে। সে সাথে নিয়মিত কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়াতে হবে।

এদিকে খামারে মহিষের গোবর খামার মালিকের অতিরিক্ত মুনাফার জোগান দিচ্ছে। এসব গোবর জৈব-সার হিসেবে ব্যবহার হওয়ায় এটির প্রচুর চাহিদা রয়েছে। খামার ম্যানেজার সুরুজ মিয়া বলেন, ‘কৃষকের কাছে আমরা জৈবসার বিক্রি করছি। তারা তাদের জমিতে এটি ব্যবহার করছেন। গোবরের প্রচুর চাহিদা রয়েছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আব্দুর রহিম বলেন, বর্তমান সময়ে মহিষ লালন-পালন খামার একটি লাভ জনক বিষয়। যে কেউ মহিষের খামার দিয়ে খুব সহজে স্বাবলম্বী হতে পারবে। কেউ যদি জেলার উপজেলা গুলোতে বাণিজ্যিক ভাবে এ ধরনের মহিষের খামার গড়ে তুলতে চায়, সেক্ষেত্রে আমরা প্রাণি-সম্পদ দপ্তর সব ধরনের সহযোগিতা করবো। বেশি বেশি খামার গড়ে উঠলে দেশের মাংসের চাহিদা পূরণে ঘাটতি মিটবে। বাহির থেকে আমদানি করতে হবে না গরু-মহিষ।