শিরোনাম
ঢাকা, ৯ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : দেশের পাট ও বস্ত্রখাতকে পুনরুজ্জীবিত করতে গত এক বছরে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়।
পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পরিবেশবান্ধব পাটজাত পণ্যের প্রসার এবং রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানাগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করতে এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
এই খাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উদ্দেশ্য হলো, প্লাস্টিকের টেকসই বিকল্প হিসেবে পাটজাত পণ্যের প্রচার করা। পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগের দেওয়া তথ্যানুসারে, পলিথিন ব্যবহার বন্ধে গ্রাহকদের উৎসাহিত করতে মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে রাজধানীর ইউনিমার্ট এবং স্বপ্নতে বিনামূল্যে পাটের ব্যাগ বিতরণ করা হয়েছে।
শহুরে ক্রেতাদের জন্য এই ব্যাগগুলোর নকশা ও মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কেনাকাটার জন্য গ্রাহকরা যেন বাসা থেকে নিজেদের পাটের ব্যাগ সঙ্গে নিয়ে আসে, সে ব্যাপারে উৎসাহিত করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে সুপারমার্কেট মালিকদের।
এছাড়া, পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন, ২০১০ রয়েছে। ওই আইনে গত বছরের ১ নভেম্বর থেকে সকল শপিংমল, খুচরা আউটলেট ও কাঁচা বাজারে পাটের ব্যাগ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত বস্ত্র ও পাটকলগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রচেষ্টা চলছে, যার মধ্যে অনেকগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়া পাটকলও রয়েছে। বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনে (বিজেএমসি) বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য সংস্কার পরিকল্পনাও চলমান রয়েছে।
এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে ১১টি পাটকল বর্তমানে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হচ্ছে এবং অন্যান্য কারখানা লিজ দেওয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হচ্ছে।
বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানাগুলোর শ্রমিকদের অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানে একীভূত করার জন্য মন্ত্রণালয় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কর্মীদের সুষ্ঠু স্থানান্তর নিশ্চিত করার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখা হয়েছে।
গত এক বছরে বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক জোরদার এবং বাংলাদেশের বস্ত্র ও পাটখাতে বিদেশি বিনিয়োগ নিশ্চিতে নিরলসভাবে কাজ করেছেন।
ইতোমধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত, সুইজারল্যান্ড, পাকিস্তান, চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতরা বাণিজ্য সম্পর্ক সম্প্রসারণ, বিশেষ করে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, রেশম শিল্প ও পাটজাত পণ্যের বিশ্ব বাজার নিয়ে আলোচনা করতে আমাদের দেশের মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করেছেন।
একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলো, ২০২৪ সালের নভেম্বরে লন্ডনে বাংলাদেশ দূতাবাসে পাট পণ্য প্রদর্শনী কর্ণারের উদ্বোধন। এছাড়া মন্ত্রণালয় বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগ প্রস্তাব পাঠিয়েছে। তাতে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোতে বিনিয়োগ করতে এবং বাংলাদেশি পাটজাত পণ্যের বাজার সম্প্রসারণে দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
চলমান বহুমুখী প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে মন্ত্রণালয়টি বিকল্প ধারার পাটপণ্য উৎপাদন ও রপ্তানির ব্যাপারে প্রচারের জন্য পাটখাতের বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কাজ করেছে। যার মধ্যে রয়েছে জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার (জেডিপিসি), বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএমএ) ও নারী উদ্যোক্তারা। প্লাস্টিক পণ্যের পরিবর্তে পাটজাত পণ্য ব্যবহারে উৎসাহিত করতে জেডিপিসি বেশ কয়েকটি প্রদর্শনী, প্রশিক্ষণ কর্মসূচি ও সচেতনতামূলক প্রচারের আয়োজন করেছে।
তাছাড়া, পাটের আঁশ থেকে তৈরি পরিবেশবান্ধব সোনালি ব্যাগ তৈরির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প পাইপলাইনে রয়েছে। এই প্রকল্পের জন্য একটি বিস্তারিত প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনে জমা দেওয়া হয়েছে এবং এটি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
মন্ত্রণালয়টি টেক্সটাইলখাতে দক্ষতা বৃদ্ধি ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষার ওপরও জোর দিয়েছে। বস্ত্র অধিদপ্তর তাদের নিয়োগের নিয়মও আপডেট করেছে এবং টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ও টেক্সটাইল ডিপ্লোমা প্রোগ্রামের শিক্ষার্থীদের কাজের দক্ষতা বিকাশের জন্য একটি ধারণাপত্র তৈরি করছে।
এই খাতে দক্ষ পেশাদারদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে বেশ কয়েকটি নিয়োগ প্রক্রিয়া ও প্রশিক্ষণ চালু করা হয়েছে।
এছাড়া, বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড দেশের রেশম শিল্পের বিকাশ, রেশম পোকার রোগমুক্ত ডিম বিতরণ এবং রেশম সম্প্রসারণ এলাকায় রেশম চাষিদের প্রশিক্ষণ প্রদানে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। রেশম শিল্প সংশ্লিষ্টদের উৎপাদনশীলতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য রেশম বোর্ড একাধিক সভা ও কর্মশালার আয়োজন করেছে।
গত বছরের আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন, ২০১০ এর আওতায় ৮২টি ভ্রাম্যমাণ অভিযান পরিচালনা করে মোট ৯ লাখ ৫৮ হাজার ৬০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। একই সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্য ব্যবসার জন্য ১০ হাজার ২৫১টি লাইসেন্স ইস্যু করা হয়। এর ফলে সরকারের ২ কোটি ৭৭ লাখ টাকারও বেশি রাজস্ব আয় হয়েছে।
মন্ত্রণালয় এই খাতের আর্থিক পরিস্থিতির উন্নয়নে বেশ কয়েকটি প্রকল্প চালু করেছে। যার মধ্যে রয়েছে টেক্সটাইল মিলের জন্য ইজারা ব্যবস্থা এবং উন্নত প্রযুক্তিভিত্তিক পাট ও পাট বীজ উৎপাদন ও সম্প্রসারণ প্রকল্প চালু করা।
এই প্রকল্পের আওতায় ৩৬টি জেলার কৃষককে পর্যাপ্ত পাটের বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে, যা গ্রামীণ এলাকায় পাট শিল্পের বিকাশে উৎসাহ যুগিয়েছে।