শিরোনাম
সাইফুল ইসলাম
ঢাকা, ৯ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা খাতে যুগোপযোগী সংস্কার ও উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এসব পরিকল্পনার লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীবান্ধব, স্বচ্ছ এবং আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
সরকার ইতোমধ্যে বিদেশ গমনেচ্ছু শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়, উচ্চ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সনদ অনলাইনের মাধ্যমে সত্যায়নের কার্যক্রম শুরু করেছে। এখন থেকে বিদেশে যেতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা একবার অনলাইনে সত্যায়ন করলেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তা গ্রহণযোগ্য হবে; দূতাবাসে পুনরায় সত্যায়নের প্রয়োজন হবে না। এতে সময় ও অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে এবং হয়রানি কমেছে।
শিক্ষা প্রশাসনের কাঠামোগত সংস্কারে সরকার মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে পৃথক দুইটি অধিদপ্তরে-মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এবং উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর- ভাগ করার উদ্যোগ নিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে শিক্ষা ব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ এবং দ্রুত সেবা প্রদান নিশ্চিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। পরিকল্পনাটি ২০২৪ সালের অক্টোবরে হাতে নেওয়া হয় এবং ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ চলছে।
বেসরকারি মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের জন্য অনলাইনে বদলি কার্যক্রম চালু করা হয়েছে, যা আগে ছিল না। এর ফলে শিক্ষকদের দীর্ঘদিন একই স্থানে কর্মরত থেকে সৃষ্ট একঘেয়েমি দূর হচ্ছে, স্থান পরিবর্তনের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় তারা নতুন পরিবেশে কাজ করার অনুপ্রেরণা পাচ্ছেন।
এছাড়া এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি) পদ্ধতিতে প্রদান করা হচ্ছে। আগে ম্যানুয়ালি এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হত, ফলে শিক্ষক-কর্মচারীদের বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরতে হতো। ইএফটি পদ্ধতি চালু হওয়ায় এই হয়রানি হ্রাস পেয়েছে, সময় বেঁচেছে এবং অর্থের অপচয় কমেছে।
সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটিতে রাজনৈতিক প্রভাব কমাতে সরকারি কর্মকর্তাদের দিয়ে ম্যানেজিং কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট প্রবিধানমালার খসড়া ইতোমধ্যে প্রস্তুত হয়ে ভেটিং-এর জন্য পাঠানো হয়েছে। আগস্ট মাসের মধ্যেই তা বাস্তবায়নের প্রত্যাশা রয়েছে।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা খাতে ৪৭ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা গত অর্থবছরের চেয়ে বেশি। শিক্ষা মানোন্নয়নে ইতোমধ্যে পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পরিমার্জন করে সরবরাহ করা হয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের আওতায় ৬২টি প্রকল্পের মাধ্যমে ১ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে শিক্ষা অবকাঠামো উন্নয়ন, ঢাবি, বুয়েট ও যবিপ্রবিতে আইসিটি অবকাঠামো নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, যা গবেষণা ও স্টার্ট-আপ উদ্যোগে সহায়ক হবে।
এছাড়া চলতি অর্থবছরে ৫১ লাখ মাধ্যমিক, ৮ লাখ উচ্চ মাধ্যমিক এবং ১ লাখ ৬৫ হাজার স্নাতক পর্যায়ের অসচ্ছল মেধাবী শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে, যা শিক্ষাক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ।