বাসস
  ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১১:০৫
আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১৩:৪২

১৫ সেনা কর্মকর্তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ

বুধবার সকালে বাংলাদেশ জেলের বিশেষ প্রিজন ভ্যানে করে সাধারণ পোশাকে ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে আনা হয়। ছবি: বাসস

ঢাকা, ২২ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : আওয়ামী লীগের শাসনামলে গুমের দুই মামলা ও জুলাই আগস্টে রামপুরায় মানবতাবিরোধী অপরাধের পৃথক মামলায় ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

গুমের মামলা দুটি হলো টিএফআই সেলে নির্যাতন এবং জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে নির্যাতন। 

এদিকে এই তিন মামলার পলাতক আসামীদের ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। 

একইসঙ্গে গুমের দুই মামলায় পরবর্তী শুনানির জন্য ২০ নভেম্বর ও রামপুরায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পরবর্তী শুনানির জন্য ৫ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এই ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য বিচারক হলেন মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

ট্রাইব্যুনালে আজ প্রসিকিউশনের পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম শুনানি করেন। আসামী পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন।

এর আগে বুধবার সকাল ৭ টা ১৫ মিনিটে বাংলাদেশ জেলের একটি বিশেষ প্রিজন ভ্যানে করে সাধারণ পোশাকে ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে আনা হয়।

সেনা কর্মকর্তাদের ট্রাইব্যুনালে আনার প্রেক্ষাপটে ট্রাইব্যুনালকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়। 

আওয়ামী লীগের শাসনামলে গুম ও নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের পৃথক দুই মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিকী ও ডিজিএফআইয়ের সাবেক পাঁচ মহাপরিচালকসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে গত ৮ অক্টোবর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। 

এছাড়া ওইদিন ট্রাইব্যুনাল জুলাই-আগস্টে রাজধানীর রামপুরায় ২৮ জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বিজিবি কর্মকর্তা রেদোয়ানুল ইসলাম ও মো. রাফাত বিন আলম মুনসহ চারজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন। সেই সাথে এই তিন মামলায় পরোয়ানাভুক্ত আসামীদের ২২ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর গত ১১ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে ১৫ জন কর্মরত সেনা কর্মকর্তাকে হেফাজতে নেওয়ার কথা জানায় সেনাবাহিনী। 

আর্মি অফিসার্স মেসে আয়োজিত ওইদিনের সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল মেজর জেনারেল মো.হাকিমুজ্জামান বলেন, দুটি মামলার ৩০ জন আসামির মধ্যে ২৫ জনই সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে নয় জন অবসরপ্রাপ্ত, একজন এলপিআরে গেছেন এবং বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন ১৫ জন।

এদিকে গ্রেফতারকৃত ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষিত ঢাকা সেনানিবাসের সাবজেলে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আসামী পক্ষের আইনজীবী।

এ বিষয়ে আসামী পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘সেনানিবাসে যে সাবজেল ঘোষণা করা হয়েছে, সেখানে এদের নেওয়া হবে বলে জেনেছি।’

অন্যদিকে এসব আসাসীকে গ্রেফতার ও ট্রাইব্যুনালে হাজির করার বিষয়ে সেনাবাহিনীর সম্পূর্ণ সহযোগিতা পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

তিনি বলেছেন, ‘আজ যাদের উপস্থিত করা হয়েছিল তাদের গ্রেফতার ও বিচারে সোপর্দ করার ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেমন কাজ করেছে, তেমনি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের রক্ষক হিসাবে আমরা যাদেরকে মনে করি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, তারা এই আদালতের (ট্রাইব্যুনালের) বিচারিক প্রক্রিয়াকে সাহায্য করেছে।’