শিরোনাম
ঢাকা, ৩০ জুন, ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রয়াত এম আই ফারুকীর বর্ণাঢ্য জীবন ও আইনাঙ্গনে তার অসামান্য অবদানের স্মরণে গতকাল (রোববার) বিকেলে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন-এর মিলনায়তনে এক স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ব্লাস্ট ও এম আই ফারুকী এন্ড এসোসিয়েটসের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. রেজাউল হক।
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও ব্লাস্টের নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন এর সঞ্চালনায় এতে আরো উপস্থিত ছিলেন- বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস, অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মাদ আসাদুজ্জামান, সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম এ মতিন, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জমির উদ্দিন সরকার এবং এম কে রহমান, সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সভাপতি এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহফুজুর রহমান মিলনসহ অনেকে।
সভায় উপস্থিত হয়ে বক্তারা প্রয়াত আইনজীবী এম আই ফারুকীর পেশাগত জীবনের বিভিন্ন দিক, তার মানবাধিকার বিষয়ক অবদান, জনস্বার্থ মামলা পরিচালনা ও সাংবিধানিক ব্যাখ্যায় অবদানের কথা গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. রেজাউল হক বলেন, এম আই ফারুকীর হাত ধরেই জনস্বার্থ মামলা ও জুডিসিয়াল এক্টিভিজমের দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এম আই ফারুকী শিশু অধিকার রক্ষায় বিভিন্ন সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ করে গেছেন।
পরিবেশ সুরক্ষায় টু-স্ট্রোক তিন-চাকার পরিবহন নিষিদ্ধ করার জন্য জনস্বার্থ মামলা এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে আসামীর বাধ্যতামূলক মৃত্যুদণ্ড রোধ করার জন্য অন্যতম ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি যৌনকর্মীদের অবৈধ উচ্ছেদ নিয়েও আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।
রেজাউল হক বলেন, মোটকথা, তিনি ছিলেন এক পুরোধা ব্যক্তিত্ব, যার গমন আমাদেরকে অভিভাবক শূন্য করে রাখবে সব সময়।
হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস বলেন, আইনজীবী এম আই ফারুকীকে স্মরণ করা জরুরি আমাদের নিজেদের জন্যই— যাতে তার পদরেখা অনুসরণ করে আমরা আইনের চর্চা করতে পারি। তিনি অবসরের পর বিচারকদের বিভিন্ন বিভাগে নিয়োগ দেওয়ার প্রথার বিরোধিতা করতেন এবং বিশ্বাস করতেন যে, এ ধরনের অনুশীলন বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে খর্ব করে।
সভায় উপস্থিত সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম এ মতিন বলেন, এম আই ফারুকী স্যারের প্রয়াণ আমাদের আইন অঙ্গনের জন্য এক অপূরণীয় অভাব হয়ে থাকবে। তিনি অনেক মেধাবী আইনজীবী তৈরি করে গেছেন, যার মাধ্যমে উনি আমাদের সবার মাঝে বেঁচে থাকবেন।
বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মাদ আসাদুজ্জামান বলেন, তিনি সর্বদা বেঁচে থাকবেন তার কাজের মধ্য দিয়ে।
এছাড়াও, এম আই ফারুকীর সুপ্রিম কোর্টের আইনি জীবন ও মানবাধিকার বিষয়ক মামলা নিয়ে স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জমির উদ্দিন সরকার ও এম কে রহমান। অনুষ্ঠানে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন, সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সভাপতি এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও এসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহফুজুর রহমান মিলন।
উল্লেখ্য, গত ৩ মে তারিখে রাত আনুমানিক দশটায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন প্রথিতযশা এই প্রবীণ আইনজীবী ও লেখক।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, তিনি ফুসফুসের ক্যান্সারে ভুগছিলেন ।
এম আই ফারুকীর করা জনস্বার্থ মামলাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য মামলাসমূহ হচ্ছে- শুকুর আলির বাধ্যতামূলক মৃত্যুদণ্ড-এর মামলা, টু-স্ট্রোক যানবাহন নিষিদ্ধকরণ সংক্রান্ত পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ক মামলা, এবং আবিদ খান ও সাদাকত খান ফাক্কুর নাগরিকত্ব বিষয়ক মামলা, যার মাধ্যমে নাগরিকত্বহীনতা রোধে একটি ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়।
তিনি ‘‘ল’ অফ অ্যাবানডন্ড প্রোপার্টি’’, ‘‘সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ন্যাশনালিটিস ইন বাংলাদেশ’’ ও ‘‘ইন্টারপ্রেটিং ভেস্টেড প্রোপার্টি ল’’ ইন বাংলাদেশ- অ্যা কমপ্রিহেনসিভ রিভিউ’’সহ আইন বিষয়ক নানান গুরুত্বপূর্ণ বই লিখেছেন।