বাসস
  ২৭ জুলাই ২০২৫, ১৫:৪২
আপডেট : ২৭ জুলাই ২০২৫, ১৬:০০
আমার শহরে জুলাই অভ্যুত্থান

বগুড়ায় আন্দোলন প্রত্যাহারে চলছিল গণগ্রেপ্তার

ছবি : বাসস

কালাম আজাদ

বগুড়া, ২৭ জুলাই ২০২৫ (বাসস) :  ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে ২০২৪ সালের জুলাইজুড়ে নানা ধরনের চেষ্টা চালায়। গত ২৭ জুলাই বগুড়ায় কারফিউ ও গণগ্রেপ্তার অব্যাহত রাখে। একইসঙ্গে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিতে ছাত্র সমন্বয়কদের ওপর তীব্র চাপ সৃষ্টি করে। 

এর আগে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ফ্যাসিবাদী শাসনের শেষ ঘণ্টা বাজাতে আন্দোলনে যোগ দেন।

এরই মধ্যে বগুড়ার ৭টি সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্যরা গা-ঢাকা দেওয়া শুরু করেন। নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কিছু নেতাকর্মী সাতমাথা এলাকায় দেখা গেলেও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ সেদিন নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েন। 

জেলার ছাত্র সমন্বয়কদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আজকের দিনে ফ্যাসিবাদী সরকারের নির্দেশে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ছাত্র সমন্বয়কদের জীবন দুর্বিষহ করে তোলার সব উপায় কাজে লাগায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমন করতে গণগ্রেপ্তার অব্যাহত রাখে। এর মধ্যেই সাতমাথাসহ পুরো শহর জুড়ে খণ্ড খণ্ড মিছিল করে ছাত্র-জনতা। তারা মিছিল থেকে একদফা দাবি ঘোষণা করেন।

এছাড়া অন্যান্য দিনের মতো ২৭ জুলাই বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), পুলিশ, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা সেনাবাহিনীর সঙ্গে মাঠে অবস্থান নেন। 

তৎকালীন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে পুরো জেলায় যৌথ বাহিনীর টহল জোরদার করা হয়। এর মধ্যেও দুষ্কৃতিকারীরা শহেরর সিসিটিভি ক্যামেরা, বিভিন্ন সড়ক বিভাজক, সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ফাঁড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করে বলে অভিযোগ পুলিশের।

আর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সংশ্লিষ্টরা জানান, সে সময় ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করা প্রায় অসম্ভব ছিল। গোয়েন্দা সদস্যরা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা ছাত্র সমন্বয়কদের পেছনে লেগেছিল। ফ্যাসিবাদী সরকার, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা বগুড়া শহরে বিপ্লবী শিক্ষার্থীদের গুমের হুমকি দিয়েও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগ ছাড়া বাসায় না ফেরার প্রতিশ্রুতি নিজেদের দেন তারা। প্রতিবাদে ও বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দিতে বগুড়াবাসীকেও আহ্বান জানান।

তারা বলেন, জনসমক্ষে আন্দোলন প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত প্রকাশ করে গ্রেফতারের হুমকি এড়াতে এবং স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে সে সময় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আমাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। কিন্তু কোনো পরিস্থিতিতেই আমরা চাপের কাছে মাথা নত করিনি। এ কারণে ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে।

বগুড়ায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের অন্যতম নিয়তি সরকার নিতু বলেন, স্বৈরাচার সরকারের অনেক জুলুম-অত্যাচার সহ্য করে তখন আমরা আন্দোলন করেছি। তাক করা বন্দুককে চ্যালেঞ্জ করেছি। ওই সময়ের ঘটনাপ্রবাহ মনে পড়লে এখনো আতঙ্কে ঘুম ভেঙে যায়। দিন শেষে আন্দোলন সফল হয়েছে।