বাসস
  ২৭ জুলাই ২০২৫, ১৮:২১
আমার শহরে জুলাই অভ্যুত্থান

নরসিংদীতে আন্দোলন দমাতে গণগ্রেফতার অব্যাহত ছিল 

জুলাই অভ্যুত্থানের ছবি। ফাইল ছবি

নরসিংদী, ২৭ জুলাই ২০২৫ (বাসস) : গত বছরের ১৯ জুলাই নরসিংদী জেলা কারাগারে হামলার পর আন্দোলন দমাতে পুলিশ গণগ্রেফতার অভিযান শুরু করে। ১৮ থেকে ২৭ জুলাইয়ের মধ্যে জেলার বিভিন্ন স্থানে ১১টি মামলা দায়ের করে প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। ২৬ জুলাই রাতে ৩৪ জন শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়, যাদের অধিকাংশের বিরুদ্ধেই পূর্বে কোনো মামলা ছিল না। পরদিন ২৭ জুলাই আদালতের মাধ্যমে তাদের দেশের বিভিন্ন কারাগারে পাঠানো হয়।

পুলিশ জানায়, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ১৯ জন জামেয়া কাসেমিয়া কামিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী এবং বাকি ১৫ জন জেলার বিভিন্ন স্কুল-কলেজে অধ্যয়নরত।

গ্রেফতারকৃত একজন শিক্ষার্থীর পরিবার জানান, নরসিংদী ন্যাশনাল কলেজ অব এডুকেশনের এইচএসসি ২য় বর্ষের ছাত্র মো. রেদোয়ান মোল্লাকে ১৭ জুলাই জেলখানা মোড় এলাকা থেকে আটক করা হয়। ১৯ জুলাই আদালতে হাজির করা হলে তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়। পরদিন ২০ জুলাই জেলা কারাগারে হামলার ঘটনায় তাকে একটি পুরোনো মামলায় জড়িত দেখিয়ে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।

রেদোয়ানের বাবা সেলিম মোল্লা অভিযোগ করেন, “আমার ছেলে কোনো অপরাধে জড়িত নয়। সে শান্তিপূর্ণভাবে কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল। বন্ধুদের সঙ্গে সভা শেষে বাড়ি ফেরার পথে পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে মিথ্যা মামলায় ফাঁসায়। তার বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতাও ছিল না।”

শুধু রেদোয়ান নয়, গ্রেফতার হওয়া অধিকাংশ শিক্ষার্থীর পরিবার একই ধরনের অভিযোগ তুলেছেন।

নরসিংদী উদয়ন কলেজের অধ্যক্ষ মো. হাসিবুর রহমান অনিক বলেন, “পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ভয়ে শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিকভাবে ক্লাস করতে পারত না। রাস্তায় বের হলেই হয়রানির শিকার হতো। এমনকি আমাকে এক পুলিশ সদস্য আন্দোলনে জড়িত থাকার অভিযোগে হুমকি দিয়ে ২০ হাজার টাকা নেয়। তবুও আমরা বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে গেছি।”

জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ওই সময় পর্যন্ত আন্দোলনে অন্তত ২২ জন নিহত হন। তবে ২৭ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতাল ও ভুক্তভোগী পরিবারের সূত্রে গণমাধ্যম কর্মীরা ১২ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করতে পেরেছেন।

ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি ও সিনিয়র সাংবাদিক মো. আসাদুজ্জামান রিপন জানান, “কারাগারে হামলার পর প্রশাসন কঠোর অবস্থান নেয়। ২৭ জুলাই পর্যন্ত আমরা ১২ জন নিহতের বিষয়ে তথ্য পেয়েছিলাম। কিন্তু এর মধ্যে সাংবাদিকদেরও মারধরের শিকার হতে হয়, ফলে কাজ করাটা খুব কঠিন হয়ে উঠেছিল।”

জেলা প্রশাসন সুত্রে জানা যায়, নরসিংদীর শহীদদের স্মরণে নরসিংদী পৌর পার্কে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।