বাসস
  ২৭ জুলাই ২০২৫, ১৫:৩৮
আমার শহরে জুলাই অভ্যুত্থান

শহরের দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফিতি এঁকে প্রতিবাদ শুরু

ছবি : বাসস

মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন

ফেনী, ২৭ জুলাই ২০২৫ (বাসস) : জুলাইয়ের শেষ দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গণগ্রেপ্তার ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলায় ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়া আন্দোলনকারীরা একে অন্যের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রক্ষা করে আন্দোলনকে গতিশীল করার চেষ্টা করে। 

মিছিল-সমাবেশের পরিবর্তে আরেক শক্তিশালী প্রতিবাদের পথ বেছে নেয় আন্দোলনকারীরা। ২৭ জুলাই শহরের অলিগলিতে দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফিতি এঁকে প্রতিবাদ জানান তারা।     

২৭ জুলাই বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শহরের তাকিয়া রোড সংলগ্ন পানির ট্যাংকি রোডে ১০-১২ জন ছাত্র-ছাত্রী জড়ো হয়ে আঁকা শুরু করে গ্রাফিতি। অন্যান্যের মধ্যে প্রভা, দিবা, স্নেহা, ফারহা, তুবা, সাবা, নুহানা, মানিক, আজিম, সাগর, রাজমান, সোহেল ও নাঈম এই গ্রাফিতি অঙ্কনে অংশ নেন। 

প্রথমবারের মতো গ্রাফিতিতে ‘শিক্ষা-ছাত্রলীগ, এক সঙ্গে চলেনা’ আঁকা হয়। রং-তুলির আঁচড়ে ফুটে ওঠা প্রতিবাদে মাত্রা যোগ হয় কয়েকগুণ। দেওয়াল লিখন আর গ্রাফিতিতে সেজে ওঠে শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতেও সরকার পতনের ইতিহাস দেওয়ালে দেওয়ালে দৃশ্যমান।

সরেজমিনে দেখা যায়, ফেনী সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণ, শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়ক, ডাক্তার পাড়া, কলেজ রোড, মাস্টার পাড়া, মিজান রোড, রাজাঝির দিঘীর পাড় ও মুক্তবাজারসহ বিভিন্ন এলাকার দেয়ালে দেয়ালে সচেতনতার পাশাপাশি শোভা পায় শিক্ষার্থী ও স্বেচ্ছাসেবকদের আঁকা রঙিন গ্রাফিতি। জেলা শহর থেকে শুরু করে উপজেলাগুলোতেও তারুণ্যের রং-তুলিতে ফুটে উঠেছে গুলির সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানো আবু সাঈদের রক্তাক্ত সেই ছবি।

এসব গ্রাফিতিতে ‘৩৬ শে জুলাই’, ‘বিকল্প কে? আমি, তুমি, আমরা’, ‘বিকল্প কে? ছাত্র’, ‘কারার ঐ লৌহকপাট’, ‘এবার সভ্যতা আনব’, ‘স্বাধীনতা এনেছি, সংস্কারও আনবো’, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’, ‘ধর্ম যার যার, দেশ সবার’ ‘রাজনীতি করলে দুর্নীতি ছাড়েন, দুর্নীতি করলে রাজনীতি ছাড়েন’, ‘পলকে পলকে ইন্টারনেট শেষ’, ‘আমরা হার মানবো না’, ‘২৪-এর তারুণ্য’, ‘দেশকে ভালোবাসলে আগলে রেখো’, ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু, দুস্তর পারাবার হে’, ‘ভয়ের দেওয়াল ভাঙলো, এবার জোয়ার এলো ছাত্র-জনতার’, ‘রক্তাক্ত জুলাই ২০২৪’ সহ আন্দোলনের নানা চিত্র শোভা পাচ্ছে দেয়ালে দেয়ালে।

ফেনী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী রহমত আলী মানিক জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতিচারণ করে বাসসকে বলেন, ‘২০২৪ সালের ২৭ জুলাই দিবাগত রাতে ১০-১২ জন ছাত্র-ছাত্রীকে নিয়ে গ্রাফিতি আঁকতে যাই। জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ আলম মিলন ওই কর্মসূচিতে  স্প্রে রং কেনার জন্য ১ হাজার টাকা দেন। গ্রাফিতি আঁকা শেষ  হলে অংশগ্রহণকারী সবার মধ্যে প্রতিবাদী মনোভাব আরো প্রবল হয়ে ওঠে। গণমাধ্যম ও ফেসবুকে গ্রাফিতি আঁকার খবর ছড়িয়ে পড়লে ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীরা আমাদের খুঁজতে থাকে। ৫ আগস্ট সরকার পতনের মধ্য দিয়ে গ্রাফিতি সারা শহরে ছড়িয়ে পড়ে।’

ওই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী ফেনী সেন্ট্রাল হাই স্কুলের শিক্ষার্থী সিদরাতুল মুনতাহা স্নেহার মা সেদিনের স্মৃতি স্মরণ করে বাসসকে বলেন, ঝুঁকি জেনেও মেয়েকে আন্দোলনে যেতে দিয়েছিলাম। এখনো কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন হয়নি। আশা করছি ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত দেশ একদিন বৈষম্যমুক্ত হবে