শিরোনাম
ওবাইদুর রহমান
ঢাকা, ২৫ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : ২৪ এর গণঅভ্যুত্থান ছিল আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসনের রাজনৈতিক দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ। রাষ্ট্রযন্ত্রের অপব্যবহার, দেশের সম্পদ লুন্ঠন, গুম, হত্যা, নির্যাতন, ভোটাধিকার হরণ ও দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে দেশের ছাত্র-জনতার সম্মিলিত প্রতিরোধ।
জুলাই গণআন্দোলনে বলিষ্ঠ ও সক্রিয় ভূমিকা পালনকারী ছাত্রদলের অন্যতম শীর্ষ নেতা মো. তরিকুল ইসলাম তারিক বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে সরকার পতনের গণঅভ্যুত্থানে রূপ দিতে মাঠ পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. তরিকুল ইসলাম তারিক।
ছাত্রদলের অন্যতম শীর্ষ নেতা হিসেবে তিনি জুলাই আন্দোলন চলাকালে বিএনপির হাইকমান্ডের নির্দেশে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সমন্বয়কদের সঙ্গে যোগাযোগ এবং আন্দোলনকে গতিশীল রাখতে রাজপথে সক্রিয় অংশগ্রহণসহ আর্থিক বিষয়ে তদারকি করেন।
তিনি যশোর জেলার শার্শা থানার পাকশিয়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। মো. আব্দুল রহিম এবং ফুলমতি বেগম দম্পতির কনিষ্ঠ সন্তান তারিক। সাত ভাই বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। তিনি পাকশিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউ থেকে উচ্চ সিজিপিএ নিয়ে অনার্স এবং মাস্টার্স শেষ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সলিমুল্লাহ মুসলিম হল শাখা ছাত্রদলের সাবেক নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই তারিকের রাজনীতিতে সক্রিয়তা শুরু হয়। ২০১২ সালে ছাত্রদলের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ায় এসএম হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের হাতে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন তিনি। ২০১৩ সালে আবারও ছাত্রলীগের হামলায় হল থেকে রাতের বেলায় এক কাপড়ে বের করে দেওয়া হয় এবং তার সম্পদ লুট করা হয়। একই বছর তারেক রহমানকে নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদে বিক্ষোভে অংশ নেন।
২০১৪ সালের প্রহসনের নির্বাচন বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে সক্রিয় থাকায় কাকরাইলে যুবলীগের হাতে আটক ও লাঞ্ছনার শিকার হন। ২০১৬ সালে দুই দফায় মারধর, পুলিশের হাতে গ্রেফতার ও পরে মুক্তি পান।
২০২০ সালের ২৫ মার্চ বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দিনে তার গাড়ি বহর থেকেই কারওয়ান বাজার সিগন্যাল মোড় থেকে পুলিশ কর্তৃক আটক, শারীরিক নির্যাতন ও কারারুদ্ধ হন।
২০২৩ সালের ২৯ জুলাই বিএনপি ঘোষিত ঢাকা মহানগরীর সকল গুরত্বপূর্ণ প্রবেশমুখে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ ‘অবস্থান’ কর্মসূচি পালনকালে রাজধানীর মাতুয়াইল এলাকায় পুলিশের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন এবং এখনো নয়টি গুলি শরীরের বিভিন্ন স্থানে বহন করছেন।
২০২০ সালে করোনা মহামারির সময় তিনি ছাত্রদলের পক্ষ থেকে অসহায় মানুষদের মাঝে খাদ্য ও সহায়তা পৌঁছে দেন। বর্তমানে তিনি জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে কাজ করছেন।
হাসিনা সরকারের পতনের দিন ৫ আগস্ট সকালে শহীদ মিনারে জড়ো হতে গেলে পুলিশ গুলি-সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে আন্দোলনকারীদের ছত্র-ভঙ্গ করে দেয়। সেখানে ছিলেন তারিক। পরে পলাশী মোড়ে জড়ো হয়ে নেতাকর্মীদের নিয়ে সকাল ১১টায় রওনা দেন শাহবাগের পথে। কারফিউ ভেঙে নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে যাওয়ার পথে শাহবাগ থানার সামনে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর বাধার মুখে পড়েন তারিক। সে বাধা অতিক্রম করে শাহবাগ দখলে নেতৃত্ব দেন।
সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে (বাসস) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তারিকুল ইসলাম জুলাই গণঅভ্যুত্থানে তার অংশগ্রহণ, দলীয় অবস্থান ও অভিজ্ঞতার নানা দিক তুলে ধরেন।
বাসস : আপনি কত তারিখ এবং কিভাবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলনে জড়িয়ে গেলেন?
তরিকুল ইসলাম তারিক : সরকারি চাকরিতে ২০১৮ সালে কোঠা ব্যবস্থা বাতিল করে যে পরিপত্র জারি করা হয়েছিল সেটা পুনর্বহালের দাবিতে ২০২৪ সালে ৫ জুন থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটা আন্দোলন শুরু হয়। সেই আন্দোলনে প্রথম থেকেই অনলাইনে সরব ছিলাম এবং সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে অবজার্ভ করতে থাকি। পরবর্তীতে ২রা জুলাই থেকে সাংগঠনিক নির্দেশনার অপেক্ষা না করে নৈতিক বোধ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে নিজে সরাসরি আন্দোলনে যুক্ত হই। শাহবাগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে সাধারণ শিক্ষার্থীরাসহ চাকরি প্রত্যাশীদের সাথে আমার কিছু সহযোদ্ধা ছোট ভাই নিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করি।
বাসস : জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কী কী চ্যালেঞ্জ ছিল, আপনারা সেগুলো কীভাবে মোকাবিলা করেছিলেন?
তরিকুল ইসলাম তারিক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে যে কোনো আন্দোলনের সুতিকাগার বলা হয়। যারা জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত, তারা ঢাবিসহ কোনো ক্যাম্পাসেই কখনো গণতান্ত্রিক পরিবেশ পায়নি।
চায়ের আড্ডাতেও দুইজন বসলেও সেখানে আমাদের রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক সর্বাত্নকভাবে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছিল। এমন পরিস্থিতি আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিয়মিত ফেস করে এসেছি, যা কখনোই আমাদের অনুকূলে ছিল না।
বাসস : জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদবিরোধী সকল সংগঠন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করেছিল এটাকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
তরিকুল ইসলাম তারিক : জনগণের সকল যৌক্তিক দাবিতে প্রগতিশীল ছাত্ররাজনীতির সংগঠনগুলোর নীতিবোধ এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে তারা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করবে এটা আমি স্বাভাবিক বলে মনে করি। সেই জায়গা থেকেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সবসময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে ছিল এবং এবারের আন্দোলনেও আমরা সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছি।
বাসস : চলমান কোটা আন্দোলন কীভাবে সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নিল এবং এই পতনের প্রেক্ষাপটে আপনি ব্যক্তিগত ও দলীয়ভাবে কী কী মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন?
তরিকুল ইসলাম তারিক : বিগত সরকার মূলত একটি ফ্যাসিবাদী শাসন চালিয়েছিল যারা জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করে একক কর্তৃত্বে দেশ পরিচালনা করেছে।
দীর্ঘদিনের অপশাসনে জনগণ এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা দমবন্ধ পরিস্থিতিতে পড়েছিল। সেই নিপীড়নের অবসান ঘটাতে তারা একটি মুক্তির পথ খুঁজছিল, যার ভিত্তি গড়ে দেয় কোটা সংস্কার আন্দোলন। এই আন্দোলন প্রকৃতপক্ষে সরকার বিরোধী রূপ নেয় ১৪ জুলাই, যেদিন ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘কোটা মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিরা পাবে, নাকি রাজাকারের নাতি-নাতনিরা পাবে।’
বাসস : সরকার পতনের কোন কোন চ্যালেঞ্জগুলো ছিল, ছাত্রদল কীভাবে হ্যান্ডেল করেছিল?
তরিকুল ইসলাম তারিক : ছাত্রদল সব ধরনের চ্যালেঞ্জ দৃঢ়ভাবে মোকাবিলা করেছে। অতীতে রাজপথে আন্দোলন করতে গিয়ে আমাদের বহু সহযোদ্ধা গুম, খুন এবং অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই আমরা সবসময় প্রস্তুত ছিলাম। শুধু কোটা আন্দোলনের ৩৬ দিন নয়, বাস্তবতায় আমরা গত ১৭ বছর ধরেই নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়ছি।
২০২৪ সালে বৈষম্যের বিরুদ্ধে যখন সারাদেশে ছাত্রজনতার জাগরণ শুরু হয়, তখন আমরা শুরু থেকেই কৌশলগতভাবে (স্ট্র্যাটেজিক্যালি) এগিয়েছি। আমাদের অভ্যন্তরীণ পরিকল্পনা ছিল এই আন্দোলনকে একদফা তথা সরকার পতনের আন্দোলনে রূপান্তর করা। সে অনুযায়ী সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে থেকে আন্দোলনকে বেগবান করা এবং ধাপে ধাপে এক দফায় পরিণত করা ছিল আমাদের কৌশল।
বাসস : ১৫ জুলাই ঢাবি এলাকায় শিক্ষার্থীরে ওপর হামলা হলে আপনারা কীভাবে এটাকে ফেস করেছেন?
তরিকুল ইসলাম তারিক : ১৫ জুলাই আমি ও আমার সকল সহযোদ্ধা সকাল থেকে রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান করছিলাম। পরে দুপুরের দিকে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা বিজয় একাত্তর হলসহ ভিসি চত্বর এলাকায় হামলা চালালে আমরা সেখানেই ছিলাম। ভিসি চত্বরে নারী শিক্ষার্থীদেরও হামলার শিকার হতে হয়। ওই হামলায় আমাদের চার থেকে পাঁচজন সহযোদ্ধা আহত হন।
ছাত্রদল সেদিন ছাত্রলীগকে প্রতিহত করতে শহীদ মিনার এলাকায় সর্বাত্নক প্রস্তুতি নিয়ে উপস্থিত ছিল। শুধু বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্বের ঘোষণার অপেক্ষায় ছিলাম। সম্ভবত কৌশলগত কারণে সেদিন সরাসরি প্রতিরোধের কোনো নির্দেশনা আসেনি।
তবে শহীদুল্লাহ হলের সংঘর্ষ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ভিডিও ফুটেজেই প্রমাণ রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের একটি সক্রিয় অংশ সেখানে উপস্থিত ছিল এবং ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের মোকাবেলায় অংশগ্রহণ করেছিল।
বাসস : আপনি আন্দোলনে অন্যদের চেয়ে ভিন্ন কি কি করেছেন?
তরিকুল ইসলাম তারিক : আন্দোলনের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং দিকগুলোর একটি হলো আর্থিক যোগান নিশ্চিত করা। আন্দোলনে যোগাযোগ, যাতায়াত, চিকিৎসাসহ বিভিন্ন জরুরি প্রয়োজনে অর্থের দরকার। ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ভাই এতে সহায়তা দিয়েছেন। একবার বিকাশের দোকানে টাকা পাঠাতে গিয়ে পুলিশি ধাওয়ার শিকার হই। মনে হয়েছিল, কেউ হয়তো তথ্য দিয়েছিল। সেই ধাওয়ার ঘটনা এখনো মনে পড়লে গা শিউরে ওঠে।
বাসস : কোন সিদ্ধান্তগুলো আন্দোলনকে সফল করতে ভূমিকা রেখেছিল বলে আপনি মনে করেন?
তরিকুল ইসলাম তারিক : আন্দোলনের শুরুর দিন থেকেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং আমাদের ছাত্রদলের সাংগঠনিক অভিভাবক তারেক রহমান এই আন্দোলনকে সর্বাত্নকভাবে তদারকি করেছিলেন। ১৭ জুলাই ঢাবিসহ সকল ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে গেলে তখন একটা আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল যে আন্দোলনটি হয়তো এখানেই থেমে যাবে। কিন্তু সেই সংকটময় মুহূর্তে আমাদের দেশনায়ক তারেক রহমান দলীয়ভাবে আমাদেরকে মাঠে সর্বাত্নকভাবে সক্রিয় থাকার নির্দেশনা দেন। তার সেই দৃঢ় নেতৃত্ব ও সময়োপযোগী নির্দেশনার ফলে আমরা আবার সংগঠিত হই এবং আন্দোলনকে নতুন করে এগিয়ে নিয়ে যাই।
সেই সময়টাতে বিএনপির সকল অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের সকল নেতৃবৃন্দ সর্বাত্নকভাবে মাঠে ছিল পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যে শিক্ষার্থীরা তাদের অবদানকে আমরা অস্বীকার করতে পারবো না, তারাও মাঠে ছিল বলে আন্দোলনটা বেগবান হয়েছে ।
বাসস : আন্দোলনে যখন প্রতিদিন শত শত মানুষ মারা যাচ্ছিল, চোখের সামনে আপনি তো নিশ্চয়ই মৃত্যু দেখেছেন তখন আপনার মানসিক অবস্থা কেমন ছিল। এমন মৃত্যুতে আপনার মাঝে ভয় বা আতঙ্ক কাজ করেছিল কিনা?
তরিকুল ইসলাম তারিক : আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের পেটোয়া বাহিনী সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর যে নির্মম দমন-পীড়ন চালিয়েছিল, তার পূর্ণমাত্রা শুরু হয় ১৯ জুলাই থেকে। আমি সেদিন নীলক্ষেত এলাকায় অবস্থান করছিলাম এবং সরাসরি আন্দোলনে অংশ নিচ্ছিলাম। ২০ জুলাই নীলক্ষেত আন্দোলনে সন্ধ্যার দিকে হঠাৎ করে আকাশ থেকে হেলিকপ্টারের মাধ্যমে গুলি বর্ষণ শুরু হয়। আমার চোখের সামনেই একজন সহযোদ্ধার মাথায় গুলি এক পাশ দিয়ে ঢুকে আরেক পাশ দিয়ে মগজসহ বেরিয়ে যায়। সেই গুলির খোসাটা এখনো আমার কাছে রয়েছে, একটি নীরব সাক্ষী হিসেবে।
কিন্তু সবচেয়ে বিভীষিকাময় দিনটি ছিল ৪ আগস্ট। সকাল ১০টার দিকে আমি শাহবাগে যাই। সেইদিন আওয়ামী লীগ তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী ছাত্রলীগ, যুবলীগ বাহিনীকে সর্বশক্তি দিয়ে মাঠে নামায়। তাদের হাতে এত অবৈধ অস্ত্র ছিল যা আমার চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না। প্রথমে আমরা শাহবাগ থেকে পরিবাগে যাই। ছাত্রলীগ আমাদের ছত্রভঙ্গ করতে শাহবাগ অভিমুখে আসে, কিন্তু আমাদের প্রতিরোধে তারা প্রথমে পিছু হটতে বাধ্য হয়।
পরে আমরা আবার বাংলা মোটর দখলে নিই। তারা আমাদের হটিয়ে আবার দখল নেয়। এরপর আমরা আবার দখলে নিই। বারবার পাল্টাপাল্টি দখলের মধ্যে চলে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টার লড়াই। শেষ পর্যন্ত তারা পিছু হটে এবং কাওরান বাজারের দিকে চলে যায়। এরপর শুরু হয় আরেকটি বড় সংঘর্ষ। কাওরান বাজার থেকে আমরা যখন অগ্রসর হই, পুলিশ প্রথমে পিছু হটে এবং রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড ও ফাঁকা গুলি চালাতে থাকে।
সেদিনই গণভবন দখলের চিন্তা নিয়ে অগ্রসর হতে থাকি। আমরা তেজগাঁও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে গেলে ফার্মগেট ওভারব্রিজ থেকে আমাদের ওপর শুরু হয় নির্বিচার লেথাল ফায়ার। আমার চোখের সামনে লাশের পর লাশ পড়ে থাকতে দেখি। পাঁচ-ছয়টা লাশ একসাথে পড়ে থাকতে দেখে আমি স্তব্ধ হয়ে যাই।
এতটা নিষ্ঠুরতা কল্পনাও করতে পারিনি। সাহস পাইনি সেই লাশগুলো তুলতেও। আমি খুব কাছেই ছিলাম হয়তো আল্লাহ আমাকে সেই মুহূর্তে বাঁচিয়ে রেখেছেন, তাই আজও জীবিত আছি।
এই দুই দিন ২০ জুলাই ও ৪ আগস্ট আমার জীবনের সবচেয়ে যন্ত্রণাদায়ক অভিজ্ঞতা। আজও ঘুমের ভেতর সেই স্মৃতি ফিরে আসে, আমি ভেঙে পড়ি, কেঁদে ফেলি। এই দিনগুলো আমাকে আজও তাড়িয়ে বেড়ায়।
বাসস : আপনি ২ জুলাই থেকে বিজয় পর্যন্ত চলমান আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। এসময়গুলো সর্ম্পকে আপনা অভিজ্ঞতা জানতে চাই?
তরিকুল ইসলাম তারিক : আমার আন্দোলনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একটু বলতে চাই যে, শাহবাগে এক ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচির মাধ্যমে ২রা জুলাই আন্দোলনে সরাসরি জড়িয়ে পড়ি। এরপর ৭ ও ৮ জুলাই বাংলা ব্লকেড কর্মসূচিতে অংশ নিই, যেখানে আমি আমার সহযোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে উপস্থিত ছিলাম।
১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। ছাত্রলীগ ও বহিরাগত সন্ত্রাসীরা শিক্ষার্থীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। আমাদের নারী সহযোদ্ধারাও হামলার শিকার হন।
১৬ জুলাই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল একটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনের প্রতি নৈতিক সমর্থন জানায়। ওই দিন আমরা একটি বিশাল মিছিল করি। একই দিন আবু সাঈদের হত্যাকাণ্ড ঘটে, যার খবর পেয়ে কেন্দ্র থেকে আমাদের নির্দেশ দেওয়া হয় সুবিধামতো জায়গায় সংগঠিত হয়ে আন্দোলন চালিয়ে যেতে। আমি ও আমার সহযোদ্ধারা শহীদ মিনারে অবস্থান নিই এবং ছাত্রলীগের হামলা আশঙ্কায় প্রতিরোধের প্রস্তুতিও নিই।
১৭ জুলাই বায়তুল মোকাররমে গায়েবানা জানাজায় অংশ নিই। সেখান থেকে ফিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জানাজায় অংশ নিতে গেলে পুলিশ আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে বাধা দেয়। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরিচয় দেওয়ার পরও পুলিশ প্রবেশে বাধা দেয়। পরে আমি সলিমুল্লাহ মুসলিম হয়ে হয়ে ব্রিটিশ কাউন্সিলের পাশ দিয়ে গিয়ে ভিসি চত্বরে জানাজায় অংশ নিই।
১৮ জুলাই ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির দিন আমরা কাকরাইল এলাকায় ছাত্রদলের ব্যানারে মিছিল করি ও অবস্থান নিই। সেদিন স্লোগানে স্লোগানে আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাই। ১৯ ও ২০ জুলাই আমরা নীলক্ষেতে আন্দোলনে সক্রিয় থাকি।
৩০ জুলাই ছাত্রদলের সাংগঠনিক অভিভাবক তারেক রহমানের পরামর্শে এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশে ফেসবুক প্রোফাইল লাল করার কর্মসূচি পালন করি। এটি ছিল শোক পালনের এক বিকল্প রূপ, সরকারের ফ্যাসিস্ট কর্মকান্ডের প্রতিবাদস্বরূপ।
৩১ জুলাই পালিত হয় মার্চ ফর জাস্টিস। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে হাইকোর্টমুখী যাত্রায় অংশ নিই। হাইকোর্ট মাজার গেটের কাছে আমাদের আটকানো হয় এবং কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়। শিক্ষক ও সহযোদ্ধাদের মুক্তির দাবিতে আমরা সেখানে অনড় থাকি। পরে শিক্ষকরা ছাড়া পেলে আমরা তাদের পরামর্শে পিছু হটি।
এই কর্মসূচির মূল বার্তা ছিল দেশজুড়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর যে হত্যাযজ্ঞ ও দমন-পীড়ন চালানো হয়েছে, তার ন্যায়বিচার দাবি। এ আন্দোলন ছিল একটি সম্মিলিত প্রতিবাদ, যেখানে প্রত্যেক মানুষ তার ক্ষোভ ও প্রতিবাদ প্রকাশ করেছে। ১ আগস্ট আন্দোলনে নিহত শহীদদের স্মরণে আয়োজিত হয় ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ নামের কর্মসূচি। এই কর্মসূচি শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত হয়। আমি একাই শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে যাই। সেদিন আমার কোনো সহযোদ্ধা আমার সাথে ছিল না।
২ আগস্ট, এই দিনটি ছিল অনেক কঠিন। জুম্মার দিন হওয়ায় বিশেষ প্রস্তুতির প্রয়োজন ছিল। আমি ছিলাম সায়েন্স ল্যাব এলাকায়। জুম্মার নামাজ শেষে আমরা ‘গণদোয়া ও গণমিছিলের’ পরিকল্পনা করি। কিন্তু সেখানে আগেই বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অবস্থান নেয়, যেন এক রকম যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়।
মনে হচ্ছিল কর্মসূচি পালন করা সম্ভব হবে না। তবুও আমরা কিছুক্ষণ বসে পরামর্শ করি এবং সিদ্ধান্ত নিই যে আমরা পিছু হটবো না। আমরা সাহস করে গণদোয়া ও মিছিলের কর্মসূচি পালন করি।
আমাদের পরে আরও একটি সংগঠনও সেখানেই কর্মসূচি পালন করে।
৩ আগস্ট সকাল থেকেই আমরা জড়ো হতে থাকি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে।
এক সময় ছাত্রদলের প্রায় ৩০-৪০ জন নেতাকর্মী একত্রিত হই। তখন হঠাৎ করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী আমাদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এটি ছিল আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ে আমাদের উপর সরাসরি আক্রমণ।
আমরা আত্নরক্ষার্থে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুলি এবং পরে মিছিল নিয়ে শহীদ মিনারে পৌঁছাই। সময় ছিল আনুমানিক ১১টা ৪৫ মিনিট থেকে ১২টার মধ্যে। আমরা শহীদ মিনারে যোগ দিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করি।
বাসস : আপনার কাছে পাঁচ আগস্টের সকাল থেকে বিজয় পর্যন্ত ঘটনা জানতে চাই।
তরিকুল ইসলাম তারিক : ৫ আগস্টের আন্দোলনের দিনটি ছিল ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির অংশ। আমাদের সাংগঠনিক নির্দেশনা ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার এলাকায় জড়ো হওয়া। আমি সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে সেখানে পৌঁছাই। কিন্তু এর আগেই পুলিশ অবস্থান নেয়, আমাদের দাঁড়াতে দেয়নি। তখনই শুরু হয় লাঠিচার্জ, রাবার বুলেট, ফাঁকা গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড যার ফলে আমরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যাই, অনেককে আহত অবস্থায় আটক করা হয়।
পরে আমি পলাশী বাজারের দিকে যাই। সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের পাশে, একটি বৈদ্যুতিক খুঁটির পাশে আমরা ৮-১০ জন অবস্থান নিই। সেনাবাহিনীর একটি টহল দল শুরুতে কিছুটা বাধা দিলেও পরে আমরা বুঝি, তারা আমাদের প্রতি সহানুভূতিশীল। তখন আজিমপুর বাসস্ট্যান্ডের দিক থেকে পুলিশ এগোতে চেষ্টা করে, ধীরে ধীরে আমাদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ৪০-৫০ জন জড়ো হলে, আমরা সিদ্ধান্ত নিই শাহবাগ অভিমুখে রওনা দেব।
১১টার দিকে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে আমরা শাহবাগের দিকে রওনা দিই। তখন লাইনে মানুষের সংখ্যা ক্রমেই বাড়তে থাকে। সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের মেইন গেট থেকে শুরু করে ফুলার রোড, ব্রিটিশ কাউন্সিল, কলাভবন, রাজু ভাস্কর্য, সেন্ট্রাল মসজিদ, কবি নজরুলের মাজার হয়ে চারুকলার দিকে যাই।
চারুকলার কাছে পৌঁছালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্বিতীয়বার বাধা দেয়। আমরা বলি, ‘আপনারা গুলি করলেও যাব, কারণ এই জীবন আমাদের কাছে জীবন নয়।’ আমি হাত প্রসারিত করে সামনে এগিয়ে যাই, সঙ্গে আরও ১৫-২০ জন। শাহবাগ থানা সংলগ্ন এলাকায় পুলিশ আমাদের বাধা দেয়। আমি হাতে থাকা লাঠি নিয়ে তেড়ে যাই এসময় বাকিরাও সাড়া দেয়। এক পর্যায়ে পুলিশ করজোরে ক্ষমা চেয়ে পিছু হটে। সেনাবাহিনীও আমাদের অনুরোধ করে লাঠি ফেলে যেতে।
সাড়ে ১১ টা থেকে পৌনে ১২ টার মধ্যে আমরা শাহবাগে পৌঁছে যাই। শাহবাগ তখন আমাদের দখলে।
আমরা সেনাবাহিনীকে ফুল দিয়ে বরণ করি। এরপর সাংবাদিকদের কাছ থেকে জানতে পারি ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালিয়ে গেছে। ঠিক সেই মুহূর্তে আনন্দে কান্নায় ভেঙে পড়ি।
বাসস : এক দফার আন্দোলনটা সফল না হলে পরবর্তীতে শোনা যাচ্ছিল যে দেশ হয়তো গৃহযুদ্ধের দিকে আগাত। এটাকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন।
তরিকুল ইসলাম তারিক : আন্দোলন সফল না হলে গৃহযুদ্ধ লাগতে পারে বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি না। বিগত ১৭ বছর যেটা চলছে এই আন্দোলনে সম্মুখ সারিতে আমরাই ছিলাম। সুতরাং আন্দোলন সফল না হলে অপারেশনটা বিএনপি এবং তার অঙ্গ-সংগঠনের নেতৃবৃন্দের উপরে চলতো।
বাসস : আচ্ছা আমরা একটু আপনাকে বলি নেট অফকালীন সময়ে আপনারা কীভাবে যোগাযোগ করেছিলেন ?
তরিকুল ইসলাম তারিক : নেট বন্ধ থাকার সময় আমাদের যোগাযোগ ছিল অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। বিরোধী দলের রাজনীতি করায় আমরা সাধারণত হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রামের মতো নিরাপদ অ্যাপে যোগাযোগ করতাম।
কিন্তু যখন পুরোপুরি ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যায়, তখন বাধ্য হয়ে রেগুলার মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করতে হয়েছিল। সেই সময় আমাকে প্রতিদিন ৩-৪ বার ফোন করে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার এবং ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ভাই। তারা আমাকে মাঠপর্যায়ে কীভাবে কাজ করতে হবে তা নির্দিষ্টভাবে বুঝিয়ে দিতেন, আর আমি সে অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করতাম।
বাসস : আপনি ব্যক্তিগতভাবে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। জুলাই আন্দোলনে আপনার পরিবার বা পরিবারের সদস্যরা কোনো ধরনের হয়রানি বা হামলার শিকার হয়েছিল কি না?
তরিকুল ইসলাম তারিক : হ্যাঁ, এটা বলতে গেলে নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়। আমি যখন সরকারবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে সক্রিয় থাকি, তখন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা আমার পরিবারকে নানাভাবে ডিস্টার্ব করতো। তবে আমার ভাইয়েরা যেহেতু প্রশাসনে কর্মরত, সে কারণে তুলনামূলকভাবে আমরা কিছুটা সুরক্ষিত থেকেছি।
যদিও তারাও হয়রানির শিকার হয়েছেন। তাদের ভালো পোস্টিং দেওয়া হয়নি, প্রমোশন আটকে রাখা হয়েছে, অনেক সময় ১০-১৫ দিনের মাথায় বারবার বদলি করা হয়েছে। এটা স্পষ্টভাবে প্রতিহিংসামূলক প্রশাসনিক হয়রানি ছিল।
বাসস : ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ, ৯০-এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন এবং ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থান এই তিনটি ঐতিহাসিক মুহূর্তকে আপনি কীভাবে একই সূত্রে গাঁথবেন এবং কোন দিক দিয়ে এগুলো ভিন্ন?
তরিকুল ইসলাম তারিক : তিনটি অভ্যুত্থান তিনটি ভিন্ন প্রেক্ষাপটে ঘটেছে, তবে একটির সাথে আরেকটি মূল সুতায় বাঁধা, সেটা হলো গণমানুষের প্রতিরোধ।
৭১ ছিল জাতীয় মুক্তির সংগ্রাম। একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠনের প্রশ্নে সশস্ত্র বিপ্লব। এটি ছিল জাতিসত্তার অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই।
আর ৯০ ছিল সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন এখানে মূল টার্গেট ছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও জনগণের ভোটাধিকার রক্ষা।
অপরদিকে ২৪ এর গণঅভ্যুত্থান ছিল আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসনের রাজনৈতিক দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ। রাষ্ট্রযন্ত্রের অপব্যবহার, দেশের সম্পদ লুন্ঠন, গুম, হত্যা, নির্যাতন, ভোটাধিকার হরণ ও দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে দেশের ছাত্র-জনতার সম্মিলিত প্রতিরোধ।