শিরোনাম
মাহামুদুর রহমান নাজিদ
ঢাকা, ১৮ জুলাই, ২০২৫ (বাসস): ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতিতে যে বিস্ফোরক গণজাগরণ ঘটে তা শুধু একটি প্রজন্মের ক্ষোভই নয় বরং রাষ্ট্র ক্ষমতার মুখোমুখি দাঁড়ানোর এক অনন্য সাহসী প্রয়াস। এই আন্দোলনের সম্মুখসারির এক সংগঠক মেহেদী হাসান। চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার এক সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসা সরকারি কবি নজরুল কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের এই শিক্ষার্থী অল্প বয়সেই হয়ে ওঠেন স্বাধিকার, বাকস্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের এক আপসহীন কণ্ঠস্বর। তিনি শুধু রাজপথে ছিলেন না, ছিলেন ছাত্রদের ভরসা, সিদ্ধান্ত ও নেতৃত্বের নির্ভরতা।
‘আমরা বাকস্বাধীনতার জন্য বুলেটের সামনে দাঁড়িয়েছি’ তাঁর কথায় ফুটে ওঠে একটি ভয়াবহ সময়ের নির্মমতা, যখন কোটা সংস্কার আন্দোলনের যৌক্তিক দাবিকে সরকার অগ্রাহ্য করে, বরং শিক্ষার্থীদের রাজাকারপুত্র বলে অবমাননা করে। ছাত্রসমাজের হৃদয়ে তখনই জন্ম নেয় প্রতিরোধের আগুন। ছাত্রলীগ ও পুলিশের দমন-পীড়ন, ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া, অপহরণ ও নির্যাতন সবকিছুর মুখে দাঁড়িয়ে মেহেদী ও তাঁর সহযোদ্ধারা সাহসিকতার সাথে আন্দোলন চালিয়ে যান ।
সম্প্রতি তিনি জাতীয় বার্তা সংস্থা বাসস এর সাথে সাক্ষাৎকারে জুলাই আন্দোলনের স্মৃতিচারণ করেছেন। সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে আন্দোলনের সূচনা, সাংগঠনিক কাঠামো, পারস্পরিক যোগাযোগ, রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের ভূমিকা, শহীদদের আত্মত্যাগ এবং সর্বোপরি নতুন প্রজন্মের জন্য মেহেদীর বার্তা - অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা নোয়াবার নয়, বরং মাথা উঁচু করে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানোই একটি জাতির গৌরব।
বাসস : জুলাই আন্দোলনে আপনাদের মূল প্রেরণা কী ছিল?
মেহেদী হাসান : আমাদের আন্দোলনের মূল প্রেরণাটি এসেছে বাকস্বাধীনতা হরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ থেকে। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে আমরা স্বাধীনভাবে কিছু বলতে বা প্রতিবাদ করতে পারতাম না। যেখানে প্রতিবাদ করতাম, সেখানেই বাধার মুখে পড়তে হতো।
আমাদের এই প্রেরণার জন্ম কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে, যা পরবর্তীতে ফ্যাসিস্ট সরকার বিরোধী বৃহত্তর আন্দোলনে রূপ নেয়। তখন আমরা দেখি আমাদের ভাইয়েরা দেশের জন্য, মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য বুলেটের সামনে বুক পেতে দাঁড়িয়ে আছে। সেখান থেকেই আমরা সাহস পাই।
আমরা বিশ্বাস করতে শুরু করি আমরাও পারি এই স্বৈরশাসন হটাতে। শহীদ আবরার ফাহাদসহ অনেক ভাইয়ের রক্ত ছিল আমাদের পথ চলার অনুপ্রেরণা। তাঁদের আত্মত্যাগ, সাহস এবং ন্যায় সংগ্রামের স্মৃতি আমাদের প্রতিনিয়ত সাহস জুগিয়েছে।
বাসস : জুলাই আন্দোলনের সূত্রপাত কীভাবে হয়েছিল?
মেহেদী হাসান : জুলাই আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল কোটা সংস্কারের দাবিতে। ২০১৮ সালে প্রথম এই দাবিতে আন্দোলন হলেও, ২০২৪ সালে সরকার আবার আগের অবস্থানে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করলে আমরা রাজপথে নামি। কারণ, একজন গরিব ঘরের মেধাবী ছাত্র যখন কোটার কারণে পেছনে পড়ে যায় এবং অযোগ্য কেউ শুধু পরিবারের পরিচয়ে সুযোগ পেয়ে যায়, তখন সেটি আমাদের বিবেককে নাড়া দেয়। ন্যায্য অধিকারের জন্য যখন রাজপথে নামি তখন আপনারা জানেন স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা আমাদের ন্যায্য অধিকারকে উপেক্ষা করে বলেন- মুক্তিযুদ্ধের নাতিপুতিরা মেধাবী নাতো রাজাকারের নাতিপুতিরা মেধাবী, অর্থাৎ তিনি এই দেশের হাজার হাজার মেধাবী ছাত্রছাত্রীদেরকে বানিয়ে দিলেন রাজাকারের নাতিপুতি এবং কোটার বৈধতা দিয়ে দিলেন, তারই পরিপ্রেক্ষিতে রাতে যখন শিক্ষার্থীরা- তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার বলে স্লোগান দেয় এবং পরবর্তী দিন সকালবেলায় ছাত্রলীগ এবং পুলিশ লীগের অতর্কিত হামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি জায়গায় হাজার হাজার শিক্ষার্থীরা আহত হয়, এবং সারাদেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অনেক শিক্ষার্থীরাও সেদিন আহত হয়, তখনই মূলত এই ছাত্র সমাজের টনক লড়ে ওঠে, তখনই সবাই বুঝতে পারেন এই স্বৈরাচারী সরকারকে হঠাতে হবে এবং এটি পরবর্তীতে জুলাই আন্দোলনে পরিণত হয়।
বাসস: ক্যাম্পাসের জুলাই আন্দোলন কীভাবে শুরু হয়েছিল?
মেহেদী হাসান : শুরুতে জুলাই আন্দোলন সীমাবদ্ধ ছিল ক্যাম্পাসেই। তখন সাধারণ মানুষ আন্দোলনের গুরুত্ব ততটা বুঝতে পারেনি। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এটি সার্বজনীন আন্দোলনে রূপ নেয় এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ একাত্মতা প্রকাশ করে।
আমি জুলাই মাসের প্রথম দিক থেকেই আন্দোলনে যুক্ত হই। ৭ জুলাই আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করি। কিছু সিনিয়র ভাই আমাকে বলেন ‘মেহেদী, এই আন্দোলনে তোমার প্রয়োজন। উল্লেখযোগ্য আমার মাসুদ ভাই, মনিরুজ্জামান মনির ভাই, জাকারিয়া ভাই, সাগর ভাই এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নূর নবী ভাই, এরপর হান্নান মাসুদ ভাইয়ের মাধ্যমে আমি সমন্বয়ক গ্রুপে যুক্ত হই এবং নিয়মিত আন্দোলনে অংশ নেই এবং শুরু থেকে আমার পাশে ছিল বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
বাসস : আপনার ক্যাম্পাসে জুলাই আন্দোলনে কতজন শহীদ এবং আহত হয়েছিলো?
মেহেদী হাসান : আমাদের কলেজের তিনজন শহীদ হন - কাউসার ভাই, জিহাদ হোসেন ভাই ও ওমর ফারুক ভাই। তাঁদের মধ্যে দুইজন ছিলেন আমার সিনিয়র, একজন আমার সহপাঠী। তাঁরা শুরু থেকেই আন্দোলনের প্রথম সারিতে ছিলেন, আর একজন জুনিয়রসহ গুরুতর আহত হয় ৫-৭ জন। আর বিভিন্নভাবে আহত হয় দুই শতাধিক যাদের মধ্যে একজন এখনো ভালো করে হাঁটতে পারেন না।
বাসস : আন্দোলনে ছাত্রলীগের বাধা উপেক্ষা করে কীভাবে আন্দোলন চালিয়েছেন? আপনি কীভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন?
মেহেদী হাসান : ৮ জুলাই ছাত্রলীগ আমাদের প্রথম বাধা দেয়। প্রতিদিনের কর্মসূচির মতো ৮ জুলাই আমাদের কর্মসূচি ছিল গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট ব্লক করা, কর্মসূচি থেকে ফেরার পথে আমার সাথে ছিল আরমান আজাদ ভাই, আরমান আজাদ ভাইয়ের সামনে আমাকে মুরগীটোলা মোড় থেকে তুলে নেওয়া হয়,আরমান ভাই বাধা দিলে বলা হয় আমার থেকে কোটা আন্দোলন বুঝবে এবং সিনিয়র জুনিয়র কিছু সমস্যা ছিল সেটা সমাধান করব, আমাকে তারা হলে নিয়ে যায়,সকাল থেকে আন্দোলন করে না খেয়ে সারাদিন খুব ক্লান্ত ছিলাম, এটা বলাতে তারা আমাকে একটি রুটি এনে দেয় এবং পানি দেয় আমাকে এক পক্ষ বলতেছে তুই এগুলা খা তাহলে তোর ভালো লাগবে আর অন্য পক্ষ থেকে বলতেছে ক্লান্ত শরীরে মারলে অসুস্থ হয়ে যাবে আগে খাওয়াই নে তারপর বিভিন্ন কথাবার্তার মাধ্যমে আমাকে শারীরিক এবং মানসিকভাবে টর্চার শুরু করে,বারবার তাদের কাছে অনুরোধ করার পরও তখন আমি তাদের নির্যাতন থেকে রেহাই পাইনি, আমাকে হলে নিয়ে আসা হইছে এটা জানতে পারে কলেজের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সকল সদস্যরা, অনেকেই তখন ফোন দেয় কিন্তু ফোন না ধরে তাদেরকে মেসেজ দেওয়া হয় আমি বাসার দিকে চলে যাচ্ছি কিন্তু তখন আমি হলে তারা আমাকে বেধড়ক মারধর করে এবং পরবর্তীতে ওইদিন এক ছাত্রলীগ অসুস্থতার কারণে মারা যায় সেই খবর শুনে তাদের ভিতর এক ধরনের ভয় সৃষ্টি হয়, এবং পরবর্তীতে আমাকে আন্দোলনে না থাকার জন্য হুমকি দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং দুই থেকে তিনদিন আমি অসুস্থতায় ভুগী, অসুস্থ থাকা অবস্থায় অন্যদের মাধ্যমে আন্দোলন চালিয়ে নেই এবং পরবর্তীতে আমি নিজেই সশরীরে আন্দোলনে যুক্ত হই, যখন পরিস্থিতি খুব খারাপ হয় এবং চারিদিকের হুমকির কারণে আমি আর ক্যাম্পাসে যেতে পারি না, তখন আমাদের কৌশল পরিবর্তন করে বন্ধু বা আত্মীয়দের বাসা থেকে আন্দোলন পরিচালনা করতাম।
বাসস : জুলাই আন্দোলনে কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাথে কীভাবে যোগাযোগ করতেন?
মেহেদী হাসান : আপনারা যারা কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ছিলাম, আমাদের বিভিন্ন মেসেঞ্জার গ্রুপ এবং হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছিল এই গ্রুপের মাধ্যমে আমরা নিত্যদিনের খবরা-খবর আদান প্রদান করতাম এবং সিনিয়রদের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতাম, আর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নূর নবী ভাই ও মুন্না ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ রাখতাম। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে এবং সোহরাওয়ার্দী কলেজ সাথে নিয়ে দুইটি কলেজ এবং একটি বিশ্ববিদ্যালয়সহ আমরা একসাথে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতাম।
বাসস : জুলাই আন্দোলনের সময় ইন্টারনেট যখন বন্ধ ছিল তখন কীভাবে যোগাযোগ করতেন? ছাত্র সংগঠনগুলো কীভাবে সহায়তা করেছে?
মেহেদী হাসান : ইন্টারনেট বন্ধ থাকলেও আমরা ফোনে যোগাযোগ রাখতাম। রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠন আমাদের সহায়তা করেছে যেমন ইসলামী ছাত্রশিবির আমাদের ব্যানার তৈরি করে দিয়েছিল এবং আন্দোলন চলাকালীন খাবার পানির ব্যবস্থা করে দিত এবং অন্যান্য ছাত্র সংগঠন ভাইয়েরা সবসময় পাশে থেকে মানসিক সাপোর্ট এবং কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রাজপথে ছিল।
বাসস : জুলাই আন্দোলনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভূমিকা কেমন ছিল?
মেহেদী হাসান : আমাদের আন্দোলনের সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। ভাইয়েরা রাস্তায় রক্ত দিচ্ছে, এই দৃশ্য আমাদের নতুন করে সাহস দিতো। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকেও আমরা আন্দোলনের খবর পেয়েছি ফেসবুকের মাধ্যমে। ইন্টারনেট বন্ধ থাকলেও ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে পরে শেয়ার করেছি, তা আমাদের মনোবল বাড়িয়েছে।
আপনারা জানেন আবু সাঈদকে হত্যার ভিডিও ফুটেজ এবং মুগ্ধসহ আরো অন্যান্য ভাইদের ভিডিও ফুটেজ গুলো যখন আমরা সোশ্যাল মিডিয়ার বদৌলতে দেখতে পেয়েছি, তখন দেশের সর্বস্তরের জনতা রাজপথে নেমে আসে, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং সেই সব দেখে সারাদেশের ছাত্র জনতা আন্দোলন মুখী হয় এবং নিজেদের অস্তিত্বের জানান দেয় এবং প্রতিজ্ঞা করে এই দেশকে স্বৈরশাসন মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ।
বাসস : জুলাই আন্দোলনে আপনাদের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং সময় কখন ছিল?
মেহেদী হাসান : ১৯ জুলাই আমাদের ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার সময় পুরান ঢাকায় রায়সাহেব বাজারে দুই ভাই গুলিবিদ্ধ হন ও অনেকে আহত হন এবং ২জন ভাই কলেজ এরিয়াতে এবং দুইজন অন্য স্থানগুলোতে আহত হন ও পাঁচজন গ্রেফতার হন। এই সময়টা আমাদের খুব চ্যালেঞ্জিং ছিল। সেদিন আমার ভাইদের লাশ পর্যন্ত ছুঁয়ে দেখার সুযোগ দেয়নি, বরঞ্চ যারা লাশের কাছে গিয়েছে তাদের হত্যাকারী বলে ধরে নিয়ে গেছে।
বাসস: আন্দোলনের সময় পারিবারিক ভাবে বা ব্যক্তিগত ভাবে আপনি কোন হুমকির মুখে পড়েছিলেন বা চাপে ছিলেন কিনা?
মেহেদী হাসান : আমার পরিবার শুরুতে আন্দোলন দেখে দুশ্চিন্তায় ছিল কিন্তু আমার মেজো ভাই হাসান মাহমুদ, যিনি প্রবাসে ছিলেন, তিনি আমাকে বলেছিলেন, ‘তোকে আমরা দেশের জন্য কুরবানি দিয়েছি। আমরা চাই, দেশের মানুষ বাকস্বাধীনতা ফিরে পাক। স্বাধীনভাবে যেন বাঁচতে পারে’ সেই কথাই আমাকে সবচেয়ে বেশি সাহস দিয়েছে। পরবর্তীতে পারিবারিক চাপের কারণে ১৭ জুলাই আমাকে বাড়ি যেতে বাধ্য করা হয় কিন্তু ১৯ জুলাই আমি আমার ছোট আঙ্কেলের সহায়তায় অ্যাম্বুলেন্স করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হই এবং পথে আন্দোলনকারী চারজন রক্তাক্ত ভাইকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকেল নিয়ে আসি, যখন ভাইয়েরা গুলি খাচ্ছিলেন নিহত হচ্ছিলেন সে সব দেখেই, তখন আর কোনো ভয় কাজ করেনি। বরং তখন প্রতিশোধের আগুন দাউদাউ করে জ্বলে উঠে অন্তরে, তখন আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ এবং পুলিশ লীগের সকল রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে আন্দোলনের শামিল হই।
বাসস : পুলিশের সাথে আপনাদের কখন সংঘর্ষ হয়েছিল?
মেহেদী হাসান : পুলিশের সাথে সবচেয়ে তীব্র সংঘর্ষ হয়েছিল রায়সাহেব বাজার কোর্টের সামনে। এছাড়া ছাড়া প্রতিদিন জিরো পয়েন্টে যাওয়ার আগেই তাদের সাথে সংঘর্ষ হতো, তখন সকল বাধা উপেক্ষা করে আমরা ঠিকই আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছে যেতাম এবং আমাদের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতাম, পরবর্তীতে আমাদের ক্যাম্পাস এবং ভিক্টোরিয়া পার্কে পুলিশ মোতায়ন করে যা আমাদের বেশি বাধাগ্রস্ত করে।
বাসস : নতুন বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে আপনি কি বার্তা দিতে চান?
মেহেদী হাসান : আমি আমাদের ক্যাম্পাসের সমন্বয়ক ছিলাম। অনেক বাধা পেরিয়ে আমরা একটি স্বৈরশাসনের পতন ঘটাতে পেরেছি এটাই আমাদের বড় অর্জন। তরুণদের প্রতি আমার একটাই অনুরোধ, কখনো কারো কাছে মাথা নোয়াবো না। সব সময় অন্যায় ও দুর্নীতি এবং অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতে হবে, একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে সাদাকে সাদা এবং কালোকে কালো বলতে হবে এবং আগামীতে বাংলাদেশে যেন কোন স্বৈরাচার তৈরি হতে না পারে তার জন্য সব সময় সচেতন থাকতে হবে, জুলাইয়ের স্প্রিরিট বুকে লালন করে আগামীতে দেশ বিনির্মাণে সবসময় সহযোগিতা করতে হবে।
বাসস : বর্তমানে আপনাদের ক্যাম্পাসের রাজনৈতিক সহাবস্থান কেমন?
মেহেদী হাসান : আগে আমাদের ক্যাম্পাসে শুধু একটি ছাত্রসংগঠনের আধিপত্য ছিল, কিন্তু এখন সব রাজনৈতিক সংগঠন একসাথে কাজ করছে। এটি রাজনৈতিক সৌন্দর্যেরই উদাহরণ। ক্যাম্পাসের সকল রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত হচ্ছে, সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শিক্ষার্থীবান্ধব কাজ করতে পারছে ও শিক্ষার্থীদের সকল সমস্যার সমাধানের সবাই এক হয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
বাসস : আপনাকে ধন্যবাদ।
মেহেদী হাসান : আপনাকে ও বাসসকেও ধন্যবাদ।