শিরোনাম

ঢাকা, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন সামরিক বাহিনীর ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক দল ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (ইউএসডিপি) দেশটিতে অনুষ্ঠিত প্রথম ধাপের নির্বাচনে বিপুল ব্যবধানে জয় পেয়েছে বলে দাবি করেছে। তবে গণতন্ত্রপন্থী পর্যবেক্ষকরা সতর্ক করে বলেছেন, জান্তা-পরিচালিত এই নির্বাচন সামরিক শাসন আরও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেবে।
ইয়াঙ্গুন থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলকারী সেনাবাহিনী রোববার মাসব্যাপী ধাপে ধাপে নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ে ভোটগ্রহণ শুরু করে। সামরিক নেতৃত্বের দাবি, এই নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
ইউএসডিপির এক জ্যেষ্ঠ নেতা এএফপিকে বলেন, ‘যেসব টাউনশিপে ভোট গণনা শেষ হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে মোট ১০২টি আসনের মধ্যে আমরা ৮২টি নিম্নকক্ষের আসনে জয় পেয়েছি।’ তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ কথা বলেন।
এই তথ্য অনুযায়ী, রোববার ভোট হওয়া নিম্নকক্ষের আসনগুলোর ৮০ শতাংশের বেশি ইউএসডিপির দখলে গেছে। দলটি রাজধানী নাইপিদো’র আটটি টাউনশিপেও জয় পেয়েছে বলে ওই কর্মকর্তা জানান।
বিশ্লেষকদের মতে, ইউএসডিপি কার্যত সামরিক বাহিনীর একটি বেসামরিক মুখোশ হিসেবে কাজ করে।
এর আগে ২০২০ সালের নির্বাচনে অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) ইউএসডিপিকে বিপুলভাবে পরাজিত করেছিল। তবে অভ্যুত্থানের পর এনএলডি দলটি বিলুপ্ত করা হয় এবং রোববারের নির্বাচনে তারা অংশ নেয়নি।
নোবেলজয়ী অং সান সু চি অভ্যুত্থানের পর থেকেই আটক রয়েছেন। ওই অভ্যুত্থানের পর দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়।
মানবাধিকারকর্মী, পশ্চিমা কূটনীতিক এবং জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান এই নির্বাচনকে নিন্দা জানিয়েছেন। তাদের অভিযোগ, মতপ্রকাশের ওপর কঠোর দমন-পীড়ন চালানো হয়েছে এবং প্রার্থী তালিকা সামরিকপন্থীদের দিয়ে সাজানো হয়েছে।
লন্ডনভিত্তিক থিংক ট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (আইআইএসএস)-এর গবেষণা ফেলো মরগান মাইকেলস বলেন, ‘ইউএসডিপির আধিপত্য বিস্তার করা অস্বাভাবিক নয়।’
তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য নয়। আগেভাগেই বিভিন্ন দল নিষিদ্ধ করা হয়েছে, কোথাও ভোটারদের ভোট দিতে আসতে দেওয়া হয়নি, আবার কোথাও ভয়ভীতি দেখিয়ে নির্দিষ্টভাবে ভোট দিতে বাধ্য করা হয়েছে।’
মিয়ানমারের ইউনিয়ন ইলেকশন কমিশন এখনো আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা করেনি। নির্বাচনের আরও দুটি ধাপ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে ১১ জানুয়ারি ও ২৫ জানুয়ারি।
ইয়াঙ্গুনের বাসিন্দা মিন খান্ত বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে আমার অবস্থান পরিষ্কার—আমি একে একেবারেই বিশ্বাস করি না।’
২৮ বছর বয়সী এই তরুণ বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে একনায়কতন্ত্রের মধ্যে বাস করছি। নির্বাচন হলেও ভালো কিছু হবে বলে আমি মনে করি না, কারণ তারা সবসময় মিথ্যা বলে।’
রোববার ভোটগ্রহণের পর সামরিক প্রধান মিন অং হ্লাইং, যিনি গত পাঁচ বছর ধরে একক কর্তৃত্বে দেশ শাসন করছেন, দাবি করেন যে সেনাবাহিনীর ওপর আস্থা রাখা যেতে পারে।
তিনি নাইপিদোতে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিচ্ছি। এটি সেনাবাহিনী আয়োজন করেছে—আমরা আমাদের নাম কলঙ্কিত হতে দিতে পারি না।’
২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর গণতন্ত্রপন্থীরা সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তারা দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রীয় শাসনের বিরুদ্ধে লড়াইরত জাতিগত সংখ্যালঘু সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে একত্র হয়ে লড়াই করছে।
রোববারের নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল দেশের ৩৩০টি টাউনশিপের মধ্যে ১০২টিতে, যা তিন ধাপের মধ্যে সবচেয়ে বড় পর্ব। তবে চলমান সংঘাতের কারণে সামরিক বাহিনী স্বীকার করেছে যে প্রায় পাঁচ ভাগের এক ভাগ নিম্নকক্ষের আসনে নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব হয়নি।