শিরোনাম

ঢাকা, ৩ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট জরুরি ক্ষমতা ব্যবহার করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈশ্বিক শুল্ক আরোপের বৈধতা নিয়ে বুধবার শুনানি করতে যাচ্ছে। এই মামলাটি প্রেসিডেন্টের অর্থনৈতিক কর্মসূচির মূল কেন্দ্র বিন্দুতে আঘাত করেছে।
ওয়াশিংটন থেকে বার্তাসংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর থেকে ট্রাম্প জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে ওয়াশিংটনের কাছে অন্যায্য বলে বিবেচিত বাণিজ্য অনুশীলনের ওপর ‘পারস্পরিক’ শুল্ক আরোপ করেছেন। পাশাপাশি তার দেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার মেক্সিকো, কানাডা ও চীনের পণ্যের উপরেও পৃথক শুল্ক আরোপ করেছেন তিনি।
কিন্তু মার্কিন শিল্পকে রক্ষা ও উৎসাহিত করার লক্ষ্যে তার ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ বাণিজ্য নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এই শুল্ক আরোপ দ্রুত আইনি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে।
মে মাসে একটি নিম্ন আদালত রায় দেয় যে ট্রাম্প শুল্ক আরোপের ক্ষেত্রে তার কর্তৃত্ব লঙ্ঘন করেছেন, তবে প্রশাসনের আপিল সেগুলো সাময়িকভাবে বহাল রাখার অনুমতি দেয়।
আগস্ট মাসে মার্কিন ফেডারেল সার্কিটের আপিল আদালত ৭-৪ ভোটে শুল্ক আরোপকে অবৈধ বলে রায় দিয়ে নিম্ন আদালতের রায় নিশ্চিত করলে ট্রাম্পকে এই মামলায় সুপ্রিম কোর্টে যেতে বাধ্য করে।
শীর্ষ আদালতের সিদ্ধান্তের বড় ধরণের প্রভাব পড়বে, তবে এই সিদ্ধান্ত আসতে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে।
রক্ষণশীল-সংখ্যাগরিষ্ঠ সুপ্রিম কোর্ট শুল্ক আরোপকে অবৈধ বলে ঘোষণা করতে পারে, যা বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশ থেকে পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক বন্ধ করে দেবে। তবে বিচারকরা ট্রাম্পের পদক্ষেপকে সমর্থন করতে পারেন, যা আরও শুল্ক আরোপের দরজা খুলে দেবে।
এছাড়াও, ইতোমধ্যে সংগৃহীত কোটি কোটি ডলারের শুল্ক রাজস্ব এবং অনুকূল বাণিজ্য চুক্তির জন্য ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের প্রচেষ্টা অথবা অন্যান্য রাজনৈতিক অগ্রাধিকার ঝুঁকির মুখে রয়েছে।
তবে, সুপ্রিম কোর্টের রায় ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম ও অটোমোবাইল সহ ট্রাম্পের আরোপিত খাত-নির্দিষ্ট শুল্কের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে না।
তবে ট্রাম্পের শুল্ক ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি না করলেও, মার্কিন কোম্পানিগুলো বিশেষ করে ছোট ব্যবসায়ীরা বলছে যে, তারা অতিরিক্ত খরচের বোঝা বহন করছে।
ভিওএস সিলেকশনস নামে একটি পরিবার-পরিচালিত নিউ ইয়র্ক ওয়াইন কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা শোয়ার্টজ বলেন, ‘এই শুল্ক আরোপের ফলে বেঁচে থাকা বা বেড়ে ওঠা তো দূরের কথা আমার মতো ছোট ব্যবসার অস্তিত্বকেই হুমকির মুখে ফেলেছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি হতবাক যে যাদের অনেক বেশি ক্ষমতা ও অর্থ রয়েছে তারা কেউ এগিয়ে আসেনি।’
ট্রাম্পের দ্রুত পরিবর্তনশীল শুল্ক নীতির দিকে ইঙ্গিত করে শোয়ার্টজ শুনানির আগে সাংবাদিকদের বলেন, তারা খুচরা মূল্য নির্ধারণ ও মজুদ করে ছোট সংস্থাগুলো আমাদের জীবিকা নিয়ে জুয়া খেলছে।
চীন থেকে হাতে আঁকা ওয়ালপেপার আমদানিকারক নিউ ইয়র্ক-ভিত্তিক আরেকজন ব্যবসায়ী মাইক গ্রেসি বলেন, ট্রাম্পের উচ্চ শুল্কের ফলে ‘লাখ লাখ ডলার’ নতুন খরচ হবে।
এপ্রিল মাসে ওয়াশিংটন ও বেইজিং পরস্পরের বিরুদ্ধে শুল্কের লড়াইয়ে লিপ্ত হলে মার্কিন শুল্ক ১৪৫ শতাংশে পৌঁছে যায়, যা গ্রেসিকে অতিরিক্ত বিল হিসেবে বহন করতে হয়েছিল।
তিনি এএফপিকে বলেন, ‘দাম বাড়িয়ে আমরা আমাদের ব্যবসার ঝুঁকি নিতে চাইনি।’
পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্ট স্মেটার্স বলেন, মার্কিন আমদানির ৪০ শতাংশ মধ্যবর্তী পণ্য, যার অর্থ খুচরা ভোক্তাদের জন্য নয়। তিনি সতর্ক করে দেন যে শুল্ক বজায় রাখার অর্থ হল মার্কিন ব্যবসাগুলোর প্রতিযোগিতা হ্রাস পাওয়া।’
সাবেক মার্কিন বাণিজ্য কর্মকর্তা রায়ান মাজেরাস, এএফপিকে বলেন, ট্রাম্পের বিশ্বব্যাপী শুল্ককে সমর্থন বা অবরুদ্ধ করার পাশাপাশি, আদালত নির্দিষ্ট সীমাবদ্ধতার সঙ্গে সেগুলো আরোপের অনুমতিও দিতে পারে।