বাসস
  ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১৯:১২

শেষ সামরিক পদবিও হারাচ্ছেন প্রিন্স অ্যান্ড্রু : প্রতিরক্ষামন্ত্রী

ছবি : সংগৃহীত

লন্ডন, ২ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : ব্রিটেনের সরকার রোববার জানিয়েছে, প্রিন্স অ্যান্ড্রু তাঁর সর্বশেষ সম্মানসূচক সামরিক পদবি ‘ভাইস-অ্যাডমিরাল’ও হারাতে যাচ্ছেন।

২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের যৌন অপরাধী জেফ্রি এপস্টাইনের প্রধান অভিযোগকারী ভার্জিনিয়া জিওফ্রে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ অ্যান্ড্রুর সব সম্মানসূচক পদবি ও সামরিক উপাধি বাতিল করেন।

এরপর গত বৃহস্পতিবার রাজা তৃতীয় চার্লস তাঁর ছোট ভাই অ্যান্ড্রুর বাকি সব রাজকীয় উপাধি ও সম্মান বাতিল করেন। যুক্তরাজ্যে এপস্টাইনের সঙ্গে অ্যান্ড্রুর সম্পর্ক নিয়ে ক্রমবর্ধমান ক্ষোভের প্রেক্ষাপটে তিনি এ পদক্ষেপে নেন।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী জন হিলি বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা দেখেছি, অ্যান্ড্রু সামরিক বাহিনীতে থাকা তাঁর সব সম্মানসূচক পদবি ইতোমধ্যে ছেড়ে দিয়েছেন... রাজা নির্দেশনা দিয়েছেন, এখন আমরা তাঁর শেষ অবশিষ্ট ভাইস-অ্যাডমিরাল উপাধিটি অপসারণের প্রক্রিয়ায় আছি।’

তিনি আরও বলেন, সরকার এ বিষয়েও রাজার পরামর্শ নেবে যে অ্যান্ড্রুর সামরিক পদকগুলো রাখা উচিত কি না।
রাজা চার্লসের ছোট ভাই একসময় ফকল্যান্ডস যুদ্ধে (১৯৮২) রয়্যাল নেভির হেলিকপ্টার পাইলট হিসেবে ভূমিকার জন্য প্রশংসিত হয়েছিলেন। ২০০১ সালে ২২ বছরের সামরিক জীবন শেষে তিনি অবসর নেন।

অ্যান্ড্রু সবসময় জিওফ্রেকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। জিওফ্রে তার মৃত্যুর পর প্রকাশিত স্মৃতিকথায় বলেন, তিনি অ্যান্ড্রুর সঙ্গে তিনবার যৌন সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য হয়েছিলেন—যার মধ্যে দু’বারের সময় তার বয়স ছিল মাত্র ১৭।

তবে বৃহস্পতিবার বাকিংহাম প্রাসাদ এক কঠোর বিবৃতিতে জানায়, ‘প্রিন্স অ্যান্ড্রুকে এখন থেকে অ্যান্ড্রু মাউন্টব্যাটেন উইন্ডসর নামে ডাকা হবে।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘অ্যান্ড্রুর অস্বীকার সত্ত্বেও এই পদক্ষেপগুলোকে অপরিহার্য বলে মনে করা হচ্ছে।’

রাজা ও রানি আরও বলেন, ‘যেকোনো ধরনের নির্যাতনের শিকার ও জীবিত বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের প্রতি আমাদের গভীর সহানুভূতি রয়েছে এবং তা অব্যাহত থাকবে।’

রাজা ও রানির ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু সানডে টাইমসকে বলেন, ‘এটি ছিল অসাধারণ একটি পদক্ষেপ— হয়তো এটিই সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ উদাহরণ, যেখানে রাজা ও তাঁর আদালত নিজের ভাইয়ের ওপর রায় দিয়েছেন।’

ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ২০১৯ সালের সেই বিতর্কিত বিবিসি নিউজনাইট সাক্ষাৎকারের পর থেকে অ্যান্ড্রু এমন সব বিবৃতি অনুমোদনে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছেন, যেখানে ভুক্তভোগীদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করা হয়েছে।

রাজপরিবারের এক ঘনিষ্ঠজন সানডে টাইমসকে বলেন, ‘অনেকদিন ধরেই পরিবার মনে করত, ভুক্তভোগীদের কণ্ঠস্বর শোনা জরুরি।’

রানি কামিলাও দীর্ঘদিন ধরেই নির্যাতনের শিকার নারীদের পক্ষে সোচ্চার। রাজপরিবারের অভ্যন্তরে আশঙ্কা ছিল—এপস্টাইন-অ্যান্ড্রু কেলেঙ্কারি রাজপরিবারের সুনাম মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন করতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের নথিতে প্রকাশিত এক ইমেলে দেখা যায়, ২০১০ সালে অ্যান্ড্রু এপস্টাইনকে লিখেছিলেন—কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি নিউইয়র্ক সফরের পরিকল্পনা করছেন, কারণ ‘সরাসরি দেখা হলে ভালো লাগবে।’