বাসস
  ১৬ আগস্ট ২০২৫, ১৩:০৫

ইউক্রেন ইস্যুতে চুক্তি ছাড়াই শেষ ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক

ঢাকা, ১৬ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : ইউক্রেন ইস্যু নিয়ে কোন বড় ধরনের অগ্রগতি ছাড়াই শেষ হলো ট্রাম্প-পুতিনের শীর্ষ বৈঠক। 

শুক্রবার আলাস্কায় অনুষ্ঠিত এই বৈঠক শেষে এই দুই নেতা কিছু বিষয়ে একমত হওয়ার কথা জানিয়েছেন এবং সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে যুদ্ধবিরতি নিয়ে কোনো ঘোষণা আসেনি।

নিজেকে একজন দক্ষ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দাবি করা ট্রাম্প আলাস্কার এক বিমান ঘাঁটিতে পুতিনকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দিয়েছেন। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন আক্রমণের নির্দেশ দেওয়ার পর পশ্চিমা ভূমিতে এই প্রথম রুশ প্রেসিডেন্টকে এমনভাবে স্বাগত জানানো হয়েছে।

তিন ঘণ্টা ধরে চলা বৈঠকটি হঠাৎ করে শেষ হয়। এরপর ট্রাম্প ও পুতিন নিজেদের মধ্যে সৌজন্যমূলক কথাবার্তা বললেও সাংবাদিকদের প্রশ্ন এড়িয়ে গেছেন। ট্রাম্পের মতো গণমাধ্যম-বান্ধব প্রেসিডেন্টের জন্য এটি একটি অস্বাভাবিক ঘটনা।

ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা এখনো চূড়ান্ত অবস্থায় পৌঁছাইনি, তবে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। কোনো চুক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত চুক্তি নয়, যতক্ষণ না তা সম্পূর্ণ হয়।’

তিনি বলেন, বৈঠক ‘অত্যন্ত ফলপ্রসূ’ হয়েছে এবং ‘অনেক বিষয়ে’ একমত হওয়া গেছে। তবে তিনি নির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি।

ট্রাম্প বলেন, ‘খুব কম বিষয়ই এখনো অমীমাংসিত রয়েছে, যার মধ্যে কয়েকটা তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়, তবে সম্ভবত একটি বিষয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’ তবে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি।

মাত্র ১২ মিনিটের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে পুতিনও সাধারণভাবে সহযোগিতার কথা বলেছেন।

পুতিন বলেন, ‘আমাদের যে বোঝাপড়া হয়েছে, তা ইউক্রেনে শান্তির পথ খুলে দেবে বলে আশা করি।’

ট্রাম্প দ্বিতীয় বৈঠকের সম্ভাবনার কথা তুলতেই পুতিন হাসি মুখে ইংরেজিতে বলেন, ‘পরেরবার মস্কোতে।’

অতীতে ট্রাম্প এই রুশ নেতার প্রতি মুগ্ধতা প্রকাশ করেছিলেন। সাবেক কেজিবি এজেন্ট পুতিন এবার ট্রাম্পের প্রশংসা করে বলেন, তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে একমত। পুতিন যখন ইউক্রেন যুদ্ধের নির্দেশ দিয়েছেন তখন যদি জো বাইডেনের পরিবর্তে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকতেন তাহলে যুদ্ধ হতো না।

এদিকে ট্রাম্পও আবার ২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়া তাকে সাহায্য করেছে বলে অভিযোগকে ‘ভুয়া’ বলে মন্তব্য করেন। যদিও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এই অভিযোগের পক্ষে প্রমাণ দিয়েছে।

পুতিনের জন্য এই উষ্ণ অভ্যর্থনা ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের কড়া ব্যবহারের সম্পূর্ণ বিপরীত ছিল।

এর আগে ট্রাম্প জানিয়েছিলেন যে তিনি জেলেনস্কিকে সঙ্গে নিয়ে একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করতে চান, কিন্তু আলাস্কা বৈঠকে এ ধরনের কোনো ঘোষণা আসেনি।

ট্রাম্প বলেন যে তিনি এখন জেলেনস্কির পাশাপাশি ন্যাটো নেতাদের সঙ্গেও পরামর্শ করবেন, কারণ ন্যাটোর নেতারা পুতিনের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই ধরনের যোগাযোগে অস্বস্তি প্রকাশ করেছেন।

শীর্ষ সম্মেলনের পর ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ‘এখন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির ওপরই সবকিছু নির্ভর করছে।’

এদিকে পুতিন ইউক্রেন এবং ইউরোপীয় দেশগুলোকে সতর্ক করে বলেন, ‘কোনো বাধা সৃষ্টি করবেন না’ এবং ‘উসকানি বা পর্দার আড়ালে ষড়যন্ত্র করে এই নতুন অগ্রগতিকে ব্যাহত করার চেষ্টা করবেন না।’

ট্রাম্প মাত্র এক সপ্তাহ আগে পুতিনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। ২০১৯ সালের পর প্রথম সরাসরি বৈঠকটিকে কিছুটা নাটকীয়ভাবে সাজানোর ব্যবস্থা করেন।

আলাস্কার সামরিক ঘাঁটিতে নিজ নিজ প্রেসিডেন্ট বিমানে পৌঁছান দুই নেতা। ট্রাম্প হাততালি দিয়ে পুতিনকে অভ্যর্থনা জানান। এ সময় আকাশে উড়ে যায় বি-২ স্টেলথ মার্কিন সামরিক বোমারু বিমান। 

তখন এক সাংবাদিক জোরে পুতিনকে উদ্দেশ্য করে জানতে চান, ‘আপনি কি সাধারণ মানুষ হত্যা বন্ধ করবেন?’

পুতিন এতে বিচলিত না হয়ে ব্যাপকভাবে হেসে ওঠেন। এরপর ট্রাম্প নিজেই তাকে ‘দ্য বিস্ট’ নামে পরিচিত মার্কিন প্রেসিডেন্টের সুরক্ষিত লিমুজিনে তুলে দেন। এরপর একটি কক্ষে তাঁদের বৈঠক হয়, যেখানে শুধু ইংরেজিতে লেখা ছিল ‘পারসুইয়িং পিস’ (শান্তির অন্বেষণ)।

পুতিন সফরের সময় রুশ সাংবাদিকদের সঙ্গে হাসিঠাট্টা করেন। যদিও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। এই যুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন।

সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে বেশ কিছু অগ্রগতি লাভ করেছে, যা যেকোনো যুদ্ধবিরতি আলোচনায় পুতিনের অবস্থানকে শক্তিশালী করতে পারে। যদিও পুতিন যখন বিমানে আলাস্কা যাচ্ছিলেন, তখন ইউক্রেন ঘোষণা করে যে তারা কয়েকটি গ্রাম পুনরুদ্ধার করেছে।

ট্রাম্প বৈঠকের আগে ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনি এবার পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে কঠোর অবস্থান নেবেন। কারণ ২০১৮ সালে হেলসিঙ্কিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তিনি পুতিনের সামনে নিজেকে দুর্বল দেখানোয় সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন।

শেষ পর্যন্ত তিনি একা পুতিনের সঙ্গে দেখা করেননি। বৈঠকে তার সঙ্গে ছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ও বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ।

বৈঠকে জেলেনস্কিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি এবং তিনি রাশিয়ার দখলকৃত এলাকা সমর্পণের জন্য ট্রাম্পের চাপ মেনে নেননি।

অন্যদিকে জেলেনস্কি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘এখন সময় যুদ্ধ শেষ করার। রাশিয়াকেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা আমেরিকার প্রতি আস্থা রাখছি।’