বাসস
  ০৪ জুন ২০২৫, ১২:৪১

সিরিয়ায় ইসরাইলের গোলাবর্ষণ

ঢাকা, ৪ জুন, ২০২৫ (বাসস) : ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, জোড়া প্রজেক্টাইল উৎক্ষেপণের জবাবে তারা মঙ্গলবার সিরিয়ার লক্ষ্যবস্তুতে গোলাবর্ষণ করেছে।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কার্টজ এ ঘটনার জন্য সিরিয়ার নেতাকে ‘সরাসরি দায়ী’ করেছেন।

দামেস্ক থেকে এএফপি জানায়, সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেছে, ‘দেশটি এই অঞ্চলের কারো জন্য কখনও হুমকি ছিল না এবং ভবিষ্যতেও হবে না।’

ইসরাইলি গণমাধ্যম জানিয়েছে, ডিসেম্বরে দীর্ঘদিনের শাসক বাশার আল-আসাদের পতনের পর মঙ্গলবারের হামলাটি ছিল সিরিয়া থেকে ইসরাইলি ভূখণ্ডে প্রথম হামলা।

ইসরাইলের পক্ষ থেকে হতাহতের কোন খবর পাওয়া যায়নি। তবে, সেনাবাহিনী জানিয়েছে, দক্ষিণ গোলান মালভূমির কিছু অংশে বিমান হামলার সাইরেন বেজে উঠে।

১৯৬৭ সালে সিরিয়ার কাছ থেকে ইসরাইল এই অঞ্চলের দখল নেয় এবং ১৯৮১ সালে এটিকে সংযুক্ত করে।

ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাট্জ তার কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ইসরাইল রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পরিচালিত যেকোনো হুমকি বা হামলার জন্য আমরা সরাসরি সিরিয়ার প্রেসিডেন্টকে দায়ী বলে মনে করি।’

সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা আসাদের পতনের সময় পরিচালিত নেতৃত্ব দেয়া ইসলামপন্থী গোষ্ঠীটির নেতৃত্ব দেন।

ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ‘সিরিয়া থেকে ইসরাইলি ভূখণ্ডে প্রবেশ করা দুটি ক্ষেপণাস্ত্র খোলা জায়গায় পড়ে’, পরবর্তী বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘এই উৎক্ষেপণের পর দক্ষিণ সিরিয়ায় তাদের কামান আঘাত করেছে।’

সিরিয়ার সরকারি সংবাদ সংস্থা সানা ‘দারা প্রদেশের পশ্চিমে ইয়ারমুক অববাহিকা লক্ষ্য করে’ গোলাবর্ষণের খবর জানায়।

ব্রিটেন-ভিত্তিক যুদ্ধ পর্যবেক্ষণক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, প্রদেশের কৃষিজমিতে বোমাবর্ষণ করা হয়েছে, তবে হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

এক বিবৃতিতে পর্যক্ষেক জানিয়েছে, ‘মঙ্গলবার থেকে বুধবার পর্যন্ত রাতভর ইসরাইলি বিমান হামলার পর দক্ষিণ সিরিয়া, বিশেষ করে কুনেইত্রা শহর ও দারা প্রদেশে সহিংস বিস্ফোরণ ঘটেছে।’

সিরিয়ার পক্ষ থেকে ইসরাইলি গোলাবর্ষণকে ‘সিরিয়ার সার্বভৌমত্বের স্পষ্ট লঙ্ঘন’ হিসেবে নিন্দা জানানো হয়েছে। এই গোলাবর্ষণ ‘এই অঞ্চলে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

সানা কর্তৃক প্রকাশিত এক বিবৃতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘সিরিয়া কখনও এই অঞ্চলের কারও জন্য হুমকি ছিল না এবং ভবিষ্যতেও হবে না।’

মন্ত্রণালয় হামলার দায় অস্বীকার করেছে, কিন্তু বলেছে যে "অনেক পক্ষ তাদের নিজস্ব স্বার্থ পূরণের জন্য এই অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।’

এতে আরও বলা হয়েছে, ‘দক্ষিণ সিরিয়ায় অগ্রাধিকার হল রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব প্রসার করা এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাঠামোর বাইরে অস্ত্রের উপস্থিতি বন্ধ করা।’ 

আসাদের উৎখাতের পর, ইসরাইল গোলান মালভূমি জাতিসংঘ-প্রহরীকৃত সামরিক নিরস্ত্রীকরণ অঞ্চলে তার বাহিনী স্থানান্তরিত করে এবং সিরিয়ায় সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে শত শত হামলা চালিয়েছে।

ইসরাইল বলেছে, এই হামলার লক্ষ্য সিরিয়ার নতুন কর্তৃপক্ষের কাছে উন্নত অস্ত্র পৌঁছানো বন্ধ করা। তারা এদের জিহাদি বলে মনে করে।

ইসরাইলের সামরিক বাহিনী রোববার বলেছে, এর সৈন্যরা সন্ত্রাসী অবকাঠামো ভেঙে ফেলা এবং গোলান মালভূমির বাসিন্দাদের রক্ষা করার জন্য দক্ষিণ সিরিয়ায় প্রতিরক্ষামূলক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।

১৯৪৮ সাল থেকে সিরিয়া ও ইসরায়েল কৌশলগত যুদ্ধে লিপ্ত।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত মাসে সিরিয়ার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং আশা প্রকাশ করেছিলেন, এটি ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে, কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সম্ভাবনা বাস্তবে পরিণত হওয়া থেকে এখনও অনেক দূরে।