শিরোনাম
ঢাকা, ৪ জুন, ২০২৫ (বাসস) : রেকর্ড পরিমাণ কোকেন উৎপাদনের মুখে মাদকবিরোধী লড়াইয়ে এবার কৃষকদের কোকেন উৎপাদনের উৎস কোকা গাছ উপড়ে ফেলতে অর্থ প্রদানের এক অভিনব শান্তিপূর্ণ পন্থা অবলম্বন করেছে কলম্বিয়া সরকার।
কলম্বিয়ার আর্জেলিয়া থেকে এএফপি জানায়, দশ বছর আগে যেসব কৃষক অপরাধী গোষ্ঠীগুলোর ভরসায় কোকা গাছ লাগিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন, তাদের অনেকেই সেই গাছ উপড়ে ফেলছেন সরকারি কর্মসূচির আওতায়। এদের মধ্যে রয়েছেন আলিরিও কাইসেদো ও তার ছেলে নিকোলাস, যারা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় মিকাই উপত্যকার আর্জেলিয়া মিউনিসিপালিটিতে বসবাস করেন।
কাইসেদো পরিবারসহ প্রায় ৪ হাজার কৃষক কোকা গাছের বদলে কফি ও কাকাওয়ের মতো বিকল্প ফসল চাষের জন্য সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেছেন। এক কোটি ৪৪ লাখ মার্কিন ডলারের এ প্রকল্পের লক্ষ্য সংঘাতপ্রবণ তিনটি অঞ্চলে ৪৫ হাজার হেক্টর জমি থেকে কোকা চাষ বন্ধ করা।
তবে এটি কৃষকদের জন্য একটি ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত। নতুন ফসল ফলবে কি না, কিংবা কোকেন বিক্রির ওপর নির্ভরশীল সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো তাদের শান্তিতে থাকতে দেবে কি না—তা নিশ্চিত নয়।
নিকোলাস কাইসেদো (৪৪) বলেন, ‘কোকা গাছ লাগালে আশা থাকে—ফলন হবে, আয় হবে। গাছ উপড়ে ফেলার মানে কোনো ফলন নেই—অর্থাৎ আয়ও নেই।’
কোকা চাষ থেকে কাইসেদো পরিবার মাসে প্রায় ৮০০ ডলার আয় করতেন। এখন কফি চাষের জন্য তারা প্রাথমিকভাবে ৩০০ ডলার করে পেয়েছেন।
তবে এক কৃষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, যে এলাকাগুলোতে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো সরকারের চেয়ে শক্তিশালী, সেখানে প্রকল্পটি কার্যকর হবে বলে তিনি মনে করেন না।
২০২২ সালে ক্ষমতায় আসা কলম্বিয়ার প্রথম বামপন্থী প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো ‘মাদকবিরোধী যুদ্ধে’ গ্রামীণ কলম্বিয়ানদের ওপর দ্বিগুণ দুর্ভোগ ও সহিংসতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন নীতিকে দায়ী করেন।
তার আমলে কলম্বিয়ায় কোকেন উৎপাদন সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে এর চাহিদা ক্রমবর্ধমান।
অতীতে ফসল পরিবর্তনের নানা উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে; একদিকে সশস্ত্র হামলা, অন্যদিকে সরকারিভাবে অর্থ ও সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়াই ছিল বড় কারণ।
সরকারের অবৈধ ফসল প্রতিস্থাপন কর্মসূচির প্রধান গ্লোরিয়া মিরান্দা বলেন, ‘যতদিন ২ কোটিরও বেশি কোকেনভোক্তা রয়েছে এবং এটি অবৈধ—ততদিন মাদক ব্যবসা বন্ধ হবে বলে আশা করাটা একেবারেই সরল বিশ্বাস।’
‘টোটাল পিস’ বা ‘সম্পূর্ণ শান্তি’র অঙ্গীকারে পেত্রো সরকার সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে আলোচনার পথ বেছে নেয়, ফলে সেনা অভিযান ও জবরদস্তিমূলকভাবে কোকা গাছ ধ্বংসের কার্যক্রম কমেছে। কিন্তু বেশিরভাগ আলোচনাই ভেঙে পড়েছে।
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় বসার পর বোগোতার ওপর চাপ বেড়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন এখন কলম্বিয়াকে মাদকবিরোধী যুদ্ধের মিত্র হিসেবে স্বীকৃতি পুনর্মূল্যায়নের কথা ভাবছে—যার ফলে সামরিক সহায়তা হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সরকারি তহবিল অপচয়ের আশঙ্কাও রয়েছে। আর্জেলিয়ার সরকারি সচিব পাবলো দাজা বলেন, কিছু কৃষক অর্থ নেওয়ার পরও গোপনে আবার কোকা চাষ শুরু করতে পারেন।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ইভান ডুকে-র অধীনে অনুরূপ একটি প্রকল্প তদারক করা এমিলিও আর্চিলা বলেন, পর্যাপ্ত নজরদারি ছাড়া এ প্রকল্প ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
মিরান্দা অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, উপগ্রহ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ‘কঠোর নজরদারি’ চালানো হবে এবং যারা চুক্তি লঙ্ঘন করবেন, তাদের কর্মসূচি থেকে বাদ দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, কোকা পাতার ব্যবহার কেবল কোকেন তৈরিতে নয়—আন্দিজ অঞ্চলে এটি উদ্দীপক হিসেবে চিবিয়ে খাওয়া হয়, কিংবা উচ্চতাজনিত রোগ প্রতিরোধে চায়ের মতো পান করা হয়।
কলম্বিয়া জাতিসংঘের কাছে কোকা পাতাকে ‘ক্ষতিকর মাদকদ্রব্য’-এর তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে, যাতে এটি সার বা পানীয়র মতো বিকল্প পণ্যে ব্যবহার করা যায়। তবে এখন পর্যন্ত জাতিসংঘ সে অনুরোধে সাড়া দেয়নি।