শিরোনাম
ঢাকা, ২৮ মে, ২০২৫ (বাসস): ইসরাইলের অবৈধ বসতি থেকে পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারির উদ্দেশ্যে একটি খসড়া আইন তৈরির অনুমোদন দিয়েছে আয়ারল্যান্ড সরকার।
আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিকোণে অবৈধ বিবেচিত এসব বসতি থেকে পণ্য আমদানি নিষিদ্ধে উদ্যোগী হওয়া এটাই ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কোনো সদস্য দেশের প্রথম পদক্ষেপ।
আয়ারল্যান্ডে থেকে এএফপি জানায়, আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) গত বছর এক পরামর্শমূলক মতামতে পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম ও গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি দখলকে আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি বলেছিল। আয়ারল্যান্ড সরকার জানায়, ওই মতামতের ভিত্তিতেই তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র এএফপিকে বলেন, ‘দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে অবস্থিত অবৈধ বসতিগুলোর পণ্যের বাণিজ্য নিষিদ্ধে আইন প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আমাদের দৃষ্টিতে এটি আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় একটি বাধ্যবাধকতা।’
ইসরাইলের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমান্তের বাইরে গড়ে ওঠা এসব বসতিতে বসবাস, কৃষিকাজ ও ব্যবসা পরিচালিত হয়।
মন্ত্রীসভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ার আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও উপ-প্রধানমন্ত্রী সায়মন হ্যারিস সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি আশাবাদী, ইউরোপের একটি ক্ষুদ্র দেশ হিসেবে আজ আমরা এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর অন্যান্য ইউরোপীয় দেশও আমাদের অনুসরণ করবে।’
গত বছর মে মাসে আয়ারল্যান্ড, স্পেন ও নরওয়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়। এক মাস পর স্লোভেনিয়াও একই পদক্ষেপ নেয়। এর প্রতিক্রিয়ায় তেলআবিব প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেয়।
সম্প্রতি ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ ঘোষণা দিয়েছেন, প্যারিস জুন মাসের মধ্যেই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে পারে।
আয়ারল্যান্ড সরকারের এই উদ্যোগ আসে এমন এক সময়ে, যখন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইসরাইলের সঙ্গে ১৯৯৫ সালের সহযোগিতা চুক্তি, ইইউ-ইসরাইল অ্যাসোসিয়েশন অ্যাগ্রিমেন্ট, পুনর্বিবেচনার সিদ্ধান্ত নেয়। ইইউ পররাষ্ট্রবিষয়ক প্রধান কায়া ক্যালাস জানান, ২৭ সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে অধিকাংশই এই উদ্যোগকে সমর্থন করেছে।
প্রস্তাবিত এই নিষেধাজ্ঞার বাস্তবিক অর্থনৈতিক প্রভাব খুবই সামান্য হবে। ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ইসরাইলি বসতি থেকে আয়ারল্যান্ডে আমদানি হওয়া ফলমূল, শাকসবজি ও কাঠজাত পণ্যের মূল্য এক মিলিয়ন ইউরোরও কম ছিল।
তবে মানবাধিকার সংস্থা ক্রিশ্চিয়ান এইড আয়ারল্যান্ড-এর নীতিনির্ধারণ ও পক্ষকালীন প্রধান কনর ও’নিল এই পদক্ষেপকে যুগান্তকারী বলে মন্তব্য করেছেন।
তিনি বলেন, ‘দশকের পর দশক ধরে ইইউ একদিকে বসতিগুলোকে অবৈধ বলে আসছে এবং সেগুলোকে শান্তির পথে বাধা বলছে, অথচ অন্যদিকে তাদের অর্থনৈতিক সুবিধা দিয়ে আসছে। এই নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে সেই দ্বিমুখী অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসা হলো।’
২০১৮ সালে আয়ারল্যান্ডে একই ধরনের একটি খসড়া আইন তৈরিতে সহযোগিতা করেছিলেন ও’নিল।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, খসড়া আইনটির অগ্রগতি নিয়ে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সরকারের কাছে হালনাগাদ প্রতিবেদন পেশ করা হবে। আইনটি শরৎকাল শুরু হওয়ার আগে সংসদে পাস হওয়ার সম্ভাবনা কম।