শিরোনাম
ঢাকা, ২৮ মে, ২০২৫ (বাসস): চেক প্রজাতন্ত্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওপর সাইবার আক্রমণের অভিযোগে বেইজিংয়ের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে প্রাগ। দেশটির কর্মকর্তারা বুধবার এই তথ্য জানিয়েছেন।
প্রাগ থেকে এএফপি জানায়, চেক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ‘ব্যাপক তদন্তের’ পর তারা ‘দায়ী পক্ষ সম্পর্কে যথেষ্ট মাত্রায় নিশ্চিত’ হয়েছে। তদন্তে দেখা গেছে, ‘এপিটি-৩১’ নামের চীনভিত্তিক একটি হ্যাকার গোষ্ঠী এই হামলার পেছনে রয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়ান লিপাভস্কি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ বলেন, ‘আমি চীনা রাষ্ট্রদূতকে ডেকে জানিয়ে দিয়েছি, এ ধরনের বৈরী কার্যক্রম আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলবে।’
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোভুক্ত চেক প্রজাতন্ত্রের জনসংখ্যা প্রায় এক কোটি ৯ লাখ। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ২০২২ সালে শুরু হওয়া এই সাইবার আক্রমণ ছিল তাদের একটি ‘অশ্রেণিবদ্ধ’ নেটওয়ার্ককে লক্ষ্য করে।
তদন্ত অনুযায়ী, ‘এপিটি-৩১’ গোষ্ঠী চীনের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যুক্ত’, বলে জানিয়েছে চেক সরকার।
চেক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘আমরা চীনকে আহ্বান জানাচ্ছি যেন তারা এ ধরনের হামলা থেকে বিরত থাকে এবং পরিস্থিতি মোকাবেলায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে।’
মন্ত্রী লিপাভস্কি আরও বলেন, ‘আমরা আক্রমণের সময়েই হ্যাকারদের শনাক্ত করতে সক্ষম হই।’
চেক গোয়েন্দা সংস্থা (বিআইএস) তাদের ২০২৪ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে চীনকে নিরাপত্তার হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করে।
বিআইএস জানায়, ‘চীনা দূতাবাস মূলত চেক রাজনৈতিক অঙ্গনের তথ্য সংগ্রহে মনোযোগী।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কায়া কাল্লাস এই হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘২০২১ সালে আমরা চীনকে বলেছিলাম, তাদের ভূখণ্ড থেকে চালানো ক্ষতিকর সাইবার কার্যক্রম বন্ধ করতে। কিন্তু এরপরও ইউরোপীয় দেশগুলো চীনের পক্ষ থেকে সাইবার আক্রমণের শিকার হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সব রাষ্ট্র, বিশেষ করে চীনকে, আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের বিধি মেনে চলার এবং অবকাঠামো-সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক নীতিমালা সম্মান করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
ন্যাটোও এই হামলার তীব্র সমালোচনা করেছে। জোটটি বলেছে, ‘চীন থেকে আসা ক্ষতিকর সাইবার কার্যক্রমের একটি ক্রমবর্ধমান ধারা আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি।’
সম্প্রতি তাইওয়ানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে প্রাগ, যা বেইজিংকে ক্ষুব্ধ করেছে। চেক সংসদের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা তাইওয়ান সফর করেছেন, আবার তাইওয়ান থেকেও কর্মকর্তারা প্রাগে গিয়েছেন।
চীন তাইওয়ানকে আন্তর্জাতিক পরিসরে একঘরে করে রাখতে চায় এবং দ্বীপটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির সম্ভাব্য যে কোনো ইঙ্গিতকে এক চীন নীতির পরিপন্থী বলে মনে করে। যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য দেশগুলোর মতো প্রাগও আনুষ্ঠানিকভাবে সেই নীতিই অনুসরণ করে।
২০২৪ সালের মে মাসে চেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাশিয়ার দূতকেও তলব করেছিলেন—ইউরোপের কয়েকটি দেশে, বিশেষত চেক প্রজাতন্ত্র, জার্মানি ও পোল্যান্ডে সাইবার আক্রমণের অভিযোগে। ওই হামলার পেছনে ছিল রুশ গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ‘এপিটি-২৮’ বা ‘ফ্যান্সি বেয়ার’ গোষ্ঠী।
তখন চেক গোয়েন্দারা বলেছিল, রাশিয়া চেক প্রজাতন্ত্রের জন্য ‘স্থায়ী নিরাপত্তা হুমকি’। ইউক্রেনকে সামরিক ও মানবিক সহায়তা দিচ্ছে দেশটি, যেটি ২০২২ সাল থেকে রাশিয়ার আগ্রাসনের শিকার।
তারা আরও জানায়, ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে চীনও ক্রমেই বড় হুমকিতে পরিণত হচ্ছে, বিশেষ করে উত্তর কোরিয়া-চীন-রাশিয়ার পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদার হওয়ার পর থেকে।
বেইজিং অবশ্য বিদেশি লক্ষ্যবস্তুর ওপর রাষ্ট্রীয়ভাবে হ্যাকিংয়ের অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে।
চেক প্রজাতন্ত্র ও চীনের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উত্তেজনাময় হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে তাইওয়ান নিয়ে প্রাগের অবস্থানের কারণে।