শিরোনাম
ঢাকা, ২৮ মে, ২০২৫ (বাসস): মঙ্গল গ্রহে বসতি গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী স্পেসএক্সের প্রোটোটাইপ স্টারশিপ মঙ্গলবার ভারত মহাসাগরের ওপর বিস্ফোরিত হয়েছে। এই রকেটটি বিলিয়নিয়ার এলন মাস্কের মঙ্গল গ্রহে মানুষ বসবাসযোগ্য করে তোলার স্বপ্নের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণের পর এ বিস্ফোরণ আবারও বড় ধরণের বড় ধাক্কা খেলো প্রকল্পটি। সাউথ প্যাদ্রে আইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র থেকে এএফপি জানিয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী রকেটটি যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত স্পেসএক্সের স্টারবেস কেন্দ্র থেকে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬:৩৬ মিনিটে (২৩৩৬ জিএমটি) উৎক্ষেপণ করা হয়। স্টারবেস হলো সেই এলাকা, যা সম্প্রতি গ্রাম থেকে শহরে রূপান্তরিত হয়েছে এবং স্পেসএক্সের উৎক্ষেপণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
উৎক্ষেপণের আগে দর্শক ও প্রকৌশলীদের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা ছিল, কারণ আগের দুই বারই পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণে রকেটের ওপরের অংশ ক্যারিবিয়ান সাগরের আকাশে বিস্ফোরিত হয়েছিল। এবারও সমস্যার শুরু দ্রুত হয়, রকেটের প্রথম ধাপের ‘সুপার হেভি বুস্টার’টি পরিকল্পনা অনুযায়ী মেক্সিকো উপসাগরে নেমে না গিয়ে বিস্ফোরিত হয়ে যায়।
এরপর লাইভ সম্প্রচারে দেখা যায় যে, রকেটের ওপরের অংশ উপগ্রহ সিমুলেটরগুলো উৎক্ষেপণের জন্য দরজা খোলাতে ব্যর্থ হয়। যদিও আগের চেয়ে অনেক দূর পর্যন্ত উড়তে সক্ষম হয়েছিল রকেটটি কিন্তু এক পর্যায়ে এতে জ্বালানি লিক হয়ে যায় এবং তা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ঘূর্ণায়মান হতে থাকে।
মিশন টিম বিস্ফোরণের শক্তি কমাতে জ্বালানি বের করে দেয় এবং প্রায় ৪৫ মিনিট পর ক্যামেরা ফিড বন্ধ হয়ে যায়, যেখানে মোট ৬৬ মিনিটের ফ্লাইট পরিকল্পনা ছিল। লক্ষ্য ছিল অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিম উপকূলের সাগরে অবতরণ।
স্পেসএক্স এক্স (সাবেক টুইটার) এ পোস্ট করে জানিয়েছে, স্টারশিপ একটি দ্রুত অনির্ধারিত বিচ্ছিন্নতার মুখে পড়ে। যা রকেট বিস্ফোরণের জন্য তাদের পরিচিত ভাষা। তবে, তারা এই ব্যর্থতা থেকেও শিখবে বলে জানিয়েছে।
এদিকে এলন মাস্ক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, পরবর্তী তিনটি উৎক্ষেপণ আরও দ্রুত হবে। প্রতি তিন থেকে চার সপ্তাহে একটি করে। যদিও তিনি এখনও জানাননি, মঙ্গল গ্রহ নিয়ে সরাসরি সম্প্রচারিত আলোচনাটি তিনি চালাবেন কিনা। যা স্পেসএক্স আগেই প্রচার করেছিল।
মহাকাশপ্রেমীরা উচ্ছ্বসিত: এলেন মাস্ক আশা করছেন, ৪০৩ ফুট (১২৩ মিটার) উচ্চতার এই রকেটটি এক সময় পুরোপুরি পুনর্ব্যবহারযোগ্য হয়ে কম খরচে মহাকাশে যাত্রা করবে তার লক্ষ্য হলো মানবজাতিকে একাধিক গ্রহে ছড়িয়ে দেওয়া। নাসাও স্টারশিপের একটি সংস্করণ ব্যবহার করে আর্টেমিস ৩ মিশনে চাঁদে মার্কিন নভোচারী পাঠাতে চায়।
উৎক্ষেপণের আগে এই ঐতিহাসিক মুহূর্তটি দেখতে দক্ষিণ পাদ্রে আইল্যান্ডের ইসলা ব্লাঙ্কা পার্কে বহু দর্শনার্থী জড়ো হয়েছিলেন।
কয়েকটি ছোট ছোট পর্যটকবাহী নৌকাও কাছাকাছি সাগরে অবস্থান নেয়। লাইভ ভিডিওতে এলন মাস্ককে স্টারবেসে গ্রাউন্ড কন্ট্রোলে বসে থাকতে দেখা যায়। এসময় তার গায়ে ছিল ‘অকুপাই মার্স’ (মঙ্গল গ্রহ দখল করো) লেখা টি-শার্ট।
অস্ট্রেলিয়ার ৫০ বছর বয়সী পিয়ার্স ডসন এএফপিকে বলেন, তিনি রকেটের প্রতি এতটাই মুগ্ধ যে, এই উৎক্ষেপণের জন্য পুরো পরিবারসহ যুক্তরাষ্ট্রে প্রথমবার এসেছেন এবং ছেলেকে স্কুল থেকে ছুটি নিয়ে সঙ্গে এনেছেন।
অন্যদিকে, অস্টিনের ৩৩ বছর বয়সী প্রযুক্তি উদ্যোক্তা জোশুয়া উইনগেট বলেন, বিজ্ঞান কখনো ব্যর্থ হয় না, প্রতিটি পরীক্ষাই শেখার সুযোগ দেয়, তাই এটা দেখা দারুণ অভিজ্ঞতা ছিল।
এটা ছিল স্টারশিপের নবম পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ, যেখানে সুপার হেভি বুস্টারসহ রকেটটি মহাকাশে পাঠানো হয়।
স্পেসএক্সের ধারণা হলো, তারা যত দ্রুত ভুল করবে, তত দ্রুত তারা শিখবে। এই নীতির মাধ্যমেই তারা আগের মতো বাণিজ্যিক মহাকাশযাত্রায় সাফল্য অর্জন করতে চায়।
উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলো—তারা তিনবার বিশাল রোবটিক বাহুর সাহায্যে বুস্টার রকেটটি ধরতে সক্ষম হয়েছে। এটিই ভবিষ্যতে রকেট পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করে তুলতে সহায়ক হবে।
এই ফ্লাইটে প্রথমবারের মতো তারা একটি পুরনো সুপার হেভি বুস্টার পুনরায় ব্যবহার করেছে। তবে, সেটিকে ধরার চেষ্টা করেনি। বরং নতুন কিছু পরীক্ষা করার জন্য একটিকে ইচ্ছাকৃতভাবে নিস্ক্রিয় রেখে রকেটটি খাড়া পথে নামানোর চ্যালেঞ্জ নিয়েছে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) স্টারশিপের বার্ষিক উৎক্ষেপণ ৫টি থেকে বাড়িয়ে ২৫টি পর্যন্ত করার অনুমতি দিয়েছে। তারা জানায়, এই অতিরিক্ত উৎক্ষেপণে পরিবেশের ক্ষতি হবে না।
এই অনুমতির বিরোধিতা করেছিল কিছু পরিবেশবাদী সংগঠন, যারা বলেছে এটি সামুদ্রিক কচ্ছপ ও উপকূলীয় পাখিদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। কিন্তু তাদের আপত্তি নাকচ করে দেওয়া হয়েছে।