শিরোনাম
ঢাকা, ২৮ মে, ২০২৫ (বাসস) : আসাদ রাজবংশের অধীনে কয়েক দশকের দারিদ্র্য, বিচ্ছিন্নতা এবং আসাদ সরকারের পতনের পর, আনারস, কিউই এবং আমের মতো আমদানি করা ফল আবার সিরিয়ার বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। এ সমস্ত ফল আগে সিরিয়ার বাজারে পাওয়া যেতো না।
দামেস্ক থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
যেসব ফলমূল একসময় বিলাসবহুল পণ্য হিসেবে ধরা করা হত, অর্থাৎ কেবল সিরিয়ার ধনী ব্যক্তিদের কাছেই এগুলো সহজলভ্য ছিল, এখন সেগুলো দেশের জনগণের কাছে রান্না ঘরের আলু-পেঁয়াজের মতোই সাধারণ খাবার।
দামেস্কের শালান মার্কেটের ৪৬ বছর বয়সী ফল বিক্রেতা মারওয়ান আবু হায়লা বাজারে তার দোকানের ফল প্রদর্শনের সময় দন্ত বিকশিত হাসি দিয়ে বলেন, ‘আমরা আগে এগুলো চোরাই পথে আনতাম’।
আবু হায়লা এএফপিকে বলেন, বিদেশি ফল আমদানির জন্য মুদি দোকানিদের আগে জরিমানা এমনকি কারাদণ্ডের সম্মুখীন হতে হত। কিন্তু এখন ‘আমরা আর আনারস লুকাই না, আনারস নিয়ে ভীতির যুগ শেষ।’ ‘আমরা এগুলো প্রদর্শনের জন্য রাখতে পারছি।’
প্রায় ১৪ বছরের গৃহযুদ্ধের পর ডিসেম্বরে ইসলামপন্থীদের নেতৃত্বে ক্ষমতাচ্যুত নেতা বাশার আল-আসাদের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে এক কেজি আনারসের দাম ছিল প্রায় ৩ লাখ সিরিয়ান পাউন্ড বা প্রায় ২৩ ডলার।
এখন তা কমে প্রায় ৪০ হাজার পাউন্ড বা প্রায় ৪ ডলারে নেমে এসেছে।
আসাদের আমলে সরবরাহের অভাব দেখা দিলে সিরিয়ানরা প্রতিবেশী লেবানন থেকে অবৈধ পথে এসব পণ্য আনতো।
এ বিষয়ে আবু হায়লা বলেন, ‘আমরা ট্যাক্সি ড্রাইভারদের সাহায্যে চোরাই পথে (ফল) আনতাম। ঠিক যেমন পেট্রোল এবং ডিজেলের চোরা কারবার করা হয়।’
তিনি আরো বলেন, এখন ‘আনারস- আলু এবং পেঁয়াজের মতো’। এখন সম্ভাব্য গ্রাহকরা পাকা ফলের দিকে নজর রাখছেন।
ক্রেতা এবং বিক্রেতারা আসাদের ক্ষমতাচ্যুতির পর থেকে মার্কিন ডলারের অবাধ প্রাপ্যতাসহ বিভিন্ন উন্নয়নের সাথে ফলের নতুন উপস্থিতির যোগসূত্র স্থাপন করেছেন। আগে এই মুদ্রায় লেনদেন আইনত দণ্ডনীয় ছিল।
পরিবর্তনের অন্যান্য লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে রাস্তায় নতুন গাড়ি এবং প্রচুর জ্বালানি সরবরাহ। সিরিয়ার প্রয়াত প্রেসিডেন্ট হাফেজ আল-আসাদ অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ওপর কঠোর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছিলেন। ফলে, দেশটিকে বিশ্ব বাণিজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল।
তার পুত্র এবং উত্তরসূরী বাশার গত ডিসেম্বরে ক্ষমতাচ্যুত না হওয়া পর্যন্ত বংশের লৌহ-মুষ্টিবদ্ধ শাসন বজায় রাখার জন্য এই ব্যবস্থা বজায় রেখেছিলেন।
৪৫ বছর বয়সী ফল বিক্রেতা আহমেদ আল-হারেথ বলেন, গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফল এমনকি কলাও একজন সরকারি কর্মচারির মাসিক বেতনের সমতুল্য দামে বিক্রি হত।
কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা দোকানে অভিযান চালাত। ফলে, সীমিত কালোবাজারি ফলের ব্যবসাকে আরো বাড়িয়ে তুলত।
২৪ বছর বয়সী মেডিকেল ছাত্রী নুর আবেদ আল-জাব্বার বলেন, ‘বাজারের তুলনায় পর্দায় বা টেরিভিশনে গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফল বেশি দেখা যেতো’।
এর একটা সমস্যা হল: কিছু সিরিয়ান যারা আগে কখনও আনারস খাননি, তারা জানে না কীভাবে এটি কাটতে হয়।
জব্বার বলেন, ‘আনারস সবার জন্য এমনকি কিছু লোক যদি খোসা ছাড়াতে নাও জানে।’
তবে, এমন একটি দেশে যেখানে বছরের পর বছর ধরে সংঘাত এবং নিষেধাজ্ঞার কারণে অর্থনীতি বিধ্বস্ত হয়েছে এবং যেখানে ৯০ শতাংশ মানুষ দারিদ্রের মধ্যে বাস করে, সেখানে এখনও অনেক লোক ফল কিনতে লড়াই করছে।
৫০ বছর বয়সী গৃহিণী ইলহাম আমিন বলেন, তিনি লক্ষ্য করেছেন, মুদি দোকানগুলো আরো রঙিন হয়ে উঠছে। যা ‘গ্রাহকদের কিনতে প্রলুব্ধ করে’।
কিন্তু তিনি তার সন্তানদের নতুন ফলের প্রতি আকর্ষণীয় দৃষ্টি আকর্ষণ করা থেকে বিরত রাখেন, কারণ, তিনি তা কিনতে পারেন না। তিনি বলেন ‘জীবনযাত্রার অবস্থা কঠিন এবং আনারস আমাদের মতো পরিবারের জন্য একটি বিলাসিতা’।