শিরোনাম
ঢাকা, ২৮ মে, ২০২৫ (বাসস) : ফ্রান্সের বৃহত্তম শিশু যৌন নির্যাতন মামলাগুলোর মধ্যে একটিতে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে শত শত রোগীর ওপর যৌন নির্যাতনের স্বীকারোক্তি দেয়া একজন সার্জনের বিরুদ্ধে বুধবার মামলার রায় দিবে দেশটির একটি আদালত।
জোয়েল লে স্কোয়ারনেক (৭৪) ২০২০ সালে তার দুই ভাগ্নীসহ চার শিশুকে ধর্ষণ এবং যৌন নির্যাতনের জন্য ১৫ বছরের কারাদণ্ড প্রাপ্ত হওয়ার পর ইতোমধ্যেই কারাগারে রয়েছেন।
ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া এই বিচারে তিনি ১৯৮৯ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে পশ্চিম ফ্রান্সের হাসপাতালে ২৯৯ জন রোগীকে যৌন নির্যাতন বা ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছেন। রোগীদের অনেকেই অ্যানেস্থেসিয়ায় থাকা অবস্থায় বা অস্ত্রোপচারের পরে জেগে ওঠা অবস্থায় ছিলেন। তাদের মধ্যে ২৫৬ জন ১৫ বছরের কম বয়সী।
লে স্কুয়ার্নেকের বিরুদ্ধে ১১১টি ধর্ষণ এবং ১৮৯টি যৌন নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে এবং তিনি ফ্রান্সের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ যৌন নির্যাতনকারী হিসেবে আবির্ভূত হতে চলেছেন।
প্রায় ৬০ জন আইনজীবী ভুক্তভোগীদের পক্ষে আদালতে লড়ছেন।
ভুক্তভোগীদের একজন অ্যামেলি লেভেক এএফপি’কে বলেছেন, ‘আমি আশা করি রায়টি তার ভয়াবহতার সাথে যথোপযুক্ত হবে।’
‘কিন্তু আমি এটা খুব একটা বিশ্বাস করি না।’
ভুক্তভোগী এবং শিশু অধিকার সমর্থকরা বলেছেন, সার্জনের মামলায় পদ্ধতিগত ত্রুটিগুলোকে তুলে ধরে যা লে স্কুয়ার্নেককে বারবার যৌন নির্যাতন চালাতে সাহায্য করেছিল।
শুক্রবার প্রসিকিউটর স্টিফেন কেলেনবার্গার অবসরপ্রাপ্ত সার্জনের জন্য সর্বোচ্চ ২০ বছরের কারাদণ্ডের আবেদন করেছেন এবং একটি বিরল দাবি করেছেন, তাকে মুক্তির পরেও চিকিৎসা ও তত্ত্বাবধানের জন্য একটি কেন্দ্রে রাখা উচিত।
লে স্কুয়ার্নেক সোমবার ব্রিটানির পশ্চিমাঞ্চলের ভ্যানেসে তার সমাপনী বক্তব্যে বলেছেন, ‘আমি আদালতের কাছে অনুকম্পা চাইছি না।
তিনি বলেছেন, ‘আমাকে আরো ভালো মানুষ হওয়ার সুযোগ দিন।’
বিচারক অডে বুরেসির রায় স্থানীয় সময় দুপুর থেকে ঘোষণা করা হবে।
ফ্রান্সের আইনে একাধিক ভুক্তভোগী থাকলেও সাজা একসাথে যোগ করার অনুমতি দেয় না।
আইনজীবীদের একজন ম্যাক্সিম টেসিয়ার আদালতকে মার্চ মাসে লে স্কুয়ারনেকের স্বীকারোক্তির ‘ব্যতিক্রমী’ ধরন বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করেছেন। কারণ তিনি তার বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ স্বীকার করেছিলেন।
অবসরপ্রাপ্ত সার্জন আরো বলেছেন, তিনি তার দুই ভুক্তভোগীর মৃত্যুর জন্য নিজেকে ‘দায়ী বলে মনে করেন। এদের একজন ম্যাথিস ভিনেট, যিনি ২০২১ সালে অতিরিক্ত মদ্যপানে মারা গিয়েছিলেন বলে তার পরিবার আত্মহত্যা বলে অভিহিত করেছে। আরেকজন ব্যক্তি যাকে ২০২০ সালে মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল।
লে স্কুয়ারনেক তার অপরাধ নথিভুক্ত করেছেন। তার ভুক্তভোগীদের নাম, বয়স, ঠিকানা এবং নির্যাতনের ধরন উল্লেখ করেছেন।
তার নোটে, সার্জন নিজেকে একজন ‘বড় ধরনের বিকৃত মানসিকতার’ এবং ‘শিশু বলাৎকারী’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
তিনি রেকর্ড করেছেন, ‘এবং আমি এতে খুবই খুশি।’
লে স্কুয়ারনেক তার ভুক্তভোগীদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন, তবে তাদের অনেকেই তার ক্ষমা চাওয়ার আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। যা তিনি বিচারের কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রায় যান্ত্রিকভাবে পুনরাবৃত্তি করেছিলেন। আবার কখনো কখনো কথায় কথায়।
ভুক্তভোগীদের প্রতিনিধিত্বকারী আইনজীবী থমাস ডেলাবি ‘শিশুদের প্রতি যৌন নির্যাতনকে পারমাণবিক বোমা’ হিসাবে বর্ণনা করে লে স্কুয়ারনেককে উদ্দেশ্যে করে বলেছেন, ‘তুমিই সবচেয়ে খারাপ গণ শিশু নির্যাতনকারী’।
ডেলাবি আসামীকে বলেছেন, ভুক্তভোগীরা ‘তোমাকে কখনো ক্ষমা করবে না। কখনো না।’
আরেক আইনজীবী ডেলফাইন ক্যারো বলেছেন, ‘তুমি কি বোঝানোর চেষ্টা করছো যে তুমি বদলে গেছো?’
তৃতীয় আইনজীবী জিওভান্নি বার্থো-ব্রায়ানড ক্যারোর সাথে সূর মিলিয়ে বলেছেন, ‘সবকিছু স্বীকার করা মানে কিছুই স্বীকার করা নয়।’
২০০৫ সালে শিশু এবং সহকর্মীদের যৌন নির্যাতনের ছবি রাখার জন্য তারা উদ্বেগ প্রকাশ করলে লে’কে সাজা দেওয়া সত্ত্বেও, সার্জন ২০১৭ সালে অবসর গ্রহণের আগ পর্যন্ত কয়েক দশক ধরে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যান।
পাবলিক প্রসিকিউটর তার সমাপনী বক্তৃতায় বলেছেন, ভবিষ্যতে লে স্কুয়ার্নেকের বিরুদ্ধে আবারো বিচার শুরু হতে পারে।
লরিয়েন্ট পাবলিক প্রসিকিউটরের অফিস অবসরপ্রাপ্ত ডাক্তারের মামলার সাথে সম্পর্কিত দুটি তদন্ত শুরু করেছে, যার মধ্যে একটি যৌন নিপীড়ন এবং ধর্ষণের ‘সম্ভবত অজ্ঞাত বা নতুন রিপোর্ট করা ভুক্তভোগীদের’ সাথে সম্পর্কিত।
ফ্রান্সে বিচারের আশানুরূপ প্রভাব না পড়ায় অনেকেই হতাশা প্রকাশ করেছেন।
আদালত ডমিনিক পেলিকটের মামলাটি মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারেনি, যিনি গত বছর তার প্রাক্তন স্ত্রী জিসেলকে ধর্ষণ করার জন্য কয়েক ডজন অপরিচিত ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়ার দায়ে জেলে ছিলেন।