শিরোনাম
ঢাকা, ১২, মে ২০২৫ (বাসস) : ওমানে রোববার ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক আলোচনা শেষ হয়েছে—যেখানে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধিকরণ নিয়ে প্রকাশ্য অচলাবস্থায় কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলেও উভয় পক্ষই ভবিষ্যতে আরও আলোচনার ঘোষণা দিয়েছে।
মাসকাট থেকে এএফপি জানায়, প্রায় এক মাস আগে শুরু হওয়া এ আলোচনার এটি ছিল চতুর্থ রাউন্ড, যা ২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় যুক্তরাষ্ট্র ঐতিহাসিক চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার পর দুই দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ের সংলাপ হিসেবে বিবেচিত।
আগের তিন দফায় অগ্রগতির কথা জানিয়েছিল উভয় পক্ষ। রোববার ইরান বলেছে, আলোচনাটি ছিল ‘কঠিন কিন্তু ফলপ্রসূ’। অন্যদিকে একজন জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ওয়াশিংটন ‘আজকের ফলাফলে উৎসাহিত’।
এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া পোস্টে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাঈল বাকায়ি বলেন, আলোচনাটি একে অপরের অবস্থান বোঝার ও বাস্তবসম্মত সমাধান খোঁজার জন্য সহায়ক হয়েছে।
বাকায়ি আরও বলেন, আলোচকরা যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি তোলেন।
মার্কিন ওই কর্মকর্তা (নাম প্রকাশ না করার শর্তে) বলেন, 'আজকের আলোচনার ফলে আমরা উৎসাহ পেয়েছি এবং শিগগিরই পরবর্তী বৈঠকের অপেক্ষায় রয়েছি,' যদিও সুনির্দিষ্ট সময় জানানো হয়নি।
ওমান জানিয়েছে, পরবর্তী দফা বৈঠক দুই পক্ষ নিজ নিজ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করে সমন্বয় করে ঘোষণা দেবে।
মার্কিন কর্মকর্তার মতে, রোববারের বৈঠক ছিল সরাসরি ও পরোক্ষ উভয় ধরনের, যা তিন ঘণ্টারও বেশি স্থায়ী হয়। তিনি বলেন, 'চলমান কারিগরি বিষয়গুলো নিয়ে কাজ চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সম্মত হওয়া গেছে।'
ইরান বলছে, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধিকরণের অধিকার ‘অপরিবর্তনীয়’। অন্যদিকে ওয়াশিংটনের প্রধান আলোচক স্টিভ উইটকফ একে যুক্তরাষ্ট্রের ‘রেড লাইন’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
আলোচনার পর ইরানের প্রধান আলোচক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি বলেন, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধিকরণ চালু থাকবে এবং এ বিষয়ে কোনো আপোসের সুযোগ নেই। তবে তিনি ইরানি টেলিভিশনে বলেন, 'বিশ্বাস গড়ার লক্ষ্যে সমৃদ্ধিকরণের হার কমানো নিয়ে আমরা নমনীয়তা দেখাতে পারি।'
‘চাপ’
এই আলোচনার মধ্যেই অঞ্চলজুড়ে কূটনৈতিক তৎপরতা চলছে। আগামী সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার প্রথম বিদেশ সফরে উপসাগরীয় দেশগুলোতে যাবেন, আর আরাকচি এর আগেই সৌদি আরব ও কাতার সফর শেষ করেছেন।
ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আল-বুসাঈদি বলেন, আলোচনায় ‘মূল্যবান ও মৌলিক ধারণা’ উঠে এসেছে যা ‘একটি সম্মানজনক সমঝোতায় পৌঁছানোর অভিন্ন আকাঙ্ক্ষা’র প্রতিফলন ঘটায়।
মাসকাট পলিসি কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ইউসুফ আল-বুলুশি বলেন, 'ব্রেকথ্রু হতে কিছুটা সময় লাগবে, তবে আমি আশাবাদী।'
তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, অতীতের আলোচনাগুলোতে উভয় পক্ষ প্রকাশ্য বিবৃতি পরিষ্কার করতে গিয়েই অনেক সময় নষ্ট করেছে—যা আলোচনার পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
তিনি বলেন, 'প্রকাশ্য চাপ একটি কৌশল হতে পারে, তবে এটি টেবিলের পরিবেশে প্রভাব ফেলছে।'
যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরেই ইরানের বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের চেষ্টা চালানোর অভিযোগ করে আসছে। তবে ইরান বলছে, তাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে।
ইরান বর্তমানে ৬০ শতাংশ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে—২০১৫ সালের চুক্তির ৩.৬৭ শতাংশ সীমা অনেক পেরিয়ে গেছে, তবে এখনো ৯০ শতাংশ অস্ত্র-গ্রেড মাত্রার নিচে রয়েছে।
উইটকফ এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, 'ইরানের সমৃদ্ধিকরণ কেন্দ্রগুলো ধ্বংস করতে হবে।' যদিও প্রথমে তিনি বেসামরিক কাজে কমমাত্রার সমৃদ্ধিকরণের ক্ষেত্রে নমনীয়তার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
‘বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক অস্ত্র’
২০১৫ সালের চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরে যাওয়ার পরও ইরান এক বছর চুক্তি মেনে চলেছিল। এরপর ধীরে ধীরে তারা চুক্তি থেকে সরে আসে।
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফিরে ট্রাম্প আবার ‘সর্বোচ্চ চাপের’ নীতি গ্রহণ করেন, যদিও কূটনৈতিক আলোচনার সুযোগ রাখছেন। তবে ব্যর্থ হলে সামরিক পদক্ষেপের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন।
ইরানের ইউরেনিয়াম মজুদ ও সমৃদ্ধিকরণের গতি নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ইউরোপীয় দেশগুলো চুক্তির ‘স্ন্যাপব্যাক’ প্রক্রিয়া চালু করে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করার বিষয়টি বিবেচনা করছে। এ প্রক্রিয়ার মেয়াদ অক্টোবরে শেষ হবে।
ফরাসি সাপ্তাহিক লা পয়েন্ট-এ প্রকাশিত এক নিবন্ধে আরাকচি বলেন, 'সংঘাতের কৌশল থেকে বিরত থাকতে হবে।'
তেহরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এই আলোচনার বিরোধিতা করে ইসরাইল বলছে, ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করতে দেওয়া যাবে না।
ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদেওন সার বলেন, 'ইরান বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক রাষ্ট্র... এই শাসনব্যবস্থার হাতে বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক অস্ত্র দেওয়া যাবে না।'
উল্লেখ্য, ইসরাইলই মধ্যপ্রাচ্যে একমাত্র (যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত নয়) পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র।