বাসস
  ১২ মে ২০২৫, ০৯:৪২

কাশ্মীর সীমান্তে আতঙ্ক কাটেনি

ঢাকা, ১২ মে, ২০২৫ (বাসস) : কাশ্মীরের পাকিস্তান ও ভারত নিয়ন্ত্রিত সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে রোববার দিনভর কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও স্থানীয় বাসিন্দারা যুদ্ধের আশঙ্কা মাথায় রেখে এখনও বাঙ্কারে খাদ্য ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র মজুত রাখছেন।

পাকিস্তানের চাকোঠি থেকে এএফপি জানায়, টানা চারদিনের ভয়াবহ সংঘর্ষে ৬০ জনের বেশি মানুষ নিহত হওয়ার পর শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসে। তবু ভীতিকর বাস্তবতায় কাশ্মীরের পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত চাকোঠির মতো এলাকাগুলোতে অনেকেই বাড়িতে ফিরলেও আতঙ্ক কাটেনি।

স্থানীয় বাসিন্দা কালা খান বলেন, ‘ভারতের ওপর আমার বিন্দুমাত্র বিশ্বাস নেই। আমি নিশ্চিত, ওরা আবার হামলা চালাবে। এই অঞ্চলের মানুষদের জন্য বাঙ্কার বানানো একান্ত জরুরি।’ তার আট সদস্যের পরিবার বিগত কয়েক রাত কাটিয়েছে ২০ ইঞ্চি পুরু কংক্রিটের ছাদযুক্ত বাঙ্কারে।

‘চালের বস্তা, ময়দা, খাট-পত্র, এমনকি কিছু মূল্যবান জিনিসও আমরা ওখানে রেখে দিয়েছি,’ বলেন তিনি।

এলাকার একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর এক হাজারের বেশি বাঙ্কার তৈরি হয়েছে, যার এক-তৃতীয়াংশ তৈরি করেছে সরকার।

‘যুদ্ধবিরতি মানেই শান্তি নয়’

চাকোঠির বাসিন্দা ৫৩ বছর বয়সী সরকারি কর্মচারী মোহাম্মদ মুনির বলেন, ‘আমি ৫০ বছর ধরে এখানে বাস করছি। 

যুদ্ধবিরতি বারবার আসে, কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যেই আবার গুলি বর্ষণ শুরু হয়।’

তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি কষ্টে পড়ে দরিদ্র মানুষ, যারা নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ছুটে বেড়ায়।’

২৫ বছর বয়সী নির্মাণশ্রমিক কাশিফ মিনহাস বলেন, সাম্প্রতিক সংঘর্ষে তার স্ত্রী-সন্তানদের সরিয়ে নিতে কয়েক কিলোমিটার হেঁটে যানবাহন খুঁজতে হয়েছে।

‘এই যুদ্ধবিরতি নিছক আনুষ্ঠানিকতা বলেই মনে করি। আবারও গুলি ছুডলে পরিবার নিয়ে ফের চলে যেতে হবে।’

মুজাফফরাবাদে নিয়োজিত এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, রোববার সকাল থেকে নতুন কোনো গুলি বিনিময়ের খবর পাওয়া যায়নি।

‘মূল সমস্যার সমাধান হয়নি’

কাশ্মীরকে কেন্দ্র করেই বারবার পাকিস্তান-ভারতের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ে। দিল্লি অভিযোগ করে, পাকিস্তানপন্থি গোষ্ঠীগুলো ভারতীয় কাশ্মীরে স্বাধীনতা বা পাকিস্তানে যুক্ত হওয়ার জন্য লড়াই চালাচ্ছে।

এপ্রিল মাসে ভারতীয় পর্যটকদের ওপর হামলার পর থেকেই এই উত্তেজনা শুরু হয়। ইসলামাবাদ অবশ্য এতে সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।

ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরেও এদিন লোকজন সাবধানে ঘরে ফিরতে শুরু করেছে। আগের চারদিনে পাকিস্তানের গোলাবর্ষণে সেখানে বহু মানুষ প্রাণ হারায়।

চাকোঠির ট্যাক্সিচালক মোহাম্মদ আখলাক বলেন, ‘যুদ্ধবিরতি মানেই যে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি, এমন নয়। কারণ কাশ্মীর প্রশ্নে দ্বন্দ্ব থেকেই যাচ্ছে।’