বাসস
  ১০ মে ২০২৫, ১৬:১৫
আপডেট : ১০ মে ২০২৫, ১৯:৪৬

ইউক্রেনের প্রতি সংহতি জানাতে যৌথ সফরে কিয়েভ যাচ্ছেন ইউরোপীয় নেতারা

ঢাকা, ১০ মে, ২০২৫ (বাসস) : ফ্রান্স, ব্রিটেন, জার্মানি ও পোল্যান্ডের নেতারা শনিবার এক যৌথ সফরে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনার জন্য ইউক্রেনে যাচ্ছেন। সফরের আগে তারা একটি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত না হওয়া পর্যন্ত রাশিয়ার ওপর চাপ আরও বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন।

প্যারিস থেকে এএফপি জানায়, এই প্রথমবারের মতো চার ইউরোপীয় দেশের নেতারা একসঙ্গে ইউক্রেন সফর করছেন। সফরকারী নেতারা হলেন—ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ, জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মের্ৎস, পোলিশ প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার।

রাশিয়ার আগ্রাসনের তিন বছরের বেশি সময় পর এই সফর ইউরোপীয় ঐক্যের এক শক্ত প্রতীক হিসেবে দেখা হচ্ছে। সফরের আগের দিনই মস্কোতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিজয়ের ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সামরিক কুচকাওয়াজে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যুদ্ধপন্থী বক্তব্য দিয়েছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এরই মধ্যে ৩০ দিনের এক নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে পুতিন এখনও সে প্রস্তাবে সাড়া দেননি।

ইউরোপীয় নেতারা এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, 'মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথভাবে আমরা রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, যেন তারা একটি পূর্ণ ও নিঃশর্ত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। এটি ন্যায়সঙ্গত ও স্থায়ী শান্তি আলোচনার পথ সুগম করতে পারে।'

তারা আরও বলেন, 'আমরা যুদ্ধবিরতির কারিগরি বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা এবং একটি পূর্ণাঙ্গ শান্তিচুক্তির প্রস্তুতি নিতে আগ্রহী। আমরা স্পষ্ট করে বলছি—রক্তপাত থামাতে হবে, রাশিয়াকে অবৈধ আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে এবং ইউক্রেনকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক স্বীকৃত সীমানার মধ্যে একটি নিরাপদ, স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে টিকে থাকতে দিতে হবে।'

তারা হুঁশিয়ারি দেন, 'যতক্ষণ না রাশিয়া স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে রাজি হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা আমাদের চাপ আরও বাড়াব।'

'রাশিয়া বাধা দিচ্ছে'

সম্প্রতি দায়িত্ব নেওয়া চ্যান্সেলর মের্ৎসের এটি হবে প্রথম ইউক্রেন সফর। মাখোঁ সর্বশেষ ২০২২ সালের জুনে ইউক্রেন গিয়েছিলেন, সে সময় তার সঙ্গে ইতালির ও তৎকালীন জার্মান নেতাও ছিলেন।

জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনায় নেতারা ইউক্রেনের প্রতি ‘অটল প্রতিশ্রুতি’ পুনর্ব্যক্ত করবেন বলে জানানো হয়েছে বিবৃতিতে।

বিবৃতিতে বলা হয়, 'আমরা—ফ্রান্স, জার্মানি, পোল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যের নেতারা—রাশিয়ার বর্বর ও অবৈধ পূর্ণমাত্রার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতি সংহতি জানাতে কিয়েভে একত্রিত হচ্ছি।'

তারা বলেন, 'আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শান্তিচুক্তির আহ্বানকে সমর্থন করি এবং রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানাই যেন তারা স্থায়ী শান্তির প্রচেষ্টায় বাধা না দেয়।'

জেলেনস্কির সঙ্গে সকালে সাক্ষাতের পর তারা ইউরোপীয় অন্য নেতাদের সঙ্গে একটি ভার্চুয়াল বৈঠক করবেন। সেখানে যুদ্ধ-পরবর্তী ইউক্রেনকে নিরাপত্তা দিতে একটি ইউরোপীয় বাহিনী গঠনের আলোচনা হবে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, 'এই বাহিনী শান্তিচুক্তির পর ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীকে পুনর্গঠন করতে সহায়তা করবে এবং ভবিষ্যতের শান্তিতে আস্থা জোগাবে।'

'প্রতীকী গুরুত্ব'

ফ্রান্সে টাস্কের সঙ্গে এক বৈঠকের পর মাখোঁ বলেন, ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির জন্য একটি মার্কিন-ইউরোপ পরিকল্পনা দ্রুত প্রণয়ন করা দরকার। যদি কোনো পক্ষ তা লঙ্ঘন করে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ‘ব্যাপক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা’ আরোপ করা হবে।

ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাব নরওয়েতে ইউক্রেন বিষয়ক এক বৈঠকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র দুটি নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজ প্রস্তুত রেখেছে’ এবং সেগুলোর আওতায় ব্যাংকিং ও জ্বালানি খাতকে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।

মাখোঁ বলেন, পুতিনের ‘যুদ্ধোন্মাদ’ মন্তব্য প্রমাণ করে তিনি এখনো যুদ্ধের পক্ষেই রয়েছেন। তবে যুদ্ধবিরতি শুরু হলে ভূখণ্ড নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।

রাশিয়া এখনও ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করছে এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বানে এখনো সাড়া দেয়নি। ট্রাম্প যদিও বলেছেন, ইউক্রেনকে কিছু ভূখণ্ড ছাড় দিতে হতে পারে, তবে তিনি রাশিয়ার যুদ্ধ বন্ধে অনিচ্ছার প্রতি বিরক্তিও প্রকাশ করেছেন।

এই সফরের সময়কালও তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ মাত্র একদিন আগে পুতিন মস্কোর সামরিক কুচকাওয়াজে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও ইইউ সদস্য রাষ্ট্র স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিৎসোকে স্বাগত জানান।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের এক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তা বলেন, 'মের্ৎস দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র চার দিনের মাথায় এই সফর ইউরোপের ঐক্য, শক্তি ও সংবেদনশীলতার প্রতীক। এটি পুতিনের উদযাপনের এক প্রতিচ্ছবি।'

তবে, স্লোভাক প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার মস্কোর সামরিক কুচকাওয়াজে অংশ নেওয়ার মধ্য দিয়ে ইউরোপের মধ্যে বিভাজনও স্পষ্ট হয়েছে। এদিকে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ইউক্রেন ও হাঙ্গেরি একে অপরের দুই কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে।