বাসস
  ১০ মে ২০২৫, ১৫:৪১

যুক্তরাষ্ট্র ও সুইজারল্যান্ড শুল্ক আলোচনা দ্রুততর করতে সম্মত

ঢাকা, ১০ মে, ২০২৫ (বাসস) : যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পিত অতিরিক্ত শুল্ক এড়াতে একটি চুক্তির লক্ষ্যে আলোচনার গতি বাড়াতে সম্মত হয়েছে সুইজারল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্র—শুক্রবার শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর একথা জানান সুইস প্রেসিডেন্ট।

জেনেভা থেকে এএফপি জানায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে ২ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া বৈশ্বিক শুল্ক অভিযানের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র সুইস রপ্তানির ওপর ৩১ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছে।

এ ধরনের পদক্ষেপ সুইজারল্যান্ডের শিল্প ও ঘড়ি নির্মাণসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ খাতের জন্য ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনবে।

তবে আপাতত যুক্তরাষ্ট্র সুইজারল্যান্ডসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশের পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করছে।

এই সপ্তাহান্তে বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ প্রশমনের চেষ্টায় মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট এবং চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী হে লিফেং জেনেভায় বৈঠক করছেন।

এই সুযোগে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নিয়ে আলোচনায় বসেন সুইস কর্মকর্তারাও।

সুইস প্রেসিডেন্ট ও অর্থমন্ত্রী কারিন কেলার-সুটার এবং অর্থনীতি মন্ত্রী গাই পারমেলিন বৈঠক করেন বেসেন্ট ও মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ারের সঙ্গে।

গ্রিয়ারের কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানায়, 'উভয় পক্ষ পারস্পরিক বাণিজ্য বিষয়ে আলোচনা দ্রুততর করতে সম্মত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এই আলোচনায় সুইজারল্যান্ডের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে স্বাগত জানায়।' আগামী সপ্তাহগুলোতে আরও আলোচনা হবে বলেও জানানো হয়।

বৈঠকের পর কেলার-সুটার বলেন, 'আমরা আশা করি যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সমভাবে বিবেচনা করবে।'

'আমরা চাই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার গতি আরও বাড়ুক, যাতে খুব দ্রুত একটি সমাধানে পৌঁছতে পারি। এটি উভয় দেশের স্বার্থেই,' বলেন তিনি।

'দ্রুত বিবেচনায়' 

এই আলোচনা এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন ব্রিটেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে, যার ফলে নতুন শুল্কের সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব থেকে তারা রক্ষা পেয়েছে।

কেলার-সুটার জানান, যুক্তরাষ্ট্রে সরাসরি  বিনিয়োগকারী দেশ হিসেবে সুইজারল্যান্ড গুরুত্বপূর্ণ; গবেষণা ও উন্নয়নে প্রথম এবং উৎপাদন খাতে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে দেশটি।

তিনি বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র খুব স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, তারা আমাদের সঙ্গে আলোচনা দ্রুত শেষ করতে চায়।'

ব্রিটেনের সঙ্গে চুক্তির পর যুক্তরাষ্ট্র জানায়, 'আমরা দ্বিতীয় অবস্থানে থাকব কিনা তা নিশ্চয়তা না দিলেও আমাদের দ্রুত বিবেচনায় রাখা হবে'—বলেছেন কেলার-সুটার।

তিনি জানান, ব্রিটেনের মতো একটি চুক্তির লক্ষ্যে একটি ‘লেটার অব ইনটেন্ট’ বা অভিপত্র জমা দেওয়া হবে। 'আমাদের লক্ষ্য শুল্ক পুনরায় শূন্যে নামিয়ে আনা,' বলেন তিনি।

 নেসপ্রেসো ও ওষুধ খাত 

যুক্তরাষ্ট্রে সুইজারল্যান্ডের রপ্তানি আমদানির চেয়ে বেশি।

২০২৪ সালে সুইজারল্যান্ড থেকে যুক্তরাষ্ট্রে মোট রপ্তানি দাঁড়ায় আনুমানিক ৫২.৬৫ বিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ (৬৩.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)। সুইজারল্যান্ডের ফেডারেল কাস্টমস ও সীমান্ত নিরাপত্তা দপ্তর এই হিসাব দিয়েছে।

সর্ববৃহৎ রপ্তানি পণ্য ছিল ওষুধ, আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর যুক্তরাষ্ট্র সুইজারল্যান্ডের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে সুইজারল্যান্ডে আমদানির পরিমাণ ছিল ১৪.১৩ বিলিয়ন ফ্রাঁ।

তবে যুক্তরাষ্ট্রকে সম্পূর্ণ নমনীয় করে তোলা বার্নের জন্য সহজ নাও হতে পারে।

মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লাটনিক বৃহস্পতিবার বলেন, যে সব বাণিজ্য অংশীদারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে, তাদের ওপর ১০ শতাংশের বেশি শুল্ক আরোপ করা হতে পারে।

ট্রাম্প শুল্কের ফলে সুইজারল্যান্ডে কী ধরনের প্রভাব পড়বে তা এখনও নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন।

সুইস খাদ্য প্রতিষ্ঠান নেসলে তাদের ত্রৈমাসিক বিক্রির তথ্য জানিয়ে বলেছে, সুইস উৎপাদিত নেসপ্রেসো কফি ক্যাপসুল এই শুল্কের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

অবশ্য এপ্রিলের শুরুতে ঘোষিত শুল্কের তালিকায় ওষুধ অন্তর্ভুক্ত ছিল না, যদিও পরে ট্রাম্প প্রশাসন এই বিষয়ে দ্ব্যর্থ বক্তব্য দিয়েছে।

এই অনিশ্চয়তার মধ্যে দুই সুইস ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা নিজ উদ্যোগে পদক্ষেপ নিয়েছে।

নোভার্টিস জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রে পাঁচ বছরে ২৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। আর রোশ পাঁচ বছরে ৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা ঘোষণা দিয়েছে।